ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

যেভাবে ‘ইসরায়েল’ ইহুদিদের দেশ হলো

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০১, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১২:০৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
যেভাবে ‘ইসরায়েল’ ইহুদিদের দেশ হলো

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল বিশ্বের একমাত্র দেশ যার নাগরিকত্ব শুধুমাত্র ইহুদিরা পেয়ে থাকেন। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা একটি দেশ ইসরায়েল। বলতে গেলে দেশের মধ্যে দেশ। এই দেশ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয় এক বিজ্ঞানীর মাধ্যমে। 

গত শতাব্দীর শুরুর দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্য ছিল গ্লিসারিন। এই উপাদান অস্ত্র সুরক্ষায় ব্যবহার করা হতো। সে সময় ইউরোপের দেশগুলো তুরষ্ক থেকে গ্লিসারিন আমদানি করতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তুরষ্ক গ্লিসারিন রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ওই পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন ইহুদি বিজ্ঞানী কায়েম ওয়াইসম্যান। তিনি অ্যাসিটন আবিষ্কার করেন। যা গ্লিসারিনের বিকল্প হিসেবে অস্ত্র সুরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। ইউরোপে ব্যপকহারে অ্যাসিটন ব্যবহার শুরু হয় এবং তুরষ্কের ওপর নির্ভরশীলতা শেষ হয়। এই আবিষ্কারের বিনিময়ে ইহুদি বিজ্ঞানী কায়েম ওয়াইসম্যান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আলাদা আবাসভূমি দাবি করেন। 

আরো পড়ুন:

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে বর্তমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন অঞ্চল অটোম্যান সম্রাজ্যের অধীনে ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মুসলিম শাসকদের অদূরদর্শীতা এবং ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রের কারণে তুরষ্কে মুসলিম খেলাফত থেমে যায়। যুদ্ধচলাকালে ব্রিটিশ বাহিনী ইরাক, ফিলিস্তিন ও পবিত্র জেরুজালেম দখল করে নেয়।

অটোম্যান সম্রাজ্যের পতনের পর বর্তমান ফিলিস্তিন, সিরিয়া, জর্ডান এবং লেবানন অঞ্চলগুলো ইংল্যাণ্ড এবং ফ্রান্সের অধীনে চলে যায়। সে সময় ইহুদিদের আদি ভূমি ফিলিস্তিন অঞ্চলে ফিরে যাওয়ার আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে। এ কারণে পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ১৯১৭ সালে ২ নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইহুদিবাদীদেরকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এটি ‘বেল ফর’ ঘোষণা নামে পরিচিত।

এই ঘোষণার মাধ্যমে ইহুদিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়। বিপুল সংখ্যক ইহুদি ইউরোপ থেকে এসে ফিলিস্তিনে বসবাস করতে শুরু করে। ১৯১৪ সাল পর্যন্ত মাত্র কয়েক হাজার ইহুদি ফিলিস্তিন অঞ্চলে বাস করতো। এরপরে সংখ্যাটা দ্রুত বাড়তে শুরু করে। 

১৯১৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের সহযোগিতায় গুপ্ত ইহুদি বাহিনী ‘হাগানাহ’ গঠিত হয়। এই বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদীদের সহায়তা করা। পরবর্তীতে তারা সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত হয়। ফিলিস্তিন জনগণের বাড়ি ঘর ও ক্ষেত-খামার দখল করে এই বাহিনী। বাজার ও রাস্তাঘাট সহ জন সমাবেশে বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা। এভাবেই ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে বিতারিত করা হয়। দিনে দিনে ওই অঞ্চলে ইহুদিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৪১ সালে ইহুদিদের সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজারে শুরু হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপজুড়ে ইহুদি নিধন শুরু হয়। ফলে ইহুদিদের একটি একক রাষ্ট্রের আকাঙক্ষা আরও বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই এই লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন বিশ্ব নেতারা। 

১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে দ্বিখণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই প্রস্তাব অনুযায়ী নিজেদের মাতৃভূমির মাত্র ৪৫ শতাংশ পায় ফিলিস্তিনিরা। বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এভাবেই ইহুদিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গড়ে ওঠে।

লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়