পোশাকের ভেতর হৃদয় পরতেন যে বিচারক
সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, দোষী ব্যক্তি আসলে পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন। কোন পরিস্থিতিতে কী ঘটেছে তা বোঝার জন্য হৃদয় প্রয়োজন হয়, আইন ওই পথে চলে না। আইন চলে তার নিজস্ব গতিতে। কিন্তু এমন একজন বিচারক ছিলেন যিনি হৃদয় দ্বারা পরিচালিত হতেন। ওই বিচারকের নাম ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও। তার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডে। তিনি এক সময় ‘রোড আইল্যান্ড বোর্ড অভ গভর্নস’-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর প্রভিডেন্স শহরে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফ্রাঙ্ক বলতেন, “আমার পোশাকের ভেতর বিচারপতির ব্যাজ পরি না, আমি আমার পোশাকের ভেতর হৃদয় পরি।”
ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও মনে করতেন, ‘‘আদালন শুধু বিচারের জায়গা নয়, আদালত গল্প শোনার জায়গাও।’’
ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও-এর একটি বিচারের গল্প এরকম, একদিন কোর্টরুমে বসে আছেন ৯৬ বছরের এক বৃদ্ধ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো স্কুল জোনে গাড়ির স্পিড লিমিট মানেননি। বিচারক ফ্রাঙ্ক ক্যাপরিও এই অভিযোগ শুনেই রায় দিয়ে দেননি। তিনি জরিমানাও করেননি। শুধু জানতে চেয়েছিরেন, কী হয়েছিলো সেদিন? বৃদ্ধ লোকটি জানান, তার ক্যান্সারে আক্রান্ত ৬৩ বছর বয়সী এক ছেলে আছে। দুই সপ্তাহ পরপর তার জন্য রক্তের ব্যবস্থা করতে হয়। ওই টাকার যোগাড় করার জন্য গাড়ি চালান বৃদ্ধ। গাড়ি চালাতে গিয়ে খুব সামান্য গতির হেরফেরের করে ফেলেন তিনি। যার জন্য তার নামে মামলা হয়েছে।
সব শুনে বিচারক ক্যাপ্রিও একজন বাবার বিপক্ষে আইনের সর্বোচ্চটুকু প্রয়োগ না করে, তিনি বরং একটি সতর্কতা জারি করে মামলাটি বাতিল করে দেন। পরম মমতায় ওই বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উৎসাহ দেন এবং ওই বৃদ্ধ বাবাকে বুকে জড়িয়ে নেন।
ক্যাপ্রিও-এর এমন অনেক সহানুভূতিশীল বিচারের গল্প মানুষের মুখে মুখে ফিরতো। যুক্তরাষ্ট্রের কম পরিচিত রোড আইল্যান্ড স্টেটকে ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও পরিচিত করে তুলেছিলেন বিশ্বের নানাপ্রান্তের মানুষের কাছে। আর তার বিচার প্রক্রিয়া হয়ে ওঠেছিলো একটা দৃষ্টান্ত।
ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিওর বিচার-ধরন নিয়ে তৈরি টেলিভিশন সিরিজ 'কট ইন প্রভিডেন্স' বিশ্বজুড়ে এখনও ব্যাপক জনপ্রিয়। ক্যাপ্রিও বিশ্বাস করতেন, “খুব ছোট একটা ব্যাপারও একজন মানুষের জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারে।” দয়ালু বিচারক হিসেবে পরিচিত ওই বিচারক ২০ আগস্ট তারিখে মারা গেছেন।
মৃত্যুকালে এতার বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। তিনি রোড আইল্যান্ডের প্রভিডেন্স মিউনিসিপ্যাল আদালতে প্রায় ৪০ বছর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে, কখনো জুতা পালিশ, সংবাদপত্র বিলি, দুধ ডেলিভারি ট্রাকে হেল্পার হিসেবেও কাজ করেন তিনি।
ঢাকা/লিপি