ঢাকা     শনিবার   ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফুলবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী খেলা হুমগুটি

রতন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১১, ১২ জানুয়ারি ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফুলবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী খেলা হুমগুটি

হুমগুটি মাথায় নিয়ে মাঠে যাচ্ছেন খোলোয়াড়রা

মাহবুবুল আলম রতন
মুক্তাগাছা, ১২ জানুয়ারি : শতবর্ষীয় ঐতিহ্যবাহী খেলা হুমগুটি। প্রতিবছর ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া অঞ্চলে বিদায়ী পৌষের শেষ বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় এ খেলা হয়।

খেলা দেখতে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের বড়ইআঠা নতুন সড়ক ব্রিজ এলাকায়। সবার লক্ষ্য হুমগুটি খেলায় অংশ নেওয়া। বিকেল চারটা থেকে শুরু হয় এ খেলা। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। খেলা উপলক্ষে এলাকায় বেড়ে যায় চাঞ্চল্য। তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।

শতাধিক বছরের প্রাচীন এ খেলাটি প্রবর্তন করেন মুক্তাগাছার তৎকালীন ষোলো হিস্যার জমিদার। হোমজিক্যালি কাড়াকাড়ি করে নিজের আয়ত্তে একটি গুটি নেওয়া হয় বলেই এই খেলার নাম ‘হুমজিক্যালি গুটি’ বা ‘হুমগুটি’। জমিদারদের শোষণ-নির্যাতন থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে রাখতে এই খেলার প্রচলন করা হয় বলে অনেকে মত পোষণ করেন। আবার কারো কারো মতে, জমি নিয়ে জমিদারদের মধ্যে বিরোধ হলে শক্তি পরীক্ষার জন্য হুমগুটি খেলার প্রবর্তন করা হয়।

হুমগুটি তৈরি করা হয় পিতলের কলসের গলা কেটে তার ভেতর বালি ভরে মুখ ঝালাই করে। ফুটবলের তিন গুণ আকৃতির গুটিটির ওজন আধ মণ। খেলায় পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ- এই চারটি দল থাকে। বিজয়ী দল এক বছর হুমগুটি সাজিয়ে রাখতে পারে তার বাড়িতে। পরের বছর খেলা শুরুর পাঁচ-সাত দিন আগে তারা কমিটির কাছে তা ফিরিয়ে দেয়।

বড় আয়োজনের এ খেলার পাশাপাশি ছোট পরিবারেও গ্রামগঞ্জে এ খেলা হয়ে থাকে। এখানকার হুমগুটিটি অন্য রকম। ডাব, নারকেল, কলাগাছের মোথা দিয়ে হুমগুটি বানানো হয়।

ফুলবাড়িয়া বালাশ্বর গ্রামের কোরবান আলী (৭৫) প্রায় ৫০ বারের মতো হুমগুটি খেলায় অংশ নিয়েছেন। মো. জমির উদ্দিন (৫২) খেলেছেন ২৮ থেকে ৩০ বার। কোনোদিন খেলা নিয়ে মারামারি, ঝগড়াঝাঁটি হতে দেখেননি তারা। জমির উদ্দিন বলেন, ‘মজার খেলা। আমগর আমুদ লাগে। যে আমুদ ঈদেও পাই না।’

ফুলবাড়িয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক রুহুল আমীন খোকন বলেন, ‘হুমগুটি খেলা একটি ফোক ফ্যান্টাসি। শতবর্ষীয় নির্মল বিনোদন। যা কোনো রকম অঘটন, অশ্লীলতা ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়।’
 

 

 

এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফসলের পতিত জমিতে হুমগুটি খেলার জন্য কৃষকের বোরো আবাদ বন্ধ থাকে। খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ আবাদ করেন না। ১৩ জানুয়ারি (৩০ পৌষ) বিকেলে শুরু হয় হুমগুটি খেলা। এ খেলাকে কেন্দ্র করে ফুলবাড়িয়ার গ্রামে গ্রামে চলে উৎসবের আমেজ।

এ সময় গ্রামে নাইয়র আসা বেড়ে যায় ব্যাপক হারে। পিঠা-পায়েসের গন্ধে ম-ম করে পুরো এলাকা। প্রতি গ্রামের মোড়ে মোড়ে জবাই করা হয় গরু-খাসি। নতুন জামাইদের জন্য এ সময়টি থাকে ভিন্ন আমেজে ভরা।  



রাইজিংবিডি / রতন / ক.কর্মকার

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়