ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বিমানবন্দরকেন্দ্রিক অজ্ঞান পার্টির ৪ সদস্য গ্রেপ্তার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৩, ২ অক্টোবর ২০২২  
বিমানবন্দরকেন্দ্রিক অজ্ঞান পার্টির ৪ সদস্য গ্রেপ্তার

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার বিমানবন্দরকেন্দ্রিক অজ্ঞান পার্টির ৪ সদস্য

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিন শতাধিক প্রবাসীকে কৌশলে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করেছে একটি চক্র। ওই চক্রের নেতা আমির হোসেনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুট করা সোনা ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

রোববার (২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, শনিবার (১ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর বিমানবন্দর ও কদমতলী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টি চক্রের মূল হোতা মো. আমির হোসেন, মো. লিটন মিয়া ওরফে মিল্টন, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে পারভেজ এবং জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই চক্রের সদস্য ৮-১০ জন। তারা ১৫ বছর ধরে বিমানবন্দরে এ অপকর্ম করছে। আমিরের বিরুদ্ধে ১৫টির বেশি মামলা আছে।

অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনালে ওঁত পেতে থাকে এবং বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করে। বিমানবন্দরের টার্মিনালে হাতে পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে প্রবাসফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণ করে তারা। এটি মূলত তাদের একটি কৌশল। পরে চক্রটি এমন প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করে, যাদের জন্য অপেক্ষমান কোনো আত্মীয়-স্বজন বা গাড়ি নেই। তারা কৌশলে বিদেশফেরত ব্যক্তির সঙ্গে কুশল বিনিময় করে চক্রের অন্য সদস্যদের তাদের কাছে আত্মীয় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে টার্গেটকৃত ব্যক্তির এলাকার মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। সবাই একসঙ্গে বাসের টিকেট কেটে যাত্রা শুরু করে। গাড়িতে ভ্রমণের সময় চক্রের সদস্যরা টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে কৌশলে চেতনানাশক ওষুধমিশ্রিত বিস্কুট খাইয়ে অচেতন করে। যাবতীয় মালামাল লুট করে নিয়ে চক্রের সদস্যরা পরবর্তী স্টেশনে নেমে যায়।

২ সেপ্টেম্বর ভোরে কুয়েত প্রবাসী এক ব্যক্তি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। চক্রটির এক সদস্য বিমানবন্দর থেকে তাকে অনুসরণ করতে থাকে। তারা উত্তরবঙ্গে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আজিমপুর বাস স্ট্যান্ডে এসে পৌঁছায়। বাস কাউন্টারে টিকেট কাটতে গেলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা প্রবাসী যাত্রীর ছদ্মবেশ নিয়ে থাকা আমির হোসেন জানায়, তার কাছে একটি অতিরিক্ত টিকেট আছে। আগে থেকে সাজিয়ে রাখা একটি লাগেজ ও কিছু কুয়েতি দিনার দেখিয়ে সে ওই ব্যক্তিকে আশ্বস্ত করে যে, সে নিজেও প্রবাসফেরত। আমির হোসেনকে বিশ্বাস করে তার কাছ থেকে টিকেট কিনে পাশের সিটে বসে বগুড়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে ওই কুয়েতফেরত ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর চক্রের মূল হোতা আমির হোসেন ওই ব্যক্তিকে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাইয়ে দেয়। বিস্কুট খাওয়ার কিছুক্ষণ পর অজ্ঞান হয়ে যায় সেই প্রবাসফেরত ব্যক্তি। চক্রটি তার সব মালামাল ও সম্পদ লুট করে নিয়ে পথে নেমে যায়। পরে বাসের সুপারভাইজার তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে।

র‌্যাব জানায়, আমির হোসেন বিমানবন্দরকেন্দ্রিক অজ্ঞান পার্টি চক্রের মূল হোতা। সে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সে বিমানবন্দর এলাকায় একটি ফাস্টফুডের দোকানে চাকরির আড়ালে ১৫ বছর ধরে এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এই দীর্ঘ সময়ে সে প্রায় ৩০০ জনকে অজ্ঞান করে তাদের কাছ থেকে মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়েছে। ওই চক্রের একাধিক সদস্য বর্তমানে কারাগারে আছে।

চক্রের সদস্য লিটন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। সে মাইক্রোবাসের চালকের পেশার আড়ালে ৩-৪ বছর ধরে আমিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। ইতোপূর্বে সে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। বিভিন্ন সময় চক্রটি কৌশলে প্রবাসী যাত্রীদের মাইক্রোবাসে পরিবহন করে সর্বস্ব লুট করে নেয়। তখন সে মাইক্রোবাসের চালনার দায়িত্বে থাকে। এছাড়া, সে বিভিন্ন সময় বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের অনুসরণের কাজ করে থাকে। চক্রের অপর সদস্য পারভেজ ৮-৯ বছর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করত। ৬-৭ বছর আগে নিজেই রাজধানীর শ্যামপুরে জুয়েলারির দোকান প্রতিষ্ঠা করে। জুয়েলারি দোকানের আড়ালে সে ২-৩ বছর যাবত চক্রটির লুটকৃত স্বর্ণ গ্রহণ, রূপান্তর ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। জাকির হোসেন ছাপাখানার ঠিকাদার। ৩-৪ বছর আগে আমিরের মাধ্যমে এ চক্রে যোগ দেয় সে। সে লুটকৃত স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য মালামাল রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত।

মাকসুদ/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়