ঢাকা     সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

বৃষ্টির পানি কাঁচা মাছ খেয়ে মহাসাগরে ২ মাসের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা  

জাহিদ সাদেক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ১৯ জুলাই ২০২৩   আপডেট: ১৩:৪৯, ১৯ জুলাই ২০২৩
বৃষ্টির পানি কাঁচা মাছ খেয়ে মহাসাগরে ২ মাসের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা  

হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা ‘কাস্ট অ্যাওয়ে’। সিনেমায় দেখানো হয় বৃষ্টির পানি ও কাঁচা মাছ খেয়ে দুই মাস প্রশান্ত মহাসাগরে বেঁচে ছিলেন একজন নাবিক। সে রকমই একটি ঘটনা ঘটেছে প্রশান্ত মহাসাগরে। একজন অস্ট্রেলিয়ানকে প্রায় ২ মাস পর প্রশান্ত মহাসাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সেই সিনেমার মতো তার হাতে ভলিবলের পরিবর্তে সঙ্গী ছিল একটি কুকুর।  

নিউইয়র্ক পোস্ট-এর খবরে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বাসিন্দা টিম শ্যাডক। ৫১ বছর বয়সী টিম ক্যানসার থেকে বেঁচে গিয়েছেন। তিনি প্রিয় কুকুর পোচ বেলাকে নিয়ে মেক্সিকো থেকে ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া যাচ্ছিলেন। তাদের যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের এপ্রিলে। কিন্তু যাত্রার বেশ কয়েক সপ্তাহ পর ঝড়ে তাদের ছোট জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর সাগরে ভাসতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে ফুরিয়ে যায় সমস্ত খাবার।   

বাধ্য হয়েই কুকুরকে নিয়ে বৃষ্টির পানি এবং কাঁচা মাছ খেয়ে জীবন বাঁচাতে হয়েছে টিম শ্যাডকে। এই ভয়াবহ বিপদে তিনি প্রশান্ত মহাসাগরে একটি অলৌকিক ঘটনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। উদ্ধারের দিন সকালে একটি টুনা মাছ ধরার ট্রলারের নজরে আসেন তিনি। উদ্ধারের পর শ্যাডককে দাড়িওয়ালা এবং ক্ষতবিক্ষত দেখাচ্ছিল। যেন সেই ‘কাস্ট অ্যাওয়ে’তে টম হ্যাঙ্কসের চরিত্র- চক নোল্যান্ড।  

সিনেমাতে দেখা যায়, চক নোল্যান্ড ফেডএক্স কর্মী। যিনি একটি বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যান। তিনি একটি অস্থায়ী ভেলায় থাকার সময় একটি জাহাজ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। নোল্যান্ডের একমাত্র সঙ্গী ছিল উইলসন কোম্পানির একটি ভলিবল। অপর দিকে শ্যাডক অবসরপ্রাপ্ত আইটি কর্মী। 

উদ্ধারকারী দল প্রথমে টিম শ্যাডককে উদ্ধার করে জানতে চায়- আপনার নাম কী? উত্তরে শ্যাডক তার নাম এবং কোথা থেকে এসেছেন বলেন। উদ্ধারকারী দলের দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল- আপনি কত দিন এভাবে  মহাসাগরে আছেন এবং কীভাবে বেঁচে আছেন? উত্তরে শ্যাডক বলেন, আমি সমুদ্রে খুব কঠিন অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছি। আমার শুধু বিশ্রাম এবং ভালো খাবার দরকার। কারণ আমি দীর্ঘ সময় সমুদ্রে বৃষ্টির পানি আর কাঁচা মাছ খেয়ে একা কোনো রকম বেঁচে আছি।

এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ মাইক টিপটন বলেন, শ্যাডকের ধৈর্য, ভাগ্য এবং দক্ষতার সংমিশ্রণে তিনি বেঁচে ছিলেন। তা না হলে এত দিনে তার সলিল সমাধি হয়ে যেতো। তিনি আরো বলেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনেরও টিমের মতো কিছু ব্যাপার মনে রাখতে হবে। টিমের মতো দিনের উত্তাপের সময় নিজেকে রক্ষা করতে হবে। কারণ আপনি যখন ডিহাইড্রেটেড হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন তখন আপনি শেষ যে জিনিসটি চান তা হলো ঘাম না-হওয়া। 

টিপটন আরো বলেন, যে জলবায়ু এবং অবস্থানের কারণে টিম শ্যাডক নিজের জন্য তাজা মাছ ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছিল। আপনি যদি সমুদ্রে বেঁচে থাকার ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকান, তবে যারাই বেঁচে থেকে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তারা উষ্ণ পরিবেশে ছিলেন। কারণ এটি যদি ঠান্ডা পরিবেশ হয় তবে আপনি বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারবেন না। এই বিশেষজ্ঞ টিমের উদ্ধারকে ‘খড়ের গাদায় সুঁই’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কেননা মানুষকে বুঝতে হবে নৌকাটি কতটা ছোট এবং প্রশান্ত মহাসাগর কত বিশাল। কাউকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। টিপটন আরো বলেন, টিমের সাথে প্রিয় কুকুর বেলা থাকায় টিমের জন্য নির্জীব বস্তুর বিপরীতে একটি প্রাণের অস্তিত্ব তাকে বিশেষভাবে বেঁচে থাকার প্রেরণা দিয়েছে। আপনি যত দিন বেঁচে আছেন, এ ধরনের অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে এবং হাল ছেড়ে না দেওয়ার জন্য আপনাকে খুব ইতিবাচক মানসিক মনোভাব থাকতে হবে- পরামর্শ টিপটনের। তিনি আরো বলেন, শুধু কল্পনা করুন যে, রাতের বেলা সেখানে এটি কতটা অন্ধকার এবং একাকী বোধ করবেন।  এ ছাড়াও একটি পরিকল্পনা থাকা, জল এবং খাবার এবং সময়মতো নিজেকে বিশ্রাম দেয়া, সত্যিই দীর্ঘ বেঁচে থাকার পথে রহস্য। 

টিমের বন্ধুরা টেলিগ্রাফকে জানিয়েছেন, টিম অবসর নেওয়ার আগে আইটি কোম্পানিতে কাজ করেছেন এবং সব সময় নতুন চ্যালেঞ্জের সন্ধান করতেন। তার কাছে কিছু টাকা ছিল, তাই সে বিরক্ত হয়ে নতুন কিছু করতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়া প্রায় ২০ বছর আগে টিম উপোষ থাকার পর কাঁচা খাবার খাওয়ার পরে অন্ত্রের ক্যানসার থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। 

একজন চিকিৎসক টিম শ্যাডকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বলেন, টিমকে এখন সমুদ্রের পরিবেশ থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক খাদ্যাভাসে ফিরে আসতে হবে। তবে এটি স্বাভাবিকের চেয়ে ধীরগতিতে করতে হবে এবং সম্ভবত তাকে কয়েক মাস ধরে নজরে রাখতে হবে।

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়