এবার টেক্সাসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে গত পাঁচদিন ধরে চলা ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভ এবার ছড়িয়ে পড়েছে টেক্সাসেও। বিক্ষোভ দমাতে টেক্সাস কর্তৃপক্ষ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বুধবার টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছেন, “শান্তি ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন স্থানে টেক্সাস ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হবে।”
বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বৈধ। কোনো ব্যক্তি বা সম্পত্তির ক্ষতি করা অবৈধ এবং এর ফলে গ্রেপ্তার করা হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করার জন্য টেক্সাস ন্যাশনাল গার্ড প্রতিটি হাতিয়ার ও কৌশল ব্যবহার করবে।”
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার বিপরীত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে মনে হচ্ছে। এ কারণেই এর গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট, সান আন্তোনিওতে পরিকল্পিত বিক্ষোভের আগে তার রাজ্যের ন্যাশনাল গার্ডকে মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের মতে, অ্যাবটের অফিস জানিয়েছে, ‘যেখানে গণ-বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেখানে টেক্সাস ন্যাশনাল গার্ড সৈন্যরা প্রস্তুত রয়েছে।’ গভর্নরের অফিস হুঁশিরারি দিয়ে বলেছে, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসে আমরা যে সহিংসতা দেখেছি, টেক্সাসে তা সহ্য করা হবে না।”
বিবিসির উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা অ্যান্টনি জুরচারের মতে, টেক্সাসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তটি পুলিশ বাহিনীর ওপর গভর্নরের আস্থার অভাব ঈঙ্গিত দিতে পারে। এর চেয়েও বড় কথা, এটি ক্যালিফোর্নিয়া, ট্রাম্প প্রশাসনে অ্যাবটের মিত্র এবং মার্কিন নাগরিকদের কাছে একটি বার্তা হিসেবে বোঝানো হয়েছে যে, রিপাবলিকানরা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে জানে।
তবে এই পদক্ষেপ ঝুঁকিমুক্ত নয়। ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে টেক্সাসে ডেমোক্র্যাট-অধ্যুষিত বড় শহরগুলোতে বিক্ষোভের সূত্রপাত হতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযানের জেরে গত শুক্রবার থেকে বিক্ষোভে উত্তাল রয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ এ শহরটিতে চলমান এ বিক্ষোভ ইতিমধ্যে সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লস অ্যাঞ্জেলেস চার হাজার ন্যাশনাল গার্ড ও ৭০০ মেরিন সেনা মোতায়েন করেছেন ট্রাম্প। তবে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে মোড় নিয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ডাউনটাউনে শহরে মঙ্গলবার রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, কারফিউ ভঙ্গ করার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ গণ গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে।
এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম ট্রাম্প প্রশাসনের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি অঙ্গরাজ্যবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, “ওখান থেকেই অবনতি শুরু হলো। প্রেসিডেন্ট ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা বাড়িয়ে পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করেছেন। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে এমনভাবে ব্যবহার করছেন যেন তারা কোনো শত্রু দেশের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।”
নিউজমের ভাষায়, “প্রেসিডেন্ট যাদের টার্গেট করছেন তারা সন্ত্রাসী নয়, তারা তো আমাদের সমাজের সাধারণ সদস্য- রান্নাঘরের কর্মী, মালী, দিনমজুর, দর্জি। এটা শক্তির বহিঃপ্রকাশ নয়, এটা দুর্বলতা। ট্রাম্পের সরকার আমাদের কমিউনিটিকে নিরাপদ করার চেষ্টা করছে না, বরং ভয়ভীতি ছড়িয়ে আমাদের আঘাত করছে। এবং মনে হচ্ছে, এটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।”
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার নিজের অবস্থানে অটল থাকার বার্তা দিয়েছেন। নর্থ ক্যারোলিনার ফোর্ট ব্র্যাগ সেনাঘাঁটিতে মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, “আমাদের বীর সেনারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিদেশের মাটিতে দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন, শুধু এই দৃশ্য দেখার জন্য নয় যে, এখন নিজ দেশের ভেতরেই তৃতীয় বিশ্বের মতো বিশৃঙ্খলা ও অনুপ্রবেশে দেশ ধ্বংস হচ্ছে- যেমনটা ক্যালিফোর্নিয়ায় ঘটছে।
তিনি বলেন, “আমি একজন কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে তা হতে দেব না। এটা কখনোই ঘটতে দেব না।”
তবে এতো পদক্ষেপের পরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনকে। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে নিউ ইয়র্ক, আটলান্টা, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া, ডালাস, অস্টিন এবং সান ফ্রান্সিসকোসহ কমপক্ষে দশটি মার্কিন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা/ফিরোজ