আবারো রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে সফল হামলার দাবি ইউক্রেনের

রাশিয়ার সাভাসলেকা বিমানঘাঁটি
রাশিয়ার গভীরে একটি বিমানঘাঁটিতে রবিবার (৮ জুন) রাতে অভিযান চালিয়ে দুটি যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত করার দাবি করেছে ইউক্রেন।
এক সপ্তাহ আগে ‘অপারেশন স্পাইডারওয়েব’ চালিয়ে রাশিয়ার পারমাণবিক-সক্ষম বোমারু বিমানগুলোতে আঘাত হানার পর, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এবার নতুন এই সাফল্যের দাবি করলেন। খবর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের।
বিশেষ অভিযান বাহিনী ইউক্রেনীয় সীমান্ত থেকে প্রায় ৪০০ মাইল দূরে রাশিয়ার নিজনি নভগোরোড অঞ্চলে অবস্থিত সাভাসলেকা বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে বলে জানা গেছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী অভিযানের প্রকৃতি সম্পর্কে কোনো বিবরণ দেয়নি এবং ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
রাশিয়া ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী এবং এর শহরগুলোর বিরুদ্ধে কিনজাল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী মিগ-৩১কে যোদ্ধাদের মোতায়েনের জন্য সাভাসলেকা বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে থাকে।
ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, শত্রু বিমানের দুটি ইউনিট (সম্ভবত মিগ-৩১ এবং এসইউ-৩০/৩৪) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অভিযানের ফলাফল স্পষ্ট করা হচ্ছে।”
ইউক্রেন তাদের সীমান্ত থেকে প্রায় ৮০০ মাইল দূরে চেবোকসারিতে রাশিয়ার একটি সামরিক কারাখানায় সফল ড্রোন হামলার ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করেছে। কারাখানাটিতে রাশিয়ার স্ব-চালিত হাউইটজার, ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, ল্যানসেট ও শাহেদ কামিকাজে ড্রোনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ উৎপাদিত হয়ে থাকে।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা ভিএনআইআইআর-প্রগ্রেস কারখানায় হামলার ঘটনায় রুশ কর্তৃপক্ষ ওই অঞ্চলে বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে।
তারা আরো দাবি করেছে, “কমপক্ষে দুটি ড্রোনের আঘাতে সামরিক কারখানাটির সুবিধা ধ্বংস ও পরবর্তীতে বড় আকারে আগুন লাগার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ধ্বংসের ফলাফল স্পষ্ট করা হচ্ছে।”
ইউক্রেনের হামলার তথ্য স্বীকার করে আঞ্চলিক গভর্নর ওলেগ নিকোলায়েভ জানান, কারখানায় উৎপাদন স্থগিত করা হয়েছে, তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের এই অভিযান শুরু হয় যখন ক্রেমলিন রাতভর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা জোরদার করে এবং উত্তর-পূর্ব সুমি অঞ্চলে ও পূর্বে ডোনেটস্কে ফ্রন্টলাইনকে পিছনে ঠেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করে।
ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া রবিবার রাতে ও সোমবার ভোরে ইউক্রেনে ৪৭৯টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, ইউক্রেনে এটিই রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা।
ইউক্রেনে প্রায় ২০টি ক্ষেপণাস্ত্রও ছুড়েছে মস্কো, যার লক্ষ্য মূলত মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চল। পোল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল কমান্ড জানিয়েছে, পশ্চিম ইউক্রেনে রাশিয়ার বিমান হামলার জবাবে তারা যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে।
তিন বছর আগে পূর্ণ-স্কেল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, রবিবার রাতে রাশিয়া পশ্চিম ইউক্রেনের রিভনে অঞ্চলে সবচেয়ে বড় হামলা চালিয়েছে। আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসনের প্রধান ওলেকসান্ডার কোভালের মতে, হামলায় একজন নিহত হয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রাশিয়া সম্ভবত ইউক্রেনের ডুবনো বিমানঘাঁটিতেও হামলা চালিয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দাবি করা হয়েছে, এটি ইউক্রেনের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের ঘাঁটি। তবে এটি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি দ্য গার্ডিয়ান।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান টাইমুর তাকাচেঙ্কো জানিয়েছেন, রাশিয়ার হামলায় রাজধানীর ডারনিৎসিয়া জেলার একটি অফিস ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মাঝ আকাশে রাশিয়ার ২৭৭টি ড্রোন এবং ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে, মাত্র ১০টি ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত হেনেছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সামরিক অগ্রগতি অর্জন করেছে, একই নামের আঞ্চলিক রাজধানীর ১৮ মাইলের মধ্যে প্রবেশ করেছে।
সুমি অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ হ্রাইহোরভের মতে, সুমি শহর খালি করার এখনও কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি পরিস্থিতিকে ‘উত্তেজনাপূর্ণ কিন্তু ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে’ বলে দাবি করেন।
তিন বছর ধরে চলমান যুদ্ধে রাশিয়ান বাহিনী দোনেৎস্কের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে প্রথমবারের মতো পূর্ব ডনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলে প্রবেশ করার যে দাবি করেছে, তা প্রত্যাখান করেছে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফের মুখপাত্র মেজর আন্দ্রি কোভালেভ এক বিবৃতিতে বলেন, “তথ্যটি সত্য নয়। দোনেৎস্ক ওব্লাস্টে লড়াই চলছে। শত্রুরা দনিপ্রোপেট্রোভস্ক ওব্লাস্টে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়নি।”
ঢাকা/ফিরোজ