ঢাকা     বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লির নেতৃত্ব চান জয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৭, ১৪ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ১৮:২৪, ১৪ আগস্ট ২০২৪

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লিকে নেতৃত্বের ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার (১৪ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আহ্বান জানান।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জয় বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লিকে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

জয় বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের দোরগোড়ায় অবস্থিত। আমি আশা করব, ভারত নিশ্চিত করবে, ৯০ দিনের সাংবিধানিক সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনতার শাসন বন্ধ করা হবে এবং আওয়ামী লীগকে প্রচারণা ও পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হবে। যদি তা নিশ্চিত করা হয়, আমি এখনো নিশ্চিত যে, আমরা নির্বাচনে জয়ী হবো। আমরা এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় দল।’

ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেসকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার ভুল করেছে বলেও স্বীকার করেন জয়। 

শেখ হাসিনার ছেলে বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের সরকারের উচিত ছিল প্রথম থেকেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং কোটার বিরুদ্ধে কথা বলা। কোটা ইস্যু আদালতের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে শুরু থেকেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু এগুলো না করে আমাদের সরকার কোটা কমাতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে। আদালত ভুল করেছে। ‘‘আমরা কোটা চাই না’’ বলে আমি সবাইকে আশ্বস্ত করার সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু আমাদের সরকার সেটা শুনেনি এবং বিচারব্যবস্থার ওপর বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছে।’

কোটা ইস্যু নিয়ে সরকারের ভুল স্বীকার করলেও জয় জানান, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সহিংসতায় মোড় নেওয়ার পেছনে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা ছিল। 

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনার সাবেক এই আইটি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা এর পেছনে জড়িত ছিল। কারণ ১৫ জুলাই থেকে অনেক আন্দোলনকারীর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। গত ১৫ বছরে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আমাদের সফলতার কারণে বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া খুবই কঠিন। একমাত্র কোনো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা-ই বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার ও আন্দোলনকারীদের কাছে সরবরাহ করতে পারে।’

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী জয় গত ৫ আগস্ট তার মায়ের বাংলাদেশ ছাড়ার ২৪ ঘণ্টার বর্ণনা দিয়ে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার একদিন আগেও তিনি বা প্রধানমন্ত্রী কেউই ভাবতে পারেননি যে, কতটা দ্রুত অবনতি ঘটবে।

জয় বলেন, ‘আমার মায়ের দেশ ছাড়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। তিনি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন এবং জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেবেন। আমার ধারণা, তিনি ভাষণের খসড়া তৈরি করেছিলেন এবং সেটি রেকর্ড করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সবকিছু পরিকল্পিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই নিরাপত্তাবাহিনী এসবের জন্য ‘‘সময় নেই’’ বলে জানিয়েছিল।’

জয় জানান, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শেখ হাসিনা দেশে থাকার বিষয়ে অনড় ছিলেন। কিন্তু তিনি তাকে দেশ ছাড়ার জন্য রাজি করিয়েছিলেন। 

জয় বলেন, ‘বিশেষ নিরাপত্তাবাহিনী তাকে (শেখ হাসিনা) সামরিক বিমান ঘাঁটির মধ্যে একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। তাদের জন্য একটি হেলিকপ্টার প্রস্তুত ছিল, কিন্তু তিনি যেতে চাননি…তখন আমার খালা (শেখ রেহানা সিদ্দিক) আমাকে ফোন করেন। আমি আমার মাকে বোঝালাম যে, আপনার নিরাপত্তার জন্য আপনাকে চলে যেতে হবে। যদি এই জনতা আপনাকে খুঁজে পায়, কোথাও আপনাকে ধরে ফেলে এবং সেখানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, তাহলে অনেক লোক মারা যাবে। যদি জনতা আপনাকে ধরে ফেলে তবে তারা আপনাকে হত্যা করবে। তাই আপনার সেরা বিকল্প হলো দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া।’ 

বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতে রয়েছেন। জয় বলেন, ‘বাংলাদেশে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা দেখার জন্য তিনি (শেখ হাসিনা) অপেক্ষা করছেন।’ জয়ের মতে, ‘সম্ভবত মা আপাতত ভারতেই থাকবেন।’

/ফিরোজ/এনএইচ/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়