ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

অতি দরিদ্র ২০ শতাংশ রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুপারিশ 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৯, ৫ মে ২০২৫   আপডেট: ১৬:৫৫, ৫ মে ২০২৫
অতি দরিদ্র ২০ শতাংশ রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুপারিশ 

দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আসা মোট রোগীর মধ্যে অতি দরিদ্র ২০ শতাংশ রোগীকে বিনামূল্যে সম্পূর্ণ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন।

সোমবার (৫ মে) রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিশনের সদস্যরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

মোট রোগীর ২০ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশকে সরকারি হাসপাতালে এবং বাকি ১০ শতাংশকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেছেন, চিকিৎসক-ফার্মাসিউটিক্যাল নীতি সম্পর্কিত বিষয়ে কমিশন সুপারিশ করেছে, ওষুধের নমুনা বা উপহার দিয়ে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সংখ্যা বাড়ানো এবং দুই বছর পর পর এই ওষুধের তালিকা আপডেট করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এছাড়াও অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

সংবিধান সংশোধনপূর্বক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়ার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন।

দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্যের শৃঙ্খলে আটকে থাকা দেশের স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে চূড়ান্ত সুপারিশ পেশ করেছে এই কমিশন। দেশের কোটি কোটি মানুষ এখনো মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। অনেকে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। যাদের সামর্থ্য আছে, তারাও বেসরকারি হাসপাতালের চড়া ব্যয়ের কারণে সীমাহীন কষ্টে পড়েন। এই বাস্তবতা বদলাতেই সরকার বড় ধরনের আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পথে হাঁটতে চায়।

স্বাস্থ্যসেবাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যসেবাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। একইসঙ্গে প্রস্তাব করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস’ নামের একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান গঠনের। এর মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে পরিকল্পনা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও তদারকি কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য বিনামূল্যে নিশ্চিত করার পাশাপাশি কমিশন ইউনিক হেলথ আইডি ও স্মার্ট হেলথ কার্ড চালুর সুপারিশ করেছে। এই কার্ডের মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিকের চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষিত থাকবে, যা চিকিৎসা কার্যক্রমকে আরো কার্যকর ও স্বচ্ছ করবে।

বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবার মূল্য নির্ধারণ, মান নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির সুপারিশ এসেছে কমিশনের প্রতিবেদনে। একইসঙ্গে প্রস্তাব এসেছে, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিনিধিরা আর সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন না, বরং তাদের তথ্য ই-মেইলের মাধ্যমে দিতে হবে। এতে ঘুষ ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা কমবে বলে দাবি করা হয়।

কমিশন জানিয়েছে, প্রতিটি বিভাগে আন্তর্জাতিক মানের একটি করে আঞ্চলিক রেফারেল হাসপাতাল গড়ে তোলা উচিত। পাশাপাশি যেসব হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ মানহীন ও অপ্রাতিষ্ঠানিক, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে তারা।

নারী স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট গঠনের প্রস্তাব
প্রতিবেদনে একটি জাতীয় নারী স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট গঠনের প্রস্তাবও এসেছে। একইসঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা সম্প্রসারণ, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং প্রবেশাধিকার সহজ করার জন্য আলাদা আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়েছে।

কমিশনের মতে, এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে দুই বছর। এজন্য আইনি সংস্কার, বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে।

‘মেডিকেল পুলিশ’ নামে বিশেষ ইউনিট গঠনের সুপারিশ
হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ নামে প্রশিক্ষিত একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করতে সুপারিশ প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। 

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবাগ্রহীতার অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একটি আধুনিক ডিজিটাল অভিযোগ নিষ্পত্তি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে। বিএমডিসি, বিএনএমসি, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল অ্যালাইড হেলথ প্রফেশনাল কাউন্সিলের আইনগত ক্ষমতা ও কাঠামো কার্যকর করতে হবে। পেশাগত অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না; তদন্ত ও সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ নামে প্রশিক্ষিত একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করতে হবে, যা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য মেডিকেল প্রফেশনাল ইন্স্যুরেন্স চালু করতে হবে। এমবিবিএস বা বিডিএস ব্যতীত কেউ ‘চিকিৎসক’ পরিচয়ে রোগী দেখলে, বিএমডিসি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।

ঢাকা/হাসান/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়