ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

লেখালেখি-মত প্রকাশ বন্ধ করতে অভিজিৎকে হত্যা: ট্রাইব্যুনাল

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২০, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৪:২১, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
লেখালেখি-মত প্রকাশ বন্ধ করতে অভিজিৎকে হত্যা: ট্রাইব্যুনাল

স্ত্রীর সঙ্গে অভিজিৎ রায়

স্বাধীনভাবে লেখালেখি ও মত প্রকাশ বন্ধ করতে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়।  মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান অভিজিৎ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন।

পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, অভিজিৎ রায় একজন বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার ছিলেন। বাংলা একাডেমির বইমেলায় বিজ্ঞানমনস্ক লেখকদের আড্ডায় অংশগ্রহণ করে ফেরার পথে আক্রমণের শিকার হন। নাস্তিকতার অভিযোগ এনে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা (অর্থাৎ মামলার অভিযুক্তরাসহ মূল হামলাকারী) অভিজিৎ রায়কে নৃশংসভাবে হত্যা করে। স্বাধীনভাবে লেখালেখি ও মত প্রকাশের জন্য অভিজিৎ রায়কে নিজের জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হয়।  অভিজিৎ রায়কে হত্যার উদ্দেশ্য হলো জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ এবং নিরুৎসাহিত করা যাতে ভবিষ্যতে কেউ স্বাধীনভাবে লেখালেখি ও মত প্রকাশ না করতে পারে।

বিচারক বলেন, বাংলাদেশের জন নিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে জনগনকে মতামত প্রকাশ ও স্বাধীন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে অভিযুক্ত আসামিদের অভিন্ন অভিপ্রায় ছিল বিজ্ঞান মনস্ক ব্লগার অভিজিত রায়কে হত্যা করা। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত আসামিদের কারো ভূমিকা ছোট বড় করে দেখার সুযোগ নেই। যেহেতু অভিযুক্ত ৫ আসামি মেজর জিয়া, আকরাম হোসেন, আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হুসাইন ও আরাফাত রহমান আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে সাংগঠনিকভাবে অভিজিৎ রায় হত্যায় গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে।  এ জন্য ৫ আসামির একই সাজা দেওয়া হবে বাঞ্চনীয়।

তিনি বলেন, অভিজিৎ রায় হত্যায় অংশ নেওয়া অভিযুক্ত আসামিরা বেঁচে থাকলে আনসার আল ইসলামের বিচারের বাইরে থাকা সদস্যরা একই অপরাধ করতে উৎসাহী হবে এবং বিজ্ঞান মনস্ক ও মুক্তমনা লেখকরা স্বাধীনভাবে লিখতে এবং মতামত প্রকাশ করতে সাহস পাবে না। কাজেই আসামিরা কোনো সহানুভূতি পেতে পারে না।  সেজন্য মেজর জিয়া, আকরাম হোসেন, আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হুসাইন ও আরাফাত রহমানকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। এতে একদিকে নিহতের আত্মীয়রা শান্তি পাবে এবং মুক্তমনা লেখকরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশে সাহস পাবে। অন্যদিকে ভবিষ্যতে এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করতে ভয় পাবে এবং নিরুসাহিত হবে।

উল্লেখ‌্য, অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় ৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।  অন‌্য একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবুর রহমান এ আদেশ দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, মো. আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহা, মো. আরাফাত রহমান, সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া (বরখাস্ত) এবং আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে হাসিবুল ওরফে আবদুল্লাহ।

মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। শাফিউর রহমান ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মামুন/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়