ঢাকা     মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

কোরবানির জরুরি মাসায়েল

প্রকাশিত: ১৫:৫৪, ২৯ জুন ২০২৩   আপডেট: ১৬:০৫, ২৯ জুন ২০২৩
কোরবানির জরুরি মাসায়েল

ঈদুল আজহার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো কোরবানি করা। প্রত্যেক প্রপ্তবয়স্ক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন সামর্থবান মুসলমানের উপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানির উদ্দেশ্য হতে হবে মহান আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন। একই সঙ্গে শরিয়তের নিয়মকানুন যথাযথভাবে মেনেই কোরবানির আমল সম্পন্ন করতে হবে। তাই সঠিক পদ্ধতিতে কোরবানি করার সুবিধার্থে এ সংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসায়েল পাঠকদের খেদমতে উপস্থাপন করছি: 

যে ব্যক্তি ১০ জিলহজ ফজর হতে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত জীবিকা নির্বাহের অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ ব্যতীত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্যের সম্পদের মালিক হয়, তার উপর কোরবানি ওয়াজিব।

১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত কোরবানি করার নির্ধারিত সময়। তবে প্রথম দিন কোরবানি করা সর্বাপেক্ষা উত্তম, এরপর যথাক্রমে দ্বিতীয় দিন ও তৃতীয় দিন। 

নাবালক, পাগল ও মুসাফিরের উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়; যদিও সে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়।

উট, মহিষ, গরু, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা ইত্যাদি গৃহপালিত পশুর দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। হরিণ বা অন্যান্য হালাল বন্যপশুর দ্বারা কোরবানি জায়েজ নয়।

উট, মহিষ ও গরু এই তিন প্রকার প্রাণীর ক্ষেত্রে এক থেকে সর্বোচ্চ সাতজন পর্যন্ত শরীক হয়ে কোরবানি করা জায়েজ। তবে ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এই তিন প্রকার প্রাণীর ক্ষেত্রে একের অধিক শরীক হয়ে কোরবানি করা জায়েজ নয়।

ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স কমপক্ষে এক বৎসর, গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বৎসর এবং উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বৎসর হতে হবে। 

একাধিক শরীক মিলে যদি একটি পশু কোরবানি করে, তবে এর গোশত অনুমান করে বণ্টন করা জায়েজ নয়। বরং পূর্ণ ইনসাফের সাথে মেপে সমানভাবে বণ্টন করতে হবে। অন্যথায় কমবেশী হয়ে গেলে গুনাহ্গার হবে।

যদি একাধিক ব্যক্তি শরীক হয়ে একটি পশু কোরবানি করতে চায়, তবে যাচাই-বাছাই করে শরীক নির্ধারণ করতে হবে, কেননা তাদের মধ্যে কোনো এক শরীকের কোরবানির টাকা যদি হারাম হয় বা কোনো শরীকের উদ্দেশ্য যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কিছু হয়ে থাকে, তাহলে সকলের কোরবানি বাতিল হয়ে যাবে। 

যে পশুর দুইটি চোখই পূর্ণ অকেজো অথবা একটি কান বা লেজের এক তৃতীয়াংশ কেটে গেছে এমন পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না।

যে পশুর একটি দাঁতও নেই, তার দ্বারা কোরবানি জায়েজ নয়।

যে পশুর শিং ওঠেনি বা উঠেছিল কিন্তু ভেঙে গেছে, তার দ্বারা কোরবানি হবে। কিন্তু যদি মূল হতে ভেঙে যায় তাহলে কোরবানি হবে না।

কোরবানির পশুর চামড়া বা তার মূল্য এতিম, গরিব, মিসকিন ও অসহায়দের দান করতে হবে।  মসজিদে দান করা যাবে না। তবে মাদ্রাসার লিল্লাহ ফান্ডে দান করলে অধিক সওয়াব পাওয়া যাবে। 

মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানি করা জায়েজ এবং তার গোশত নিজে খাওয়া বা বণ্টন করে দেওয়া জায়েজ। তবে মান্নত বা ওয়াসিয়তের কোরবানির সমস্ত গোশত দান করে দেওয়া ওয়াজিব।

যে পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ নাই তার দ্বারা আকীকাও জায়েজ নাই। 

কোরবানির পশুর অংশে আকীকা করা জায়েজ। কেননা উভয়টির উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন।

গোশত বণ্টনের মুস্তাহাব তারীকা হলো- একভাগ নিজেদের জন্য রাখা, আরেকভাগ আত্মীয়-স্বজনকে দেয়া, আরেকভাগ গরিব মিসকিনদের দেয়া। তবে এ ক্ষেত্রে কমবেশি করলেও জায়েজ আছে।

কোরবানির পশুর গোশত, চর্বি, হাড্ডি, মগজ ইত্যাদি বিক্রি করা মাকরূহ তাহরিমী। এর পরও যদি কেউ বিক্রি করে, তাহলে তার সমুদয় মূল্য সদকা করে দিতে হবে।

কোরবানির পশুর গোশত, হাড্ডি বা অন্য কোনো অংশ কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া জায়েজ নয়। 

কোরবানির পশু যবেহ করার পর প্রাণ সম্পূর্ণরূপে বের হওয়া পর্যন্ত তার শরীরের কোনো অংশে ছুরি লাগানো জায়েজ নেই। কেননা এতে জবাইকৃত পশুটি অধিক কষ্ট পায়।

সূত্র: ফাতাওয়ায়ে শামী, ফাতাওয়ায়ে আলমগিরী, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া ও হিদায়া ইত্যাদি
 

তারা//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়