ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

লাইলাতুল কদর: মহিমান্বিত এক রজনী

এমদাদুল হক তাসনিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২২, ৯ মে ২০২১   আপডেট: ০২:২৬, ১০ মে ২০২১
লাইলাতুল কদর: মহিমান্বিত এক রজনী

লাইলাতুল কদর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রজনী। এ রাতে অজস্র ধারায় আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। প্রতিবছর লাইলাতুল কদর মুসলমানদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে। তাই প্রতিটি মুসলমানের কাছে এই রাত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও মহিমান্বিত। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহ এই রজনীকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই একটি মাত্র রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বরকতময় রজনী হলো লাইলাতুল কদর। কারণ এ রজনীতে রয়েছে যেমন বরকত, তেমনি কল্যাণ ও তাৎপর্য। কেননা এ রজনীতে মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল হয়েছে। এ রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-সিদ্ধান্ত লওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয় বাস্তবায়নের জন্য। এ রজনীর একটি বৈশিষ্ট্য হলো- আল্লাহ তায়ালা এ রাত সম্পর্কে একটি পূর্ণ সূরা অবতীর্ণ করেছেন। যেমন বর্ণিত হয়েছে- ‘আমি একে নাজিল করেছি শবে কদরে। শবে কদর সম্পর্কে আপনি কি জানেন? শবে কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সুরা কাদর : ১-৫)

সুরা কদর অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট

ইবনে আবি হাতেম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের সামনে বনি ইসরাইলের জনৈক চারজন লোক সম্পর্কে আলোচনা করলেন যে, তারা দীর্ঘ হায়াত লাভ করে অধিককাল যাবত ইবাদত করেছেন। এ সময়ের মধ্যে তারা একটিও নাফরমানি করেননি।  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জবান মোবারক থেকে এ কথা শুনতে পেরে সাহাবায়ে কেরাম অত্যন্ত বিস্মিত হলেন এবং নিজেদের ব্যাপারে আফসোস করতে লাগলেন। সাহাবায়ে কেরামের এ আফসোসের পরিপ্রেক্ষিতে মহান রাব্বুল আলামিন হযরত জিবরাইল আ. এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এই সুরা অবতীর্ণ করেন। (তাফসিরে মাআরিফুল কুরআন ও তাফসিরে মাজহারি)

লাইলাতুল কদর কবে?

লাইলাতুল কদর ২১ রমজান থেকে নিয়ে ২৯ রমজন পর্যন্ত যে কোনো বেজোড় রজনীতে হতে পারে। একদা হযরত উবায়দা রা. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কদরের রাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই সাহাবিকে বললেন- রমজানের বেজোড় শেষের দশ দিনের রাতগুলোতে তালাশ করো। (সহিহ বুখারি) লাইলাতুল কদরের তারিখের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে, অতঃপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতসমূহে তা খোঁজ করবে। (সহিহ বুখারি) 

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (ইবনে মাজা) 

লাইলাতুল কদরের ফজিলত

হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত জেগে ইবাদত করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি) হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেলো কিন্তু ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতে পারলো না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। (আবু দাউদ) কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশ দিনের পুরো সময় ইতেকাফরত থাকতেন। (সহিহ মুসলিম)


নির্বাহী সম্পাদক : মাসিক ইসলামী বার্তা, অর্থ সম্পাদক : বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
 

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ