ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গ্রেপ্তার ৭ জন নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য: র‍্যাব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ৬ অক্টোবর ২০২২   আপডেট: ১৩:৫৭, ৬ অক্টোবর ২০২২
গ্রেপ্তার ৭ জন নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য: র‍্যাব

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার ৭ জন। ছবি: র‌্যাবের সৌজন্যে

জঙ্গিবাদে জড়িয়ে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া ৪ জনসহ মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। র‍্যাব বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামের একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য।

আরও পড়ুন: জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ: বাড়িছাড়া ৪ যুবকসহ গ্রেপ্তার ৭

আরো পড়ুন:

এর আগে বুধবার (৫ অক্টোবর) রাতে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া ৪ জনসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।  তারা সশস্ত্র জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণও গ্রহণ করে বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন এসব কথা জানান।

কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন বলেন, বুধবার (৫ অক্টোবর) রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর অভিযানে মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে হোসাইন আহম্মদ মো. নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়ের, বণি আমিন, ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত, মো. হাসিবুল ইসলাম, রোমান শিকদার ও মো. সাবিতকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদোর কাছ থেকে নব্য জঙ্গি সংগঠনের তিন ধরনের প্রচারপত্র, বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকা সম্বলিত পুস্তিকা, নব্য জঙ্গি সংগঠনের কর্মপদ্ধতি (খসড়া মানহায), উগ্রবাদী বই ‘নেদায়ে তাওহীদের’ ৪ কপি, উগ্রবাদ ভিডিও সম্বলিত একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়। কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ ৮ তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় গত ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। র‌্যাব ফিরে আসা নিলয়কে তার পরিবারের হেফাজতে রেখে বাকি নিখোঁজ ৭ সদস্য ও জড়িত অন্যান্যদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে।

তিনি বলেন, গত ২৩ আগস্ট সকাল ১০ টায় নিলয়সহ নিখোঁজ ৫ তরুণ নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিল্লা টাউন হল এলাকায় আসে। পরবর্তীতে সোহেলের নির্দেশনায় তারা দুই ভাগ হয়ে লাকসাম রেলক্রসিংয়ের কাছে হাউজিং স্টেট এলাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। নিলয়, সামি ও নিহাল একত্রে গমন করে। কিন্তু ভুলবশত তারা চাঁদপুর শহর এলাকায় চলে যায়। তারা ভুল বুঝতে পেরে রাত্রীযাপনের উদ্দেশ্যে চাঁদপুরের একটি মসজিদে অবস্থান করলে কর্তব্যরত পুলিশ তাদের সন্দেহজনক আচরণের কারণে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরবর্তীতে দায়িত্বরত পুলিশ তাদের পাশের একটি হোটেলে রেখে যায় এবং পরদিন বাসায় চলে যেতে নির্দেশ দেয়। তারা রাতের বেলা হোটেল থেকে কৌশলে পালিয়ে তাদের পূর্বনির্ধারিত জায়গায় গমন করলে সোহেল ও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি  লাকসামের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়।

তিনি জানান, বাড়িতে পূর্ব থেকেই তিনজন অবস্থান করছিল। পরবর্তীতে নিলয়, নিহাল, সামি ও শিথিলকে কুমিল্লা শহরের একটি মাদ্রাসার মালিক নিয়ামত উল্লাহর কাছে পৌঁছে দেয় সোহেল। নিয়ামত উল্লাহর তত্ত্বাবধানে ১ দিন থাকার পর সোহেল ৪ জনকে নিয়ে ঢাকায় আসে এবং নিহাল, সামি ও শিথিলকে অজ্ঞাত ১ ব্যক্তির কাছে বুঝিয়ে দিয়ে নিলয়কে একটি লঞ্চের টিকিট কেটে পটুয়াখালীতে পাঠায়। পটুয়াখালীতে গ্রেপ্তারকৃত বনি আমিন নিলয়কে গ্রহণ করে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় নিয়ে যায় এবং গ্রেপ্তারকৃত হুসাইন ও উমায়েরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। বণি আমিন নিলয়কে ৩ দিন তার বাসায় রাখে। তার বাসায় অতিথি আসায় পরবর্তীতে নিলয়কে হুসাইনের মাদ্রাসায় রেখে আসে। নিলয় মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর কল্যাণপুরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। নিলয়ের দেওয়া তথ্যমতে বনি আমিনকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। বণি আমিনের তথ্য মতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এলাকা থেকে নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন বলেন, তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হুসাইন আহমদ, রিফাত, হাসিব, রোমান শিকদার ও সাবিতকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, হাসিব ও রিফাত এক বছর আগে কুমিল্লার কোবা মসজিদের ইমাম হাবিবুল্লাহর কাছে সংগঠনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা পায়। পরবর্তীতে হাবিবুল্লাহ তাদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে ফাহিম ওরফে হাঞ্জালার কাছে নিয়ে যায়। ফাহিম তাদের কুমিল্লার বিভিন্ন মসজিদে নিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে ও ভিডিও দেখাত। এইভাবে তাদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী করে তুলে। গ্রেপ্তারকৃত রোমান স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য গত ৪০ দিন আগে নিরুদ্দেশ হয় এবং গ্রেপ্তারকৃত সাবিত দুই মাস আগে পটুয়াখালী থেকে নিখোঁজ হয়। সোহেল নামে এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যায়। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের বিভিন্ন সেইফ হাউজে রেখে পটুয়াখালী এলাকার সিরাজ ওরফে রবি নামে এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় সশস্ত্র হামলা, বোমা তৈরি, শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়। হোসাইন আহম্মদ পটুয়াখালীর একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। সে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন থেকে কতিপয় সদস্যদের একীভূত করে ২০১৭ সালে নব্য জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সংগঠনটি ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) হিসেবে নামকরণ করা হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন, বিশেষত জেএমবি, আনসার আল ইসলাম এবং হুজির বিভিন্ন পর্যায়ের কতিপয় নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে এ উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে। হোসাইন সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহ ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও তিনি সদস্যদের বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সদস্যদের সশস্ত্র হামলার বিষয়ে প্রস্তুত করে তুলতেন। তিনি ২০১৪-১৫ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে সিরাজ নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হন। অদ্যাবধি ১৫-২০ জন সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে বলে জানায়।

র‌্যাব জানায়, নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়ের ভোলায় একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ২০১৯ এর আগে উগ্রবাদী কার্যক্রমে যুক্ত হন। তিনি হিজরতকৃত সদস্যদের প্রশিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়াও তিনি সদস্যদের বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সদস্যদের সশস্ত্র হামলার বিষয়ে প্রস্তুত করে তুলতেন। তিনি ৯-১০ জন সদস্যের তত্ত্বাবধান ও প্রশিক্ষণের সাথে যুক্ত ছিলেন। আর বণি আমিন উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে পটুয়াখালী এলাকায় কম্পিউটার সেলস অ্যান্ড সার্ভিস এর ব্যবসা করে। সে সদস্যদের আশ্রয় প্রদান ও তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ছিল। সে ২০২০ সালে হোসাইনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। অদ্যাবধি ২২-২৫ জন সদস্যকে আশ্রয় প্রদান ও তত্ত্বাবধানে জড়িত ছিল বলে জানায়। রিফাত কুমিল্লাতে অর্থনীতি বিষয়ে স্মাতক ১ম বর্ষে অধ্যয়ণরত ছিল। হাসিব উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে অধ্যয়ণরত এবং একটি অনলাইন ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিল। তারা হাবিবুল্লাহর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে দীক্ষিত থেকে গত ২৩ আগস্ট  বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়। রোমান পূর প্রকৌশল বিষয়ে ডিপ্লোমা করে গোপালগঞ্জে ইলেকট্রিক্যাল ও স্যানিটারি বিষয়ক কাজ করত। সে অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয় এবং স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনটি সম্পর্কে ধারণা পায়। পরবর্তীতে সে প্রায় এক মাস আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। সাবিত উত্তরা এলাকায় প্রায় ১ মাস আগে একটি ছাপখানায় স্টোর কিপারের কাজ করত। সে তার একজন আত্মীয় ও অনলাইনে ভিডিও দেখার মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়। সে গত জুন মাসে ঢাকায় সিরাজের সাথে দেখা হওয়ার পর প্রায় ২ মাস আগে নিখোঁজ হয়। 

/মাকসুদ/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়