ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নভেম্বরেই আবরার হত্যা মামলার রায়, আশা রাষ্ট্রপক্ষের 

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ৬ অক্টোবর ২০২১  
নভেম্বরেই আবরার হত্যা মামলার রায়, আশা রাষ্ট্রপক্ষের 

আবরার ফাহাদ (ফাইল ফটো)

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত‌্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, এই বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মামলাটির বিচার শেষ হবে।

২০১৯ সালের এই দিনে (৬ অক্টোবর) শিবিরের তকমা লাগিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে আবরারকে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরদিনই নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। ৩৭ দিনে মামলাটির তদন্ত শেষ করে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ গত ২০ সেপ্টেম্বর মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু বিচারক করোনায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ থাকায় তা পিছিয়ে আগামী ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মনির কামাল।

মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইঞা বলেন, ‘মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য গত বছর আমাদের আদালতে পাঠানো হয়। আমরাও সেভাবে শুরু করেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে আদালত কয়েক মাস বন্ধ থাকায় কার্যক্রম হয়নি। এরপর আবার মামলাটির বিচার শুরু হয়। আমরা সাক্ষীদের আদালতে হাজির করে সাক্ষ্যগ্রহণ করি। কিন্তু আবারও করোনার কারণে আদালত বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে মামলার বিচার কিছুটা পিছিয়ে যায়। এখন মামলাটির যুক্তিতর্ক চলছে। এরই মাঝে বিচারক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এজন্য কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। আগামী ২০ অক্টোবর মামলাটির তারিখ ধার্য আছে। আমরা সেদিন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যুক্তি তুলে ধরবো। এরপর আসামিপক্ষ যুক্তি তুলে ধরবেন। আশা করছি, সবকিছু ঠিক থাকলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে মামলাটির রায় হবে। আমরা কাঙ্খিত একটা রায় পাবো। ভূক্তভোগী পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘এটা একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ তাকে হত্যা করতে চায়নি। আসামিদের এমন ইনটেনশন ছিলো না। অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটনাটি ঘটে গেছে। মামলার বিচার প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটা একটা সেনসিটিভ মামলা। তবে আমরা আশা করছি, আসামিরা খালাস পাবেন।’

মেহেদী হাসান, জিয়ন ও মোর্শেদ অমত্যর আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, ‘এ মামলায় ৪৬ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। তবে কোনো সাক্ষীই বলেননি মেহেদী ও আমত্য এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কাজেই আমি মনে করি, তাদের সাজা দেওয়ার কোনো স্কপ নেই। আর জিয়নকে নির্যাতন করে জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক আদায় করা হয়েছে। তাই আমি আশা করছি, মামলাটিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। রায়ে আসামিরা খালাস পাবেন।’

আবরার হত‌্যা মামলায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান মাত্র ৩৭ দিনে অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর এজাহারভুক্ত ১৯ জনসহ ২৫ জন বুয়েট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিট দাখিলের সময় ২৫ আসামির মধ্যে চার জন পলাতক ছিলেন। চার্জশিট দাখিল হওয়ার পর প্রথমে সিএমএম আদালত ওই চার আসারি বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং পরবর্তীতে সম্পত্তি ক্রোকাদেশ এবং শেষে অনুপস্থিতিতে বিচারের বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন। ওই বছর ১৮ নভেম্বর থেকে চলতি বছর ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ওইসব প্রক্রিয়ার মধ্যে গত বছর ১২ জানুয়ারি বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র মোর্শেদ অমত্য ইসলাম সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর অপর ৩ আসামি পলাতক থাকাবস্থায়ই চলতি বছর ১৫ জানুয়ারি মামলার নথি সিএমএম আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজের বিচারিক আদালতে যায়। সেখানে ৫ দিন পর অর্থাৎ ২১ জানুয়ারি মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট আমলে নিয়ে ৩০ জানুয়ারি চার্জগঠনের শুনানির দিন ঠিক করেন। কিন্তু ওই ধার্য তারিখে জানানো হয়, মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাবে তাই চার্জগঠনের কার্যক্রম স্থগিত রাখেন। এরপর প্রজ্ঞাপন জারি হতে বিলম্ব হওয়ায় চলতি বছর ১৮ মার্চ পর্যন্ত মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে থাকে। প্রজ্ঞাপন হলে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ চলতি বছর ৬ এপ্রিল চার্জগঠনের শুনানির দিন ধার্য করে বদলির আদেশ দেন মহানগর দায়রা জজ আদালত। তবে ৬ এপ্রিলের আগেই করোনার কারণে দেশের সব আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আগস্ট মাসে সরকার আদালত খুলে দেওয়ায় গত ২ ও ৯ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল এ মামলায় চার্জগঠনের শুনানির পর গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ২২ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করেন এবং পলাতক ৩ আসামিসহ ২৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন।

মামলাটিতে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। গত ১৪ মার্চ এ মামলায় কারাগারে থাকা ২২ আসামি আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। অপর তিন আসামি পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ শুনানি করতে পারেননি। এরপর কয়েকজন আসামি নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যও দেন। কিন্তু এই মামলার চার্জ গঠনের সময় কিছু অংশ বাদ গিয়েছিল। এজন্য গত ৭ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে পুনরায় চার্জগঠনের আবেদন করা হয়। আদালত ৮ সেপ্টেম্বর ২৫ আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় চার্জগঠনের আদেশ দেন। ১৪ সেপ্টেম্বর কারাগারে থাকা ২২ আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে। তবে তা শেষ হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষ শুরু করবে। এরপর আদালত মামলাটির রায় ঘোষণা করবেন।

আসামিরা হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার ওরফে অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না,কর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মো. মুজাহিদুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ। আসামিদের মধ্যে প্রথম ২২ জন কারাগারে আছেন। শেষের তিনজন পলাতক। আর ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়