ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শিল্পাচার্য’র প্রয়াণের ৪৭ বছর

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ২৮ মে ২০২৩   আপডেট: ১২:৫২, ২৮ মে ২০২৩
শিল্পাচার্য’র প্রয়াণের ৪৭ বছর

জয়নুল আবেদিন বাংলাদেশের চারু ও কারুশিল্পের জনক। কারণ, তার শ্রম ও ত্যাগে এ দেশে চারু ও কারু শিক্ষার ভিত্তি গড়ে ওঠে। আর এ জন্যই তিনি শিল্পাচার্য।  

বিশ্ববরেণ্য এই চিত্রশিল্পীর ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৬ সালের ২৮ মে নন্দিত এই শিল্পী ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন । 

মুক্তিযুদ্ধ জয়নুলকে প্রচণ্ড আলোড়িত করেছিলো। দেশ স্বাধীনের পর লেগে গেলেন শিল্পচর্চা সংগঠনের কাজে। স্বপ্ন দেখতেন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের। সেই স্বপ্ন তিনি পূরণও করলেন। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার জয়নুল আবেদিনকে দায়িত্ব দিলেন বাংলাদেশের সংবিধানের অঙ্গসজ্জার জন্যে। তিনিও বিনা বাক্যে রাজি। তাকে সাহায্য সহযোগিতা করেন আরও কয়েকজন শিল্পী।

এক স্মৃতিচারণে জয়নুল আবেদিন লিখেছিলেন, যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি ছবি আঁকা শিখলাম কী করে? বা কার কাছ থেকে? তবে উত্তর দিতে পারবো না। বলবো আমার দেশের প্রকৃতি আর পরিবেশ আমাকে ছবি আঁকার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এদেশের আকাশ, বাতাস, নদী, মাঠ, বন, এখানকার মানুষের চলাফেরা, ওঠা-বসা, হাসি কান্না আমাকে ছবি আঁকতে বলে।

যদি বলা হয় বাংলাদেশের চিত্রকলার জনক কে তবে নিঃসন্দেহে প্রথম উত্তরই হবে জয়নুল আবেদিন। একজন শিল্পী কতোটা প্রভাব বিস্তার করলে এমনটি বর্ণনা সম্ভব। দেশীয় চিত্রকলা, এদেশের মাটি, মানুষ, হাওয়া, আকাশ, সমস্ত কিছু ফুটে এসেছিলো তার চিত্রকর্মে। এদেশের  চিত্রকলাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জনক তিনি। তাইতো তিনি শিল্পাচার্য। কেবল পূর্ববঙ্গই নয়, উপমহাদেশের চিত্রকলার ইতিহাস বলতে গেলে অবলীলায় স্থান পাবে তার নাম। তাকে ছাড়া চিত্রকলা অসম্পূর্ণ। তাইতো শিল্পাচার্য বাংলার বুকে একজনই। তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। 

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে একটি শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুভূত হয়। জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকার জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুলের একটি জীর্ণ বাড়িতে মাত্র ১৮ জন ছাত্র নিয়ে গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু হয়। জয়নুল আবেদিন ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম শিক্ষক। ১৯৫১ সালে এটি সেগুনবাগিচার একটি বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫৬ সালে গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট শাহবাগে স্থানান্তর করার পর ১৯৬৩ সালে এটি একটি প্রথম শ্রেণির সরকারি কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তখন এর নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়।

জয়নুল আবেদিন ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই সরকারি কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়।

এ ছাড়া জয়নুল আবেদীন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর ও ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালা গড়ে তোলেন। 

শিল্পাচার্যের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের শিল্পকর্ম আগামী প্রজন্মকে সৃজনশীল কাজে নিরন্তর অনুপ্রেরণা যোগাবে। গ্রামবাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য, সাধারণ মানুষের সহজ-সরল জীবনযাত্রা, মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও সংগ্রামই ছিল তার চিত্রকর্মের মূল উপজীব্য। তার কর্মে প্রতিভাত হয়েছে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নর-নারীর শ্রম ও সংগ্রাম এবং তাদের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।’

জয়নুল আবেদিনের জন্ম ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বৃহত্তর ময়মনসিংহের কেন্দুয়ায়। বাবা তমিজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পুলিশের দারোগা। মা জয়নাবুন্নেছা গৃহিণী। নয় ভাইবোনের মধ্যে জয়নুল আবেদিন ছিলেন সবার বড়। পড়াশোনার হাতেখড়ি পরিবারের কাছ থেকেই। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকা পছন্দ করতেন। পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফলসহ আরো কত কি এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। 
 
মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতায় গিয়েছিলেন শুধু কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য। ১৯৩৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়ালেখা বাদ দিয়ে কলকাতায় চলে যান এবং মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি হন। মা জয়নুল আবেদিনের আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতার আর্ট স্কুলে ভর্তি করান। 

/টিপু/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়