ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কেমন ছিল চারশো বছরের পাল শাসন

যেভাবে শেষ হয়েছিল পাল শাসন (শেষ পর্ব)

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০২, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১২:১১, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪
যেভাবে শেষ হয়েছিল পাল শাসন (শেষ পর্ব)

পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল পাল

আনুমানিক ৯৯৫-১০৪৩ খ্রিষ্টাব্দ সময়ের মধ্যে পাল রাজবংশের হারানো গৌরব ফিরে আসে প্রথম মহীপালের রাজত্বকালে। তিনি ছিলেন পাল সাম্রাজ্যের একাদশতম সম্রাট দ্বিতীয় বিগ্রহপালের পুত্র। ক্ষমতায় এসে উত্তর ও পশ্চিম বাংলায় পিতার হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন। কিন্তু মহীপাল ও রামপালের মধ্যবর্তী রাজাদের রাজত্বকালে এ বংশের গৌরব সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। উত্তর ভারতের শক্তিসমূহের কলচুরি ও চন্দেল বার বার আক্রমণ করে। দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকালে ১০৭৫-১০৮০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পালবংশের দুর্বলতা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়।

এ সময় কৈবর্ত প্রধান দিব্য এক সামন্ত বিদ্রোহ করেন। এ বিদ্রোহের মাধ্যমে তিনি বরেন্দ্র অঞ্চলে  (উত্তর বাংলা) স্বাধীন শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল হয়ে পড়ায় স্বাভাবিকভাবেই বিচ্ছিন্নতা মাথাচাড়া দেয়। এ সময় পাল শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অন্যতম ভূমিকা রাখেন সম্রাট রামপাল। আনুমানিক ১০৮২-১১২৪ খ্রিষ্টাব্দ-এর মধ্যে উত্তর বাংলায় পাল আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হন। ইতিহাসের বিচারে এই সাফল্য ছিল ক্ষণস্থায়ী। কারণ রামপালের উত্তরাধিকারীরা এ সফলতা ধরে রাখতে পারেনি। তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

আরো পড়ুন:

পালদের অধীনস্থ সামন্ত রাজা বিজয়সেন সে সময় শক্তি সঞ্চয় করেন। বারো শতকের মাঝামাঝিতে এসে পালদের বাংলা থেকে উৎখাত করেন। এভাবে বিজয়সেনের নেতৃত্বে বাংলায় এক নতুন শক্তি সেনবংশের উদ্ভব হয়। সেনরা এসেছিলেন দাক্ষিণাত্যের কর্ণাট অঞ্চল থেকে। তারা ব্রহ্ম-ক্ষত্রিয়।

বৌদ্ধ বিহারের স্থাপত্যরীতির চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়এর আগ পর্যন্ত চারশো বছরের পাল শাসনামলে সফল প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে ওঠে। তাদের ভূমিভিত্তিক সাম্রাজ্য ছিল কৃষি নির্ভর। পাল অর্থনীতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। সে সময় ব্যবসায়িক কর্মকান্ড দেশের অভ্যন্তরে এবং বড়জোর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহে প্রসারিত ছিল। আট শতকের পর তাম্রলিপ্তি বন্দরের পতন সমুদ্রপথে বাংলার বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব থেকে পালদের বঞ্চিত করে।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পালদের দীর্ঘ শাসনকালে বাংলায় উদার ধর্মীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সে সময় হিন্দু-বৌদ্ধ সম্প্রীতি ও সহাবস্থান লক্ষ করা গেছে। ধর্মক্ষেত্রে তারা উদার নীতি প্রবর্তন করেন। হিন্দু দেব-দেবী ও রাজকার্যে উচ্চপদে নিয়োজিত ব্রাহ্মণদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন পাল রাজারা। পাল শাসনামলে হিন্দু-বৌদ্ধ পারস্পরিক সংশ্লিলষ্টতার কারণে সমাজে নতুন নতুন আচার-পদ্ধতি চালু হয়। সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের মনোভাব বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাসের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে।

পাল শাসনামল শিল্পকলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সে সময় বৌদ্ধ বিহারের স্থাপত্যরীতির চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়- পাহাড়পুরের সোমপুর মহাবিহারে। এ স্থাপত্যরীতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের পরবর্তী স্থাপত্য কাঠামোকে ব্যপকভাবে প্রভাবিত করে। বাংলার পোড়ামাটির ফলক শিল্পের উন্নয়নে ও চরম উৎকর্ষ পাল শাসনামলেই হয়েছে। এই রাজবংশের ভাস্কর্য ও শিল্প পূর্ব-ভারতীয় শিল্প রীতির একটা বিশেষ পর্যায় হিসেবে স্বীকৃত। পাল যুগেই বাংলার ভাস্করগণ তাদের শৈল্পিক প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটায়।

এ যুগের সাহিত্য কর্ম সম্পর্কে খুব একটা জানা যায় না। তারপরেও উত্তর বাংলার কবি সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিতম এক অসামান্য নিদর্শন হয়ে আছে। পরবর্তী যুগের কাব্য সংকলনে দশ ও এগারো শতকের কবিদের রচিত অনেক শ্লোক স্থান পেয়েছে। এ যুগে তালপাতায় লেখা কিছু সচিত্র বৌদ্ধ পান্ডুলিপি চিত্রশিল্পের উৎকর্ষের সাক্ষ্য বহন করে। এ সব কারণে পাল যুগকে সংগত কারণেই বাংলার প্রাচীন ইতিহাসের সব থেকে গৌরবময় যুগ হিসেবে গণ্য করা যায়। 

তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া

প্রথম পর্ব: কেমন ছিল চারশো বছরের পাল শাসন 

/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়