ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক ঘিরে ‘অস্বস্তি’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৯, ২০ জুন ২০২৫   আপডেট: ০৮:৩২, ২১ জুন ২০২৫
পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক ঘিরে ‘অস্বস্তি’

হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে পাশে নিয়ে মধ্যাহ্নভোজে ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির বৈঠককে কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে উপস্থাপন করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। কিন্তু  এমন এক সময় এই বৈঠক হলো, যখন ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়ার কথা ভাবছেন এবং যা পাকিস্তান শুরু থেকেই সমর্থন করেনি।

ইসরায়েলকে সমর্থন করছেন ট্রাম্প। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে হামলা চালাচ্ছেন তারা। এই হামলাকে ‘বর্বরোচিত’ বলে বর্ণনা করেছে পাকিস্তান।

আরো পড়ুন:

ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাতের কারণে ইরান থেকে প্রায় তিন হাজার নাগরিককে ফিরিয়ে আনতে একটি বড় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। পাকিস্তান ও ইরান সীমান্তবর্তী দেশ।

অবশ্য ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা ঘনিষ্ঠ হয়েছে।

ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের আমলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট যেখানে একটি ফোন কলও পাননি, সেখানে এখন হোয়াইট হাউজে সরাসরি বৈঠক হচ্ছে, এটা স্পষ্টভাবেই একটা অগ্রগতি।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইরান নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে কী আলোচনা হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। তাই পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠেছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট প্রশ্ন ছিল, “ওই কক্ষে কি কোনো বেসামরিক রাজনীতিক ছিলেন?” এরপর প্রশ্ন ছিল, “তাহলে আমরা কি গণতান্ত্রিক দেশ?”

হালকা হাস্যরসের মধ্যে মুখপাত্র জবাব দেন, “পাকিস্তান নিঃসন্দেহে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।”

এরপর ফিল্ড মার্শালের বৈঠক সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে বিদেশি সাংবাদিকদের সেনাবাহিনীর কাছে যেতে বলেন তিনি।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ থিঙ্ক ট্যাংক, কৌশলগত প্রতিষ্ঠান এবং নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। 

এ বিষয়ে দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর-আইএসপিআর এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই আলোচনা ছিল খোলামেলা এবং ব্যাপক। এতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ গবেষক, বিশ্লেষক, নীতি-নির্ধারক এবং প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।”

উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠকে পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, কৌশলগত সহযোগিতা এবং মধ্যপ্রাচ্যসহ দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির বর্তমানে পাঁচ দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সফরের অংশ হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের সময় সরাসরি বৈঠক করেছেন। এটি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন কর্মরত পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের সঙ্গে একজন ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি বৈঠক।

সেনাপ্রধানের সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ আসিম মালিক। এই যুগল অংশগ্রহণ কূটনৈতিকভাবে একটি শক্ত বার্তা বহন করে; পাকিস্তান চাচ্ছে নিরাপত্তা, গোয়েন্দা সহযোগিতা এবং কৌশলগত সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বৈঠক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

অন্যদিকে, এই সফর রাজনৈতিকভাবেও অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে আগে ট্রাম্পের সঙ্গে এমন এক উচ্চপর্যায়ের সামরিক বৈঠক ঘিরে। বেসামরিক নেতৃত্বকে পাশ কাটিয়ে ট্রাম্প কেন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানালেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

ঢাকা/রাসেল

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়