ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ঋতুচক্রে ‘শারদলক্ষ্মী’

মোহাম্মদ রায়হান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৯, ২৬ আগস্ট ২০২১  
ঋতুচক্রে ‘শারদলক্ষ্মী’

আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা/নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা/এসো গো শারদলক্ষ্মী, তোমার শুভ্র মেঘের রথে/এসো নির্মল নীলপথে। শরৎকে সাদরে নিমন্ত্রণে এমন কাব্যিকতায় ডুব দিয়েছেন কবিগুরু। ইতোমধ্যে ‘শারদ-লক্ষ্মী’ বাঙলার দুয়ারে হানা দিয়েছে শুভ্রতার কামনা নিয়ে। কবিগুরুর সুরে গা ভাসিয়ে  আজ বলতে মানা নেই, এসো হে শরৎ, এসো শুভ্রতা নিয়ে এসো...। 

বাংলায় তৃতীয় ঋতু শরৎকাল।  ভাদ্র-আশ্বিন এই দুই-এ শরৎ। প্রকৃতির নির্মল ঋতু এটি।  দিনরাত বৃষ্টির সেতারময় সুরের মূর্ছনা শেষে পরিষ্কার নীল রঙের আকাশ উপহার দিতেই শরতের আগমন। ভাদ্র মাসের শুরুর দিকে শরতকালের প্রকৃত রূপ ধরা না দিলেও এ মাসের শেষ কিংবা আশ্বিন মাসের শুরুতে তার আসল রূপ ঠিকই হাজির হয়।

ঝিরিঝিরি বাতাসে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ রঙের ধান ক্ষেতের মাঠে ঊর্মিমালার অনুভূতি আসে। আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনায় অন্যরকম অনুভূতি। শরতের বিকেলে সুনীল আকাশের সাথে কাশফুলে অবাধে সখ্যতা গড়ে।  সাদা মেঘের সাথে সাদা কাশফুল যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। নদীর তীরে চিকচিকে বালুচর জেগে ওঠে। যেমনটা কাব্যে পাওয়া যায়, চিকচিক করে বালি- কোথাও নাই কাঁদা/একধারে কাঁশবন- ফুলে ফুলে সাদা।

তুলি মেঘভার আকাশ তোমার/করেছ সুনীলবরনী/শিশির ছিটায়ে করেছ শীতল​/তোমার শ্যামল ধরণী-শরতের পরিষ্কার আকাশ থেকে রাত বাড়লেই ঝরে টুপটুপ শিশির। শরতের ধরায় চলে শিশিরের টলমলানি। ধানের পাতার ডগায় মুক্তোর মতো শিশির বিন্দু লেগে থাকে। আসে শীতের অনুভূতি। রাত্তিরে চাঁদের জোৎস্নাস্নানে এক নয়নাভিরাম সুখ পাওয়া যায়। আর এসময়ে চাঁদ রাতে দল বেধে ওঠোনে বসে ঠাকুরমার ঝুলির আসর আবহমান বাংলার চিরায়ত রূপ।

কদমের রাজত্ব শেষ হতে না হতেই প্রকৃতিতে আসে বাহারি সব ফুলের রাজত্ব। শুধু কাশফুলই শরতকে মহিমান্বিত করে না।  শিউলি, শেফালি, মালতি গোলাপ, বকুল, মল্লিকা, মাধবীর ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয় মানব হৃদয়। বর্ষার বারিতে টইটম্বুর খালে-বিলে-ঝিলে বসে পদ্মফুলের মেলা।

গ্রাম বাঙলার চিরচেনা শরৎকালের বিবর্তনে রীতিমতো তার রূপ হারিয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জলবায়ুর পরিবর্তন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ত্বরান্বিত করছে। ফলে বাঙলা ঋতু তার আপন রূপ হারাচ্ছে দিনের পর দিন। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ হলেও চলমান সময়ে ছয়ঋতু টের পাওয়া যায় না।  

আষাঢ়-শ্রাবণজুড়ে বর্ষা ঋতু হলেও বাস্তবিক পক্ষে ভাদ্র মাসেও দিব্যি ভারী বর্ষণে কর্দমাক্ত গ্রাম বাংলা। জৈষ্ঠ্য মাস শেষে প্রকৃতির রুক্ষতা সেই আষাঢ়ের মাঝামাঝি স্থায়ী ছিল এবার। দীর্ঘ অনাবৃষ্টির পর দেরিতে শুরু হওয়া বর্ষা এখনো রয়েই গেছে। শরৎসন্ধ্যায় এখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে প্লাবিত হচ্ছে।

এত কিছুর পরও বাংলা ঋতুচক্রকে এ দেশের সাহিত্যমনা মানুষ বাঁচিয়ে রেখেছে যুগের পর যুগ। সেই বৈষ্ণব সাহিত্যের যুগে শরৎকে নিয়ে রচনা করা সাহিত্যের লালন আধুনিক যুগেও অব্যাহত। বাঙালির মননে শরৎকাল থাকুক অমলিন। 

লেখক: শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়