ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘করোনায় আক্রান্তরা ডায়াবেটিস-হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকিতে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ২১ মার্চ ২০২৩  
‘করোনায় আক্রান্তরা ডায়াবেটিস-হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকিতে’

যেসব মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, সেসব রোগীরা পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট এবং হৃদযন্ত্রের নানা জটিলতার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ বছরের কম বয়সীদের তুলনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের হৃদযন্ত্রের জটিলতার পাশাপাশি স্নায়ুবিক জটিলতার আশঙ্কা রয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত ‘লং টার্ম সিকুয়েল অব কোভিড-১৯: অ্যা লংগিটুডিনাল ফলো-আপ স্টাডি ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এই গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ইউএসএআইডির অর্থায়নে বিএসএমএমইউ এবং আইসিডিডিআর’বি যৌথভাবে এই গবেষণা পরিচালনা করে।

এটি এশিয়ার মধ্যে প্রথম গবেষণা উল্লেখ করে বলা হয়, করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগীরা পরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার ঝুঁকিতে থাকে। যাকে বলা হয় পোস্ট-কোভিড-১৯ সিনড্রোম (পিসিএস)। ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকায় অবস্থিত কোভিড-১৯ মনোনীত দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত (আরটি-পিসিআর দ্বারা শনাক্তকৃত) ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৩৬২ জন ব্যক্তিকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

এই ৩৬২ ব্যক্তিকে করোনা-পরবর্তী জটিলতা নির্ণয়ে সেরে ওঠার এক মাস, তিন মাস এবং পাঁচ মাস পর ফলোআপ করা হয়। এসব ব্যক্তিদের স্নায়ুবিক, হৃদযন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো এই গবেষণার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

গবেষণায় বলা হয়, এসব রোগের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলোও নারী-পুরুষ ভেদে পৃথক পাওয়া গেছে। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে করোনা-পরবর্তী জটিলতার প্রকোপ দেড় থেকে চার গুণ পর্যন্ত বেশি দেখা গেছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত এবং নিবিড় পরিচর্যায় (আইসিইউ) থাকা রোগীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার সম্ভাবনা হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেশি পাওয়া গেছে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গুরুতর করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করা সত্ত্বেও রক্তে অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগার, হাসপাতালে ভর্তি হয়নি এমন রোগীদের তুলনায় ৯ থেকে ১১ গুণ বেশি ছিল। সে কারণে যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তাদের বেশি ইনসুলিন প্রয়োজন হয়েছে। আরেকটি শঙ্কার বিষয়-  হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার ছিল প্রতি এক হাজার জনে ১০ জন। একইভাবে, করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে কিডনিজনিত জটিলতা এবং লিভার জনিত জটিলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। 

তবে গবেষণায় আশ্বস্ত করার মতো বিষয় হলো, সময়ের সাথে সাথে উভয় গ্রুপের জটিলতার বেশিরভাগ হ্রাস পেয়েছে। যদিও শ্বাসকষ্ট, দ্রুত হৃদকম্পন, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ইত্যাদি সমস্যা রোগমুক্তির ৫ মাস পরেও অল্প করোনায় আক্রান্ত রোগীদের কেমনভাবে হ্রাস পায়নি।

উল্লেখিত ফলাফলগুলো করোনা থেকে সেরে ওঠাদের ফলোআপ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। উচ্চ ঝুঁকির কারণে বয়স্ক এবং হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকা উচিত।

গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ এসব ফলাফল উপস্থাপন করেন, বিএসএমএমইউ’র ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, কার্ডিওলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ এবং আইসিডিডিআর’বির নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী এবং প্রধান গবেষক ডা. ফারজানা আফরোজ।

/মেয়া/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়