ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শচীন দেববর্মনের ৪৬তম প্রয়াণ দিবস

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০০, ৩১ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১১:০১, ৩১ অক্টোবর ২০২০
শচীন দেববর্মনের ৪৬তম প্রয়াণ দিবস

বাংলা সংগীতে এক বিশাল অংশ জুড়ে আছেন শচীন দেববর্মন। কিংবদন্তিতুল্য বাংলা গানের এই শিল্পী এস ডি বর্মন হিসেবেও বিশেষ পরিচিত। উপমহাদেশের জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পীর ৪৬তম প্রয়াণ দিবস আজ।

১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি প্যারালিটিক স্ট্রোকের কারণে ৫ মাস কোমায় ছিলেন। 

অর্ধশতাব্দী কালেরও বেশি সময় ধরে বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে তার কালোত্তীর্ণ গানের আবেদন কিছুমাত্র কমে যায়নি।  ‘নিশিথে যাইয়ো ফুলবনে’, ‘শোন গো দখিন হাওয়া’, ‘কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া’, ‘তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল’, ‘তুমি এসেছিলে পরশু কাল কেন আসোনি’, ‘বাঁশি শুনে আর কাজ নাই’, ‘ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা পান খাইয়া যাও’, ‘নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক’, ‘তুমি যে গিয়াছ বকুল-বিছানো পথে’, ‘রঙিলা রঙিলা রঙিলা রে রঙিলা’- এসব গান শচীন দেববর্মনকে বারবার মনে করিয়ে দেয় আমাদের। 

শচীন দেববর্মন আসলে বাংলাদেশেরই সন্তান। কুমিল্লায় কুমার বাহাদুর নবদ্বীপচন্দ্রের প্রাসাদে ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর শচীন দেববর্মনের জন্ম। মায়ের নাম নিরুপমা দেবী। তৎকালীন ত্রিপুরার অন্তর্গত কুমিল্লার রাজপরিবারের নয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তিনি ছিলেন ত্রিপুরার চন্দ্রবংশীয় মানিক্য রাজপরিবারের সন্তান।

কুমিল্লায় আইএ ও বিএ পাস করার পর ১৯২৪ সালে ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯২৩ সালে আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রে তিনি প্রথম গান করেন। বাবা নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মনের কাছেই তার সঙ্গীতের হাতেখড়ি। বাবা ছিলেন একজন সেতারবাদক এবং ধ্রুপদী সংগীতশিল্পী।

১৯৩২ সালে শচীনের প্রথম রেকর্ড বের হয় হিন্দুস্তান মিউজিক প্রোডাক্টস থেকে। তার রেকর্ডকৃত প্রথম দুটি গান হলো ‘ডাকিলে কোকিল রোজ বিহানে’ ও ‘এ পথে আজ এসো প্রিয়’। 

১৯৩৪ সালে এলাহাবাদ অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে তার অবস্থান আরো সম্মানজনক অবস্থায় পৌঁছে যায়। ১৯৩৮ সালে হাইকোর্টের জজ কমলনাথ দাশগুপ্তের দৌহিত্রী, গানের ছাত্রী মীরা ধর গুপ্তকে বিয়ে করেন। মীরাও ছিলেন সংগীতশিল্পী ও নামকরা গীতিকার। ১৯৩৯ সালে তাদের সন্তান রাহুল দেববর্মনের জন্ম হয় (যিনি বর্তমানে আরডি বর্মন নামে বিখ্যাত)। আশা ভোঁসলে তার পুত্রবধূ।

‘রজনী’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে নাম লেখান শচীন। প্লেব্যাকের পাশাপাশি তিনি ১৩টি ছবিতে সংগীত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে হিন্দি ছবি ‘শিকারি’তে প্রথম সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। তিনি নজরুলের কথা ও সুরে চারটি গান রেকর্ড করেন।

১৯৪৪ সাল থেকে তিনি স্থায়ীভাবে মুম্বাইয়ে বসবাস করেন। সেখানে তিনি সংগীত পরিচালনা শুরু করেন। ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ ছবির জন্য ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার এবং ‘পিয়াসা’ ছবির জন্য এশিয়ান ফিল্ম সোসাইটি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি হেলসিংকি, ফিনল্যান্ড আন্তর্জাতিক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অন্যতম বিচারক ছিলেন। তিনি লাভ করেন ‘সন্তহরিদাস’ পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার। তিনি লোকজ সংগীত ও ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের সংমিশ্রণে নিজস্ব ঘরনার সৃষ্টি করেন। ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত করে।

তিনি এ দেশের লোকালয়ের সঙ্গে এত মিশে গিয়েছিলেন যে তার সুরের মূল সম্পদ আহরিত হয়েছিল বাংলার ভাটিয়ালি বাউল, কীর্তন, জারি থেকে। তিনি নিজের মুখে বলেছেন ‘পূর্ববঙ্গের এমন কোনো অঞ্চল নেই, এমন কোনো নদী নেই যেখানে আমি যাইনি, ঘুরিনি।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে গান সংগ্রহ করতাম, কারণ গানকেই আমার একমাত্র সম্পদ মনে করতাম এবং এই সম্পদের জোরেই আমি সুরের সেবা করে চলেছি, আর তার আদি হলো বাংলার পথেঘাটে ঘুরে সংগৃহীত ও রচিত আমার প্রাণের গানগুলো।’

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়