ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

১ টাকার জিরা, ৩০ টাকায় মাছ, ৭০ টাকায় মাংস মেলে যে দোকানে

মুজাহিদ বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৭, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৪:৫৮, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
১ টাকার জিরা, ৩০ টাকায় মাছ, ৭০ টাকায় মাংস মেলে যে দোকানে

ঢাকায় যারা বসবাস করেন, তাদের অনেকেই ব্যাচেলর। এদের অধিকাংশের আবার বাসায় ফ্রিজ নেই। এদিকে, মাছ কিংবা মাংস কিনতে হয় কেজি দরে। ফ্রিজ না থাকায় কেজি হিসেবে মাছ-মাংস কিনলে সংরক্ষণের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কেউ চাইলেই দুই টুকরা মাছ, মাংস কিংবা এক শ’ গ্রাম লবণ কিনতে পারেন না। আমাদের দেশের বাজারব্যবস্থা এমনই। অথচ, পাশের দেশ ভারত কিংবা শ্রীলঙ্কায় কেউ চাইলেই এক টুকরা মাছ কিংবা মাংস কিনতে পারেন।

আমাদের দেশের বাজারে ক্রেতা অল্প পরিমাণে কোনো জিনিস কিনতে চাইলে লজ্জায় পড়েন। আশপাশের লোকেরা আড়চোখে দেখেন আর দোকানদাররা শোনান কটু কথা। এমন অবস্থায় কেউ দোকানদারের কাছে প্রয়োজন অনুযায়ী ১০০ গ্রাম মাংস কিংবা ৫ টাকার রসুন চাইতেই পারেন না।

এদিক থেকে ব্যতিক্রম রাজধানীর শাহাদাত হোসেন জুয়েলের দোকান। ঢাকায় উত্তরখানের ফায়দাবাদের ট্রান্সমিটার এলাকার পাটোয়ারী স্টোরে পাবেন ১ থেকে শুরু করে ১০০০ টাকার জিনিস। কিনতে পারবেন এক পিস মাছ কিংবা মাংস।

জুয়েলের দোকানে গেলেই প্রথমে আপনার নজরে আসবে একটি প্ল্যাকার্ড। যাতে লেখা, ‘এখানে আপনার চাহিদা অনুযায়ী সকল পণ্য আপনার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে বিনা সংকোচে বিক্রি করা হয়। আপনার প্রয়োজন যতটুকু, কিনুন ঠিক ততটুকুই’। এই লেখার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই বিক্রি করছেন জুয়েল। জুয়েলের দোকানে ১০/২০ গ্রাম পরিমাণেও পণ্য বিক্রি হয়।

জুয়েলের দোকান সাজানো রয়েছে, গরুর মাংসের তিন রকমের প্যাকেট। যার দাম ৩৫, ৭০০ ও ১০০ টাকা। ডাল ৫ টাকা, চিনি ৫ টাকা, তেল ৫ টাকা, পেঁয়াজ ৫ টাকা, মধু ১০ টাকা, চিয়া সিড ১০ টাকা, জিরা ১ টাকা, সরিষার তেল ৪ টাকা। এ ছাড়া, ৩০ টাকায় মাছ, রসুন ৫ টাকা, মরিচ ৫ টাকা, মশলা ৫ টাকা, ধনিয়া ৫ টাকা, খেসারি ৫ টাকা, ৫ পদের ডালের প্যাকেট ৩০ টাকা, সাগু ৫ টাকা, লবণ ৫ টাকা ইত্যাদি পণ্য। ঠান্ডা পানীয় বিক্রি করা হয় ওয়ান টাইমের গ্লাসে করে (৫ টাকা)।

এসব ছাড়াও পাটোয়ারী স্টোর বিশেষভাবে পরিচিত মসলার জন্য। প্রায় ১০০ রকমের মসলা এই দোকানে পাওয়া যায় সুলভ মূল্যে।

পাটোয়ারী স্টোর সবার কাছে পরিচিত গরিবের দোকান হিসেবে। সবাই এখান থেকে সাচ্ছন্দ্যে কিনতে পারেন তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়। কখনোই কাউকে কম পরিমাণে কিংবা কম টাকায় কিছু কিনতে চাইলে এই দোকানদার ফিরিয়ে দেন না। মানুষের সাথে মিশে মানুষের সেবা করতে চায় জুয়েল।

জুয়েলের দোকানে এমন অভিনব পন্থায় বিক্রি শুরু হয় ২০২১ সালে দোকান দেওয়ার পর থেকেই। আশপাশের সবার কাছেই জুয়েলের জনপ্রিয়তা বেশ। বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, সবাই ভালোবাসেন জুয়েলকে।

এমন অভিনব পন্থায় বিক্রির বিষয়ে কথা হয় জুয়েলের সাথে। জুয়েল বলেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল মানুষের সেবা করা। সেটা যে কোনো পেশায়-ই যায় না কেন। সেই ভাবনা থেকেই এই কাজ। অনেক সময় দেখা যায়, বাজারে কেউ ২০০ গ্রাম মাছ কিংবা ১০০ গ্রাম মাংস কিনতে চাইলে তার কাছে বিক্রি করা হয় না। এতে করে তার যে চাহিদা সেটা অপূরণীয় থেকে যায় এবং কষ্ট পায়, কারণ সবার চাহিদা তো এক নয়, সবার আয়ও এক নয়। অনেক সময় দেখা যায়, ব্যাচেলর বাসায় একজন থাকেন; তার তেহারি রান্না করতে ইচ্ছে হলো, তার জন্য তো হাফ কেজি মাংস, হাফ কেজি পেঁয়াজ, এক কেজি তেল- এসব কেনার দরকার নেই। দেখা গেলো, আমার দোকানে এসে সে তার ইচ্ছেমত নিতে পারেন। অনেকেরই ফ্রিজ নেই। তাই বাসায় বেশি জিনিস কিনলে নষ্ট হবে। আবার দেখা গেলো, অনেক সময় বাচ্চারা খিচুড়ি খেতে চায়, তার জন্য অনেক রকমের ডাল লাগে। বাজারে যদি অনেক রকম ডাল কিনতে যায়, তবে বেশি টাকা লাগবে। আমার কাছে ৩০ টাকার খিচুড়ির প্যাকেটেই সব রকমের ডাল পাওয়া যায়। এতে করে অনেকেরই সাশ্রয় হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চারা ঠান্ডা পানীয় খেতে চায়। কিন্তু ২৫ টাকা দিয়ে কিনে খাওয়ার মতো টাকা তাদের থাকে না। আমি তাদের জন্য ৫ টাকা করে ওয়ানটাইমের গ্লাসে ঠান্ডা পানীয় বিক্রি করি। এতে করে খুব বেশি লাভ না হলেও তৃপ্তি পাই।’ 

জুয়েল আরও জানায়, তার দোকানে প্রায় ১০০ রকমের মসলা পাওয়া যায়। কেউ ১০ গ্রাম মসলা কিনতে চাইলেও তিনি বিক্রি করেন।

জুয়েলের দোকানের একজন ক্রেতা আলিসা জাহান। তিনি  বলেন, ‘বাচ্চারা অনেক সময় বায়না করে খিচুড়ি-মাংস খেতে। এক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে সবসময় তাদের ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব হয় না। কারণ, ২৫০ গ্রামের নিচে কোনো বিক্রেতাই ডাল বিক্রি করতে চায় না। কিন্তু জুয়েল ভাইয়ের কাছে থেকে ৩০ টাকায় বিভিন্ন ধরনের ডাল নেওয়া যায়। যার জন্য বাচ্চাদের আবদারও পূরণ করা সম্ভব হয়।’

রহমান ব্যাপারী নামের একজন বলেন, ‘সবসময় আমরা এই দোকান থেকে পরিমাণমত জিনিস কিনতে পারি। জুয়েল কখনো বিরক্ত হয় না। যেটা যতটুকু চাই ততটুকই দেন। এতে আমাদের মতো মানুষের সাশ্রয় হয়। সব দোকানেই এমন সিস্টেম চালু করলে সবার জন্য সুবিধা হবে।’

স্বরলিপি/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়