ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

তারাবি ব্যক্তিকে নিষ্পাপ করে

মুফতী মাহফূযুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৬, ১৯ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৭:৩৫, ১৯ এপ্রিল ২০২১
তারাবি ব্যক্তিকে নিষ্পাপ করে

রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আমল তারাবির নামাজ। যা শুধু রমজান মাসের বিশেষ আমল। রমজান মাসে ইশার নামাজের পর অতিরিক্ত আরো বিশ রাকাআত নামাজ পড়া হয় যা ‘তারাবির নামাজ’ নামে পরিচিত। ‘তারাবি’ নামটি সরাসরি কোরআন-হাদিসে পাওয়া যায় না। কিন্তু এ নামাজের আলোচনা হাদিসে পাওয়া যায়।

তারাবি শব্দটি আরবি তারবিহা শব্দের বহুবচন। তারবিহা শব্দের অর্থ বিশ্রাম। যেহেতু এ নামাজ আদায়কালে প্রতি ৪ রাকাত পরপর বিশ্রাম গ্রহণ করা হয়, এবং এতে পূর্ণ নামাজের মধ্যে ৪ বার বিশ্রাম নেয়া হয়, তাই এ নামাজ সাধারণের মাঝে তারাবির নামাজ (বিশ্রামের নামাজ) নামে পরিচিতি পেয়েছে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ‘আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন, আর এর রাতের নামাজকে নফল করেছেন। এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো নফল কাজ করল, সে যেন অন্য মাসের কোনো ফরজ কাজ করল।’ (বাইহাকি) তাহলে রমজানে তারাবি পড়া অন্য মাসে ২০ রাকাত ফরজ নামাজ পড়ার সমতুল্য।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন: ‘মহান আল্লাহ রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন আর আমি তার নামাজ সুন্নত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি ছওয়াবের আশায় ঈমানের সাথে রমজান মাসে দিনে রোজা রাখবে আর রাতে নামাজ পড়বে সে মাতৃগর্ভ থেকে সদ্য জন্মলাভের মতোই নিষ্পাপ হয়ে যাবে।’ (নাসায়ি)

তারাবি পুরুষের জন্যও সুন্নত, নারীদের জন্যও সুন্নত। বিধি নিষেধের কারণে মসজিদে গিয়ে মসজিদে অনুষ্ঠিত তারাবির জামাআতে শরিক হওয়া সম্ভব না হলে ঘরে হলেও তারাবির নামাজ আদায় করবেন। এক্ষেত্রে ঘরের সবাইকে নিয়ে জামাআতের আয়োজন করলে আরো সুন্দর হবে। তবে মনে রাখতে হবে, ঘরের সবাইকে নিয়ে জামাত করার সময় ইমাম হতে হবে অবশ্যই কোনো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবংও নারীরা পুরুষের কাতারে পুরুষের পাশে দাঁড়াতে পারবেন না। বরং পুরুষদের কাতারের পেছনে নারীদের পৃথক কাতার হবে। একজন হলেও পেছনে পৃথক কাতার করতে হবে।

তারাবির নামাজে কোরআন খতম করা অনেক উঁচু স্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। খোলাফায়ে রাশেদার শাসনামল থেকে অদ্যাবধি উম্মত নিরবিচ্ছিন্নভাবে অনেক গুরুত্বের সঙ্গে এর উপর আমল করে আসছে। মক্কা-মদিনাতেও সেই সাহাবাদের যুগ থেকে কোরআন খতমের সঙ্গে ২০ রাকাআত তারাবি আদায় হয়ে আসছে।

তবে তারাবি আদায়ে সময় বেশি লাগলেও তা নামাজ। মনে রাখতে হবে, তারাবির নামাজের জন্য হাদিসে রাতযাপন, রাতজাগা, রাতের নামাজ ইত্যাদি কাছাকাছি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যা থেকে খুব সহজেই বোধগম্য হয় তারাবি পড়তে যথেষ্ট সময় দিতে হবে, কষ্টগুলো ধৈর্যের সঙ্গে মেনে নিতে হবে, রাতের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তারাবির নামাজে কাটাতে হবে। তাই তারাবির ক্ষেত্রে যদি আমরা ত্বরাপ্রবণ হয়ে পড়ি, দ্রুত শেষ করার মতো অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ি তাহলে ভুল হবে। এটি অনুচিত কাজ।

তারাবির নামাজের ব্যাপারে দ্রুত শেষ করার প্রতিযোগিতা পরিহার করে বরং দেরিতে শেষ করার, সময় বেশি লাগানোর, তারাবির নামাজ ধীর-স্থির হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। তাতে আমাদের নামাজ সুন্দর হবে। তারাবির নামাজের কোরআন পাঠ, রুকু-সেজদার তাসবিহ, তাশাহহুদ ইত্যাদি সব হবে ধীর-স্থির ভাবে, শান্তভাবে। এভাবেই আমাদের তারাবিগুলো হয়ে উঠুক সত্যিকার নামাজের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।
 

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়