শিশু আসিফ এখন লেগুনার হেলপার
সাইফুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম
আসিফের বয়স মাত্র ৭ বছর। এ বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার কথা। কিন্তু শিশু বয়সেই পরিবারের ঘানি টানতে হচ্ছে তাকে। আসিফ এখন লেগুনার হেলপার। সারাদিন হেলপারি করে যা পায় তা তুলে দেয় অভাবী মায়ের হাতে।
বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপরে রাজধানীর মিরপুর-১ এ লেগুনায় হেলপারি করতে দেখে তার সাথে কথা বলে জানা যায় তার জীবনের কথা।
ছয় মাস ধরে এ এলাকায় লেগুনার হেলপারি করছে আসিফ। প্রতিদিন তার আয় হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। তার ভাষায়, 'ওস্তাদে ১৫০ টাকা করে প্রতিদিন দেয়। এই টাকা দিয়ে প্রতিদিন যা খেতে ইচ্ছে করে তাই খাই, আর বাকি টাকা মার কাছে দিয়ে আসি।'
আসিফকে নিয়ে তার মা রাহেলা বেগম থাকেন ছোট দিয়াবাড়ির একটি বস্তি এলাকায়। বছর চার আগে ট্রাক চাপায় মারা যায় আসিফের রিকশাচালক বাবা। সেই থেকে অন্যের বাসায় কাজ করে চলে রাহেলার সংসার। বুঝতে শেখার পর নিজেই বন্ধুদের হাত ধরে ঢুকে পড়েছে এই কাজে। ছেলেকে লেখাপড়া করানোর ইচ্ছা থাকলেও বাধা দেননি রাহেলা।
তিনি বলেন, 'চাইছিলাম পোলাডারে পড়ামু, কিন্তু যাদের পেট চলে না তাদের আবার পড়ালেখা। অন্তত নিজের খরচ তো চালাইতে পারে।'
আসিফের মতো অসংখ্য শিশু জীবিকার প্রয়োজনে বাধ্য হয়েছে রাস্তায় নামতে, বেছে নিতে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। বাংলাদেশে শিশুশ্রম অবৈধ হলেও রাজধানীর বেশিরভাগ লেগুনার হেলপারই শিশু। মূলত কম বেতনে লোক খাটানোর জন্যই বেছে নেওয়া হয় শিশুদের।
লেগুনা ড্রাইভারদের মতে, লেগুনায় আয় অল্প। সেই অল্প আয়ের মধ্যে একজন পূর্ণবয়স্ক হেলপার রাখা সম্ভব না। কারণ, লেগুনার হেলপারদের যে বেতন দেওয়া হয় তাতে তাদের চলে না। এজন্য অনেক ড্রাইভার হেলপার ছাড়াই লেগুনা চালান।
চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও রাজধানীর কয়েকটি রুটে এখনো লেগুনা চলছে। একইসাথে রাজধানীর আশেপাশের বেশ কয়েকটি রুটেও চলছে লেগুনা। এসব লেগুনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে কয়েক হাজার শিশু।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর সর্বশেষ জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা ২০১৩ অনুযায়ী দেশে প্রায় ৩৪ লাখ শিশু বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। যার মধ্যে ১৭ লাখ শিশু রয়েছে যাদের কাজ শিশুশ্রমের আওতায় পড়ে। এর মধ্যে প্রায় ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশুর কাজই ঝুঁকিপূর্ণ।
২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিশুশ্রম নির্মূল নীতিমালা অনুযায়ী ২০১৬ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নির্মূল করার কথা থাকলেও আসিফদের মতো হাজারো শিশু পেটের দায়ে ঝুলছে লেগুনার পিছনে। সরকারের যথাযথ পদক্ষেপই পারে এসব শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে মুক্তি দিয়ে শিক্ষার আলোয় তাদের জীবন আলোকিত করতে।
ঢাকা/টিপু
আরো পড়ুন