ঢাকা     শনিবার   ১১ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৮ ১৪৩১

‘পড়াশোনা করতে পাঠিয়ে কেউ সন্তানের লাশ দেখতে চায় না’

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২১, ১ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:২৯, ১ নভেম্বর ২০২০

বাসচালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের নির্মমতায় নিহত বিশ্ববিদ‌্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েলের মা কহিনূর বেগম বলেছেন, ‘মা-বাবারা অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করতে পাঠায়। কেউ সেই সন্তানের লাশ দেখতে চায় না।’

রোববার (১ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল হত্যা মামলায় হানিফ পরিবহনের বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় উল্লিখিত কথাগুলো বলেছেন পায়েলের মা।

আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পায়েলের বাবা গোলাম মওলা ও মা কহিনূর বেগম। দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তারা।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন পায়েলের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুরা। বিচারক দুপুর পৌনে ১টায় এজলাসে ওঠেন। সাক্ষ্যসহ অন্যান্য বিষয় সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করা হয়। রায় ঘোষণার সময় পায়েলের বাবা-মাকে বারবার চোখের পানি মুছতে দেখা যায়।

রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ এবং হুজ্জাতুল ইসলাম খান অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তারা বলেছেন, ‘এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। আসামিরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।’

তারা আরও বলেন, ‘মামলায় প্রত্যক্ষ কোনো সাক্ষী নেই। দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে রায় দেওয়া হয়েছে। ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। পায়েলের মোবাইল ফোন তার বন্ধুর কাছে পাওয়া গেছে। পায়েলের মোবাইল ফোন তার কাছে কীভাবে গেল? মামলায় সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতো। বাসে ৩২ জন যাত্রী ছিলেন। কিন্তু পায়েলের দুই বন্ধু বাদে আর কোনো যাত্রীকে সাক্ষী করা হয়নি। পায়েলের সেই ফোনটিও জব্দ করা হয়নি। লোকদেখানো রায় হয়েছে। মিডিয়া ট্রায়াল হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধুর সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর নিখোঁজ হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান পায়েল। নিখোঁজের এক দিন পর ২২ জুলাই মুন্সীগঞ্জের ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে পায়েলের লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ২৪ জুলাই পায়েলের মামা গোলাম সোহরাওয়ার্দী বিপ্লব মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামিরা জানায়, গজারিয়া এলাকায় গাড়ি যানজটে পড়ায় প্রস্রাব করার কথা বলে বাস থেকে নেমেছিলেন পায়েল। বাস চলতে শুরু করলে তিন দৌড়ে এসে ওঠার সময় দরজার সঙ্গে ধাক্কা লেগে জ্ঞান হারান। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার বদলে মুখ থেঁতলে দিয়ে ভাটেরচর সেতু থেকে নিচের খালে ফেলে দেন এবং বাস নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন আসামিরা।

ঢাকা/মামুন/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ