ঢাকা     শনিবার   ১২ জুলাই ২০২৫ ||  আষাঢ় ২৮ ১৪৩২

ইরানের পক্ষে এরদোয়ানের জোরালো অবস্থান, ‘আত্মরক্ষার অধিকার আছে তেহরানের’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ১৮ জুন ২০২৫   আপডেট: ২২:২৭, ১৮ জুন ২০২৫
ইরানের পক্ষে এরদোয়ানের জোরালো অবস্থান, ‘আত্মরক্ষার অধিকার আছে তেহরানের’

তুরস্কের প্রেসিডেন্টে রিসেপ তায়েপ এরেদোয়ান।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইরান বৈধ আত্মরক্ষায় নিযুক্ত রয়েছে।

তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের হামলায় ইরানে শত শত বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং যেসব হামলা চিকিৎসাকর্মী, সংবাদ সংস্থা ও আবাসিক এলাকাগুলোকে টার্গেট করেছে।

“এই হামলাগুলো সংঘটিত হয়েছে সেই সময় যখন ইরানি পারমাণবিক আলোচনা চলছিল,” যোগ করেন এরদোয়ান।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, “ইসরায়েল, যার পারমাণবিক অস্ত্র আছে এবং যে দেশটি কোনো আন্তর্জাতিক নিয়ম মানে না, আলোচনা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা না করেই একটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।”

‘ইরানের কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে’, ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান তেহরানের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাত বিষয়ে বুধবার (১৮ জুন) হোয়াইট হাউসে কথা বলেছেন। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ইরানি কর্মকর্তারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং হোয়াইট হাউস সফরের প্রস্তাব দিয়েছেন।” তবে ট্রাম্পের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরান।

কোনো প্রমাণ না দিয়েই ট্রাম্প বলেন, “ইরান সম্পূর্ণ প্রতিরক্ষাহীন, তাদের কোনো আকাশ প্রতিরক্ষা নেই।”

সংঘাতকে ‘সম্পূর্ণ বোকামি’ বলে আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, “ইরানকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করতে বলার অর্থ হলো, তারা আত্মসমর্পণ করবে, তারপর আমরা গিয়ে ওখানে ছড়িয়ে থাকা সব পারমাণবিক জিনিস উড়িয়ে দেব।”

তিনি বলেন, “৪০ বছর ধরে তারা বলে আসছে, আমেরিকার মৃত্যু, ইসরায়েলের মৃত্যু, আর যাকে পছন্দ করে না, তারও মৃত্যু। তারা ছিল দুষ্টু, স্কুলে বুলিংয়ের মতো আচরণ করত। কিন্তু এখন আর তারা বুলিংয়ের মতো নেই, তবে দেখা যাক কী হয়।”

“আমি বলছি না যে আমরা এখনই কিছু জিতে গেছি, তবে আমি নিশ্চিতভাবে বলব, আমরা অনেক অগ্রগতি করেছি। দেখা যাক। আগামী সপ্তাহটা হবে খুব গুরুত্বপূর্ণ, হয়তো এক সপ্তাহও লাগবে না।”

ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বৈঠকের প্রস্তাবের দাবি অস্বীকার তেহরানের

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি অস্বীকার করে ইরান বলেছে, কোনো ইরানি কর্মকর্তা কখনো হোয়াইট হাউস সফরের অনুরোধ করেননি।

জাতিসংঘে ইরানের মিশন এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেছে, “কোনো ইরানি কর্মকর্তা কখনো হোয়াইট হাউসের দরজায় মাথা নত করে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেননি। তার (ট্রাম্পের) মিথ্যার চেয়েও ঘৃণ্য হলো ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে ‘উড়িয়ে দেওয়ার’ মতো কাপুরুষোচিত হুমকি।”

এই মন্তব্য ট্রাম্পের বক্তব্যের পরপরই এসেছে, যেখানে তিনি বলেন, ইরানি কর্মকর্তারা তার সঙ্গে আলোচনার জন্য যোগাযোগ করেছিলেন।

ইরান আরো বলেছে, “ইরান কখনো হুমকির মুখে আলোচনা করে না, হুমকির মধ্যে শান্তিও মেনে নেয় না, আর অবশ্যই একজন অপ্রাসঙ্গিক যুদ্ধবাজের সঙ্গে নয়।” এটি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির আগের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “ইরানিরা হুমকির ভাষায় কখনো সাড়া দেয় না।”

যুদ্ধের সিদ্ধান্ত হলে তা বাস্তবায়নে প্রস্তুত, সিনেটের শুনানিতে হেগসেথ

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, “যুদ্ধের নির্দেশ এলে তা বাস্তবায়নের জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। তবে কী হতে যাচ্ছে, তা প্রকাশ করব না।”

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ‍সিনেটের শুনানিতে প্রতিরক্ষা বিভাগের অবস্থান তুলে ধরেন।


ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাত নিয়ে সিনেটের এক শুনানিতে প্রশ্নের মুখোমুখি হন পিট হেগসেথ।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে হামলার কোনো বিকল্প ভাবছেন কি না, তা তিনি প্রকাশ্যে বলবেন না।

হেগসেথ বলেন, “যদি এবং যখন যুদ্ধ ও শান্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন প্রতিরক্ষা বিভাগ সেগুলো কার্যকর করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকবে।”

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা হচ্ছে রাশিয়ার’

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, যা রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স উদ্ধৃত করেছে।

রিয়াবকভ আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দেয়, তাহলে তা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে চরমভাবে বিপন্ন করবে।

তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে রাশিয়া ইসরায়েল ও ইরান উভয়ের সাথেই সরাসরি আলোচনায় লিপ্ত, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এক জোরালো বিবৃতিতে বলেছেন, “বিশ্ব এখন প্রতিদিনের ইসরায়েলি বিমান হামলার কারণে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ‘মিলিমিটারের দূরত্বে দাঁড়িয়ে এক বিপর্যয়ের মুখে’ রয়েছে।”

এই মন্তব্য ইঙ্গিত করে যে, যদি এই হামলাগুলো অব্যাহত থাকে, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে; এমনকি পারমাণবিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনাও নাকচ করা যাচ্ছে না।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান পুতিনের

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইসরায়েল-ইরান সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং মধ্যস্থতা করার প্রস্তাবও দিয়েছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, পুতিন এই বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান-এর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।

ফোনালাপে চলমান উত্তেজনা নিয়ে উভয় নেতা ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন।

তারা বিশ্বাস করেন, এই সংঘাতের দ্রুত সমাধান প্রয়োজন, না হলে এর প্রভাব গোটা অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

পুতিন জানান, রাশিয়া সংকট নিরসনে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত এবং তিনি ইতোমধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতার সঙ্গে আলোচনায় রয়েছেন।

এই মন্তব্যগুলো এমন সময় এসেছে যখন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সম্ভাব্য বড় ধরনের যুদ্ধ এড়াতে কূটনৈতিক সমাধানের খোঁজে আছে।

রাশিয়ার প্রস্তাবিত মধ্যস্থতা কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটি ইসরায়েল ও ইরান উভয়ের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবের বাইরে থেকে কিছুটা নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেয়, তাহলে সেটি মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স লিখেছে, রিয়াবকভ বলেছেনম, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করছি; ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বা তা বিবেচনাও করা যেন না হয়। এর ফলে পুরো অঞ্চল বিস্ফোরণমুখী হয়ে উঠতে পারে।”

মস্কো বর্তমানে ইসরায়েল ও ইরান- উভয়ের সঙ্গেই সরাসরি যোগাযোগে রয়েছে, যাতে উত্তেজনা কমানো যায়।

রাশিয়া মনে করে, এখন দরকার কূটনৈতিক সংলাপ ও উত্তেজনা প্রশমনের উদ্যোগ।

রাশিয়া পূর্বে মধ্যপ্রাচ্যে (বিশেষত সিরিয়ায়) একটি প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখেছে এবং এখন ইসরায়েল-ইরান সংঘাতেও নিজেদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়।

এই হুঁশিয়ারি এমন সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইউএসএস নিমিৎজ বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে, যা রাশিয়ার দৃষ্টিতে সংঘাতের বিস্তার ডেকে আনতে পারে।

জাতির উদ্দেশে খামেনি: আরোপিত যুদ্ধ বা শান্তি মানবে না ইরান, আত্মসমর্পণও করবে না

ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি হলেও ইরান তার অবস্থান থেকে সরবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, “কারো আরোপিত যুদ্ধ কিংবা শান্তি, ইরান কোনোটাই মেনে নেবে না, আত্মসমর্পণও করবে না।”

বুধবার (১৮ জুন) জাতির উদ্দেশে ভাষণে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে তার দেশের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, “ইরান যেমন আরোপিত যুদ্ধ দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করবে, তেমনি আরোপিত শান্তির বিরুদ্ধেও দৃঢ় অবস্থানে থাকবে। এই জাতি কারো চাপের মুখে কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না।”

তেহরানভিত্তিক বার্তা সংস্থা তাসনিম খামেনির বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার  করেছে।

খামেনি বলেন, “যারা ইরানের ইতিহাস ও জাতিগত চরিত্র জানে, তারা জানে, হুমকির ভাষায় ইরানিরা কখনোই সাড়া দেয় না।”

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। তাকে ঘি ঢালছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে ভাবছেন বলে খবর রয়েছে। 

ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘাতের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। 

ট্রাম্প প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেছেন, “আমরা জানি ইরানের তথাকথিত ‘সুপ্রিম লিডার’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি সহজ লক্ষ্যবস্তু। তবে আমরা এখনই তাকে হত্যা করব না, অন্তত এখন নয়।”

খামেনি ট্রাম্পের এই হুমকির সরাসরি জবাব দিয়ে বলেন, “আমেরিকানদের বুঝতে হবে, তাদের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপের পরিণাম হবে ভয়াবহ ও অপূরণীয়।”

ইরান বর্তমানে একাধিক ফ্রন্টে চাপের মুখে রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযান নিয়ে তেহরান সরাসরি তেলআবিবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

সৌদি আরব ও আমিরাতের সঙ্গে সাম্প্রতিক কিছু পুনর্মিলনের পরও শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা পেছনের দরজা দিয়ে এখনো সক্রিয়।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে এবং নতুন করে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে খামেনেয়ির ভাষণে একটি বার্তা স্পষ্ট, আর তা হলো: ইরান কোনো বিদেশি চাপ, হুমকি বা রাজনৈতিক সমঝোতার নামে জোরপূর্বক শান্তি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা মেনে নেবে না। তাদের প্রতিরোধ, আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতা প্রশ্নে তারা আপসহীন।

জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা যেকোনো সংকট কাটিয়ে উঠব: ইরানি প্রেসিডেন্ট

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান মন্ত্রিসভা বৈঠকে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি চলমান সংকট মোকাবিলায় ‘জাতীয় ঐক্য রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা’ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “যদি জনগণ আমাদের পাশে থাকে, তাহলে কোনো সমস্যাই দেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারবে না। এজন্যই আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের লক্ষ্য হওয়া উচিত জাতীয় ঐক্য অটুট রাখা।”

“আমি বিশ্বাস করি, জাতীয় সংহতি ও ঐক্যের মাধ্যমে আমরা যেকোনো সংকট সফলভাবে অতিক্রম করতে পারব।”

তাসনিম বার্তা সংস্থার বরাতে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সহানুভূতি ও সমর্থনের প্রস্তাবের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের এসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব’

পরমাণু বিজ্ঞানী ও জাতিসংঘের পরমাণুবিষয়ক সাবেক পরিদর্শক ডেভিড অ্যালব্রাইটের মতে, ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা ‘ফোরদো’, যা কোম শহরের কাছে পাহাড়ের নিচে ৮০ মিটার (২৬২ ফুট) গভীরে নির্মিত, তা ‘ধ্বংস করা খুব কঠিন’।

আজ বুধবার বিবিসি রেডিও ৫ লাইভ ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এখন ইসরায়েলের আক্রমণের পর, আমি বিশ্বাস করি ইসরায়েল কেবল সেই স্থানটিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ করে দিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে পারে।”

ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির প্রতিষ্ঠাতা অ্যালব্রাইট আরো বলেন, “ফোরদো বিশ্বের ‘খুবই শক্তিশালী’ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু এটি একমাত্র শক্তিশালী স্থাপনা নয়। তাই এটি ধ্বংসযোগ্য নয়, এমন বিশ্বাসে জোর দেওয়া উচিত নয়।”  

আল জাজিরার জর্ডানভিত্তিত সংবাদদাতা নুর ওদেহের মতে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের আকাশে ইসরায়েলি যুদ্ধ বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মন্তব্য করার সময় ‘আমরা’ শব্দটি ব্যবহার করার পর থেকে, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রও যোগ দিতে পারে বলে গুঞ্জন চলছে। 

যুক্তরাষ্ট্র তার ‘বি-৫২ বোমারু’ বিমান ব্যবহার করে ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করবে, এমন সম্ভাবনা নিয়ে উচ্ছ্বাসে মেতেছে ইসরায়েলিরা।

ইসরায়েলিদের কাছে এই সম্ভাবনা কতটা সমর্থন পাচ্ছে, তার একটি ইঙ্গিত হতে পারে আজ বুধবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়েদিওথ আহরোনোথের প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনাম। সংবাদমাধ্যমটির প্রধান খবরে এয়ার ফোর্স ওয়ানে ট্রাম্পের একটি ছবি রয়েছে এবং শিরোনামটি হলো ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট আদেশ দিন’।

ইসরায়েলিদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের এমন সম্পৃক্ততার ব্যাপক প্রত্যাশা রয়েছে। এটিকে এমন কিছু হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা ইসরায়েলের সুবিধার্থে যুদ্ধের অবসান ঘটাবে। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, ট্রাম্প আদেশ না দিলেও, ইসরায়েল নিজ লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাবে।

‘ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের দিকে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র’

ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পদক্ষেপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ওয়াশিংটন ডিসির প্রতিবেদক ফিল লাভেল। 

তার মতে, মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে বা কী বলা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে সেখানে কী আলোচনা হয়েছে তা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে অনুমান করা যেতে পারে। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ রুমে প্রায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় কাটানোর পরে ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ দাবি করেছেন। ট্রাম্প তার শীর্ষ মন্ত্রিসভার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি কয়েকজন শীর্ষ জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এমনকি তিনি জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন, যেখানে তিনি আসলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করছিলেন।

এসব ইঙ্গিত থেকে মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে সব কূটনীতি বা চুক্তির আলোচনা বন্ধ। মনে হচ্ছে, ট্রাম্প কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন। এখন, এটি একতরফা কিনা বা এটি ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে কিনা, তা এখনও দেখার বিষয়।

কিন্তু আসল বিষয়টি হলো, এসব ইঙ্গিতের মানে হচ্ছে- অন্তত এমন কিছু সামনে আসছে। 

ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যালের পোস্টগুলোর দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ট্রাম্প ইরানের সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের কথা বলেন। এমনকি তিনি ইরানের আকাশের ওপর নিয়ন্ত্রণের কথা বলার সময় ‘আমরা’ শব্দটি ব্যবহার ব্যবহার করেন। এটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, এর আগে ইসরায়েল ইরানের আকাশে নিজের উপস্থিতির কথা বলতো। কিন্তু এখন ট্রাম্প ‘আমরা’ শব্দটি ব্যবহার করছেন, যা দেখায় যে, ইরানের বিরুদ্ধে যৌথ সংযোগ রয়েছে।

ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনিকে হুমকি দিয়ে যা বলেছেন, সেখানেও তিনি ‘আমরা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে বলেন, “আমরা জানি আপনি কোথায় আছেন কিন্তু আমরা আপনাকে এখনই হত্যা করব না।”

সুতরাং ট্রাম্প ঠিক কী পদক্ষেপ নিতে চলেছেন, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

ইসরায়েলের পঞ্চম এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি ইরানের

ইসরায়েলের আরেকটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইরান। আজ বুধবার সকালে ইরানের ভারামিনের গভর্নর বলেছেন, তেহরানের দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ভারামিন শহরের কাছে একটি ইসরায়েলি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। খবর তেহরান টাইমসের। 

সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, গভর্নর হোসেইন আব্বাসি বলেছেন, সেনাবাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘খুবই উন্নত যুদ্ধবিমানটিকে’ ভূপাতিত করেছে।

এর আগে ইসরায়েলের আরো চারটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের দাবি করেছিল ইরান। সেই অর্থে দেশটির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইসরায়েল পাঁচটি এফ-৩৫ বিমান হারিয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের সেনা কর্মকর্তারা কোনো বিমান বিধ্বস্তের খবর পায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-৩৫ বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান। অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন, এটি যুদ্ধ ক্ষমতা ও প্রযুক্তি উভয় দিক থেকেই ইতিহাসের সেরা যুদ্ধবিমান। এফ-৩৫ এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, এর ‘স্টিলথ’ ক্ষমতা। এই যুদ্ধবিমানটি এমন আকৃতি ও সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যা রাডার এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং শব্দের গতির চেয়ে সর্বোচ্চ ১.৬ গুণ বেশি গতিবেগে ছুটতে পারে।

ইরানের তুলনায় ৫ গুণ বেশি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল: পর্যবেক্ষক সংস্থা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিরক্ষা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ক্রিটিকাল থ্রেটস প্রজেক্ট এবং ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (সিটিপি-আইএসডাব্লিউ) জানিয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ইরানের বিভিন্ন স্থানে, ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে ইরানের হামলার তুলনায় পাঁচগুণ বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে।

সিটিপি-আইএসডব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ১৩ জুন ইরানের ওপর ইসরায়েলের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা ইরানের ওপর ১৯৭টি বিমান হামলার রিপোর্ট বা নিশ্চিতকরণ তথ্য পাওয়া গেছে। বিপরীতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলো ইসরায়েলে ৩৯টি ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বা ইন্টারসেপ্টর আঘাতের রিপোর্ট বা নিশ্চিতকরণ তথ্য পেয়েছে।

সিটিপি-আইএসডব্লিউ সম্প্রতি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আকার সীমিত হয়ে আসার বিষয়টি লক্ষ্য করেছে। ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ও ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণাগার ধ্বংস হওয়াটাকে এর কারণ বলে ধারণা করা হয়েছে। 

ইসরায়েলের বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি ইরানের

বুধবার ভোরে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মধ্য ইসরায়েলের একটি এলাকায় আগুন লেগেছে। ইরানের ফার্স নিউজ জানিয়েছে, লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে একটি ছিল উত্তর ইসরায়েলে অবস্থিত মেরন বিমানঘাঁটি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, মেরন বিমানঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে কিনা, তার কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই।

ইসরায়েলে যুদ্ধকালীন সময়ে সামরিক সেন্সরশিপ থাকে এবং যদি সংবেদনশীল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়, তাহলে সংবাদমাধ্যমগুলোকে তা প্রকাশ করার অনুমতি দেওয়া হয় না।  

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের হার্জলিয়া এলাকায় সরাসরি আঘাত হেনেছিল। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, সেখানে একটি বাসে আগুন লেগেছে। তবে ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, হামলাস্থলটি ইসরায়েলের একটি সামরিক স্থাপনা ছিল। 

ইরানের পারমাণবিক সেন্ট্রিফিউজ ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় হামলা

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গত কয়েক ঘণ্টায় তাদের ৫০টিরও বেশি যুদ্ধ বিমান ইরানে একটি বড় আক্রমণ চালিয়েছে। এসব হামলায় ইরানের একটি ‘সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র’- যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ও বেশ কয়েকটি অস্ত্র উৎপাদন কারখানাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। 

টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরো বলেছে, এই হামলা ‘সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে’ পরিচালিত হয়েছে, যা দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা সরবরাহ করেছে। খবর আল জাজিরার।

সেনাবাহিনীর দাবি, এই হামলা ছিল ‘ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে ধ্বংস করতে পরিচালিত একটি বৃহৎ প্রচেষ্টার অংশ’।

তবে ইরান বারবার দাবি করে এসেছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। জাতিসংঘের পারমাণবিক তদারকি সংস্থা আইএইএ এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সর্বশেষ প্রতিবেদনে একই ধরনের মূল্যায়ন করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে আরো বলা হয়, তারা এমন সব উৎপাদন কারখানাকেও লক্ষ্য করেছে, যেখানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের কাঁচামাল ও উপাদান তৈরি করা হতো।

ইসরায়েলি হামলায় ইরানে ৫৮৫ জন নিহত: মানবাধিকার সংগঠন

ইরানে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৮৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস।

সংগঠনটি আরো জানায়, নিহতদের মধ্যে ২৩৯ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১২৬ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। এছাড়া, হামলায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩২৬ জন।  

তবে ইরান সরকার এখনও নিয়মিতভাবে হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করছে না। সর্বশেষ সোমবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ২৭৭ জন আহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল।

ইংল্যান্ডের মার্কিন ঘাঁটি থেকে বেরিয়েছে ৪টি যুদ্ধবিমান

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কার মধ্যেই পূর্ব ইংল্যান্ডের মার্কিন ঘাঁটি থেকে বেরিয়েছে চারটি যুদ্ধবিমান। 

বুধবার (১৮ জুন) ভোরে রয়্যাল এয়ারফোর্স লেকেনহিথ থেকে অন্তত চারটি এফ ৩৫ বিমান ঘাঁটি ছেড়েছে বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে। এই বিমানগুলোর সঙ্গে ছিল একটি জ্বালানির ট্যাংকার বিমানও।

এছাড়া, ইরানের মাটির গভীরে তৈরি স্থাপনায় হামলা করতে পারে যে বি টু স্পিরিট বোম্বার বিমান, সেগুলোও ভারত মহাসাগরে ইরান থেকে চার হাজার কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে একটি ঘাঁটিতে রাখা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

গত তিন দিনে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৩০টি মিলিটারি বিমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্পেইন,  স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এসব বিমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে ইউরোপে নেওয়া হয়েছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে, বিবিসির মার্কিন সহযোগী সিবিএস নিউজের সূত্র বলছে, ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের কেন্দ্রগুলোতে হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

এমন পরিস্থিতিতে বুধবার ভোরে ইরানের শীর্ষ নেতা আলী খামেনি বলেছেন, ইরান জায়নিস্টদের সঙ্গে সমঝোতা করবে না।

মঙ্গলবার রাতে ‘এক্স’ বার্তায় খামেনি লিখেছেন, “আমাদের সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দিতে হবে। আমরা ইহুদিবাদীদের কোনো দয়া দেখাব না।” 

এর আগে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বিষয়ে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে দেন। সেখানে তিনি বলেন, “আমরা ঠিক জানি তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ নেতা’ কোথায় লুকিয়ে আছেন।” 

এর আগে দেওয়া আরেক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “ইরানের আকাশসীমা আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এই পোস্ট দুটির পরপরই তৃতীয় আরেকটি পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উল্লেখ করেন, তিনি ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চান।

ট্রাম্পের এসব মন্তব্যের পরপরই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন খামেনি।

তেহরানে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা

ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে টানা ষষ্ঠ দিনের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলা চলছে। স্থানীয় সময় বুধবার ভোর ৫টার দিকে ইরানের রাজধানী তেহরানে একাধিক বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডএফ) বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী তেহরানে ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সঙ্গে সম্পর্কিত ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়কে লক্ষ্যবস্তু করেছে। 

ইরানি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। 

ইসরায়েলি বাহিনী আগেই সতর্ক করে বলেছিল যে, তারা মেহরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে একটি এলাকায় হামলা চালাতে পারে, যার মধ্যে আবাসিক এলাকা, সামরিক স্থাপনা, ওষুধ কোম্পানি এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ইরানি সংবাদমাধ্যমগুলো তেহরানের ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়কে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সঙ্গে যুক্ত। 

এদিকে মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এরপরপই ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। 

ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের মুখপাত্র কর্নেল ইমান তাজিক বলেছেন, “আজ রাতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দেখিয়েছে যে আমরা ইসরায়েলের অধিকৃত অঞ্চলের আকাশের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছি এবং এর বাসিন্দারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।”

টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইসরায়েল তার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ভূপাতিত করেছে, তবে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে দেশটিতে আঘাত হেনেছে।

খামেনির ‘যুদ্ধ’ ঘোষণার পর ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানের

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি মঙ্গলবার রাতে ‘যুদ্ধ শুরু’ ঘোষণার পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রতি ‘কোনো দয়া না দেখানোর’ আহ্বান জানানোর পর, ইরান ইসরায়েলে দুই দফা ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে ইসরায়েলের বিশাল অংশ জুড়ে প্রথম হামলায় সাইরেন বাজতে শুরু করে এবং হামলায় প্রায় ১৫টি প্রজেক্টাইলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রায় ৪০ মিনিট পরে প্রায় ১০টি রকেটের পরবর্তী হামলা শুরু হয়।

হামলার কয়েক মিনিট আগে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করে এবং আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

ইরানের পরপর হামলায় কোনো আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে মধ্য ইসরায়েলের একটি পার্কিং লটে বিস্ফোরণে অসংখ্য গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বিস্ফোরণ সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত কারণে নাকি ইসরায়েলি বাধার ফলে ধ্বংসাবশেষের কারণে লেগেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।

ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) পরবর্তীতে ইসরায়েলে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার দাবি করেছে।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: জাতিসংঘকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত থামাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। 

বুধবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বলেছেন, “দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনতে ‘জরুরি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।”

তিনি বলেন, “সংঘাতটি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় এবং তা আরো ভয়াবহ পরিণতির দিকে না গড়ায়, সেজন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অপরিহার্য।”

‘বেপরোয়া ও ভুল কোনো পদক্ষেপ’ এই সংঘাতকে ইসরায়েল ও ইরানের সীমা ছাড়িয়ে পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সময় থাকতে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানো জরুরি।” 

এর আগে, সৌদি আরব, কাতার, জর্ডানও সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। 

যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন খামেনি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির পর মুখ খুলেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “যুদ্ধ শুরু হলো।” কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। 

খামেনির এই ঘোষণাটি এসেছে এমন এক সময়, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের শীর্ষ নেতাকে নিয়ে একাধিকবার মন্তব্য করেছেন। 

মঙ্গলবার রাতে ‘এক্স’ বার্তায় খামেনি লিখেছেন, “আমাদের সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দিতে হবে। আমরা ইহুদিবাদীদের কোনো দয়া দেখাব না।” 

এর আগে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বিষয়ে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে দেন। সেখানে তিনি বলেন, “আমরা ঠিক জানি তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ নেতা’ কোথায় লুকিয়ে আছেন।” 

এর আগে দেওয়া আরেক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “ইরানের আকাশসীমা আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এই পোস্ট দুটির পরপরই তৃতীয় আরেকটি পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উল্লেখ করেন, তিনি ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চান। 

মূলত ট্রাম্পের এসব মন্তব্যের পরপরই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ শুরুর’ ঘোষণা দিলেন খামেনি। 

ঢাকা/ফিরোজ/ইভা/রাসেল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়