ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

টিকটক: নেপথ্যে ভয়ঙ্কর অপরাধ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০১, ৪ জুন ২০২১   আপডেট: ১৮:০৩, ৪ জুন ২০২১
টিকটক: নেপথ্যে ভয়ঙ্কর অপরাধ

সম্প্রতি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় ভারতে গ্রেপ্তার কয়েকজন: ছবি টাইমস অব ইন্ডিয়া

গ্রুপ খুলে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ ভিডিও পোস্ট, সেই ভিডিওতে কোনো তরুণী কিংবা কিশোরী লাইক, কমেন্ট শেয়ার করলে তাকে টার্গেট করে টিকটকাররা। প্রলোভন দেখানো হয় মডেল-স্টার কিংবা অভিনেত্রী বানানোর। এরপরই প্রলোভনে পা দেওয়া তরুণী-কিশোরীর ওপর নেমে আসে ভয়ংকর সর্বনাশ। ভারতে নির্মমতার শিকার এক তরুণীর তদন্ত করতে গিয়ে এমনটি পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আরও পড়ুন: তরুণী ধর্ষণ: ভারতে ৫ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

শুক্রবার (৪ জুন) তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, সম্প্রতি ভারতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে যৌন নির্যাতন ও পরবর্তী সময়ে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ ভিডিও বানিয়ে অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগে প্রায় শতাধিক টিকটকারকে চিহ্নিত করা হয়েছে।  তাদের কর্মকাণ্ড শুরু থেকেই কিশোরী কিংবা তরুণী পাচার করার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। মূলত তাদের মডেল কিংবা স্টার বানিয়ে প্রলোভন দেখানো হয়। যা আমরা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করেছি।  কিন্তু ভুক্তভোগীর অভিযোগ না পাওয়ায় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।  তবে এখন শুধু পুলিশই নয়, পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট এ বিষয়ে বিশেষভাবে কাজ করছে।  যারা  টিকটকের নামে অশ্লীল ভিডিও তৈরি, নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে গ্রেপ্তারে আইনের আওতায় আনা হবে।

সম্প্রতি ভারতে তিন মাস পাচারের পর কৌশলে পালিয়ে দেশে আসে পাচার হওয়া এক তরুণী।  ভুক্তভোগী পরে ১২ জনকে আসামি করে হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার ও প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন। 

আরও পড়ুন: তরুণীকে পৈশাচিক নির্যাতন: নারী পাচার চক্রের ৪ সদস্য রিমান্ডে

তরুণীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পায়, প্রথমে টিকটক গ্রুপ খুলে সেখানে পোস্ট করা হয় অশ্লীল ভিডিও।  ভিডিওতে যেসব কিশোরী কিংবা তরুণী লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করে তাদের টার্গেট করা হয়।  তাদের টিকটক ভিডিও তৈরি করে জনপ্রিয়তা বাড়ানোর প্রলোভন দেখানো হতো। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশের হোটেল, বিউটি পার্লার, সুপারসহ নামিদামি বিদেশি কোম্পানির চাকরির প্রলোভন দেখায় পাচারকারী টিকটকাররা। পরে কোন তরুণীকে উশৃঙ্খল জীবনে আকৃষ্ট বা অভ্যস্ত করে ফেলা হয়।  তার ইচ্ছার বাইরে জোর করে যৌন কিংবা পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য  করা, বিভিন্ন খদ্দেরের কাছে পাঠানো, দিনের পর দিন আটকে রাখাসহ নানা অত্যাচার করা হয় পাচারকৃত তরুণী নারীদের।

এরকম আরও ৫ শতাধিক নারীকে পাচারের তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। বস রাফিসহ ৪ নারী পাচারকারীকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার মঈন আলী গণমাধ্যমকে জানান। 

আরও পড়ুন: টিকটকের আড়ালে অপরাধ

তিনি বলেন, মডেল-অভিনেত্রী বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে সহজ-সরল, অভাবী পরিবারের সুন্দরী তরুণীদের টার্গেট করা হয়। পাচারকারীরা পরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, ভারতে আকর্ষণীয় চাকরির কথা বলে প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিনিয়ত পাচার করছে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের নেটওয়ার্ক। যার সঙ্গে জড়িত টিকটক হৃদয় বাবুসহ আরও অনেকে। এ কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ যেকোন মাধ্যমে প্রতারকদের ফেলে রাখা ফাঁদে কোন সহজ সরল তরুণী-কিশোরী যেন না দেয় সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।  পাশাপাশি এরকম ভিডিও বানানো বিশেষ করে টিকটক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানা থাকলে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও জানাতে হবে।
 

মাকসুদ/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়