ইয়েমেনের হুদাইদা বন্দরে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলা, বহু হতাহত
ইয়েমেনের হোদেইদাহ বন্দরে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (৬ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (৫ মে) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে হোদেইদাহ বন্দরে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল সেনাবাহিনী। এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলে হামলা চালানোর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে হুতি নিয়ন্ত্রিত হোদেইদাহ বন্দরে হামলা চালানো হয়েছে।
এর আগে, রবিবার (৪ মে) ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দর বেন গুরিয়নের কাছে ইরান সমর্থিত হুতিদের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এর একদিন পরেই পাল্টা হামলার কথা জানাল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হোদেইদাহ এবং এর আশেপাশের এলাকায় হুতি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে হুতি পরিচালিত সংবাদ সংস্থা সাবা জানিয়েছে, হোদেইদাহ বন্দরে সোমবারের এই হামলায় কমপক্ষে একজন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন।
তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, হামলার পর হুতিরা বন্দর এবং একটি সিমেন্ট কারখানার আশেপাশের এলাকা বন্ধ করে দিয়েছে।
তারা জানিয়েছে, বন্দরে ক্ষতির পরিমাণ অজানা, তবে হামলা এবং আগুনের তীব্রতা কন্টেইনারের বার্থে মারাত্মক ক্ষতি করেছে।
অন্য দুটি সূত্র বন্দরের পাঁচটি ডক, গুদাম এবং শুল্ক এলাকার ৭০ শতাংশ ক্ষতি অনুমান করেছে। বন্দরের একজন কর্মী জানিয়েছেন, দুটি জাহাজ পণ্য খালাস করার সময় এই হামলা চালানো হয়েছিল, বন্দরে যান চলাচল সম্পূর্ণ স্থবির ছিল।
এডেনের পর লোহিত সাগরের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর হলো হোদেইদাহ। ইয়েমেনের খাদ্য আমদানির প্রায় ৮০ শতাংশের প্রবেশপথ এটি। পাঁচজন বাসিন্দা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হোদেইদাহ বন্দর এবং হোদেইদাহ শহরের আল সালাকানাহ এবং আল হাওয়াক পাড়া লক্ষ্য করে ১০টিরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে। হোদেইদার পূর্বদিকে একটি সিমেন্ট কারখানাও লক্ষ্য করে চারটি হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে,ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুতিদের বারবার আক্রমণের জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
রবিবার হুতিদের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বেন গুরিওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সীমানায় আঘাত হানে। যার ফলে একটি রাস্তা ও যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আটজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে প্যারামেডিকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত উন্নত থাড সিস্টেম ও তেল আবিবের দূরপাল্লার অ্যারো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূপাতিত করতে ব্যর্থ হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রবিবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অন্যদিকে হুতি কর্মকর্তা আব্দুল কাদের আল-মোরতাদা হামলার বিষয়ে মন্তব্য করে একটি এক্স পোস্টে বলেছেন, ইসরায়েলের ‘অকল্পনীয়’ ঘটনার জন্য অপেক্ষা করা উচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, সোমবারের হামলায় মার্কিন বাহিনী সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল না, তবে দুই মিত্রের মধ্যে সাধারণ সমন্বয় রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্চ মাসে হুতিদের বিরুদ্ধে বড় আকারের হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর থেকে ইয়েমেনে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে মার্কিন বাহিনী। এসব হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ইয়েমেনে তাদের হামলা সীমিত করেছে।
এক দশকের বেশি সময় ধরে ইয়েমেনে সশস্ত্র সংগ্রাম করছে ইরান সমর্থিত হুতিরা। উত্তর ইয়েমেনের অধিকাংশ অঞ্চলই এখন তাদের দখলে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হলে এর প্রতিবাদে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে তারা ১০০ এর বেশি হামলা চালিয়েছে।
হুতি গোষ্ঠী বলছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা লোহিত সাগরের জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে এবং তাদের বাহিনী হামলার জবাব দেবে।
এদিকে, রবিবার (৪ মে) ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা ফিলিস্তিনের গাজায় সামরিক অভিযানের পরিসর আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। পরিকল্পনার মধ্যে গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল ও নিয়ন্ত্রণে আনার মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ