ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের মৃত্যু নিয়ে যা বলছে র‌্যাব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩০, ১৪ ডিসেম্বর ২০২২  
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের মৃত্যু নিয়ে যা বলছে র‌্যাব

বহুল আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশ ব্রিজ থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। পারিবারিক সূত্র, অধিকতর তথ্য-প্রযুক্তির বিশ্লেষণ, সিসিটিভি ফুটেজসহ স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের আলোকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে র‍্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে কাওরান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংস্থাটির লিগাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
 
তিনি জানান, ৫ নভেম্বর নিহতের বাবা কাজী নুর উদ্দিন তার সন্তান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশের নিখোঁজ সংক্রান্তে রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তার সন্তান গত ৪ নভেম্বর বিকেল থেকে নিখোঁজ রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও র‌্যাব নিখোঁজ শিক্ষার্থীকে খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু করে। ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে একটি মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় নৌ-পুলিশ। পরবর্তীতে জানা যায়, মৃতদেহটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশ (২৪)। 

মৃতদেহটি উদ্ধারের পর ফারদিনের বাবা কাজী নুর উদ্দিন রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে বহুলভাবে প্রচারিত হওয়ায় দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে র‌্যাব মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনপূর্বক জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

তিনি জানান, ফারদিন নুর পরশ নিহত হওয়ার ঘটনায় র‌্যাব তার পারিবারিক সূত্র, অধিকতর তথ্য-প্রযুক্তির বিশ্লেষণ, সিসিটিভি ফুটেজসহ স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের আলোকে রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করে। ৪ নভেম্বর বিকেল ৩টায় রাজধানী ডেমরার কোনাপাড়া নিজ বাসা থেকে পরীক্ষার কথা বলে বুয়েটের হলের উদ্দেশে বের হন ফারদিন। বিকেল আনুমানিক ৫টায় ফারদিন সায়েন্স ল্যাব মোড়ে তার পরিচিতার সাথে তিনি দেখা করে। অতঃপর সেখান থেকে নীলক্ষেত ও ধানমন্ডিসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে। পরবর্তীতে সাত মসজিদ রোডে একটি রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা করে। রাত আনুমানিক ৮টায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। পরবর্তীতে তিনি রিকশাযোগে রামপুরায় আসেন। আনুমানিক রাত পৌনে ১০টায় রামপুরা ব্রিজ এলাকায় তিনি রিকশা থেকে নেমে যান এবং কিছুক্ষণ রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ঘোরাফেরা করে। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, পরবর্তীতে তিনি কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা, পুরান ঢাকার জনসন রোড, গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট এলাকায় গমন করেন। 

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায়, রাত ২টা ১ মিনিটে যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচা থেকে নিহত ফারদিনকে লেগুনায় উঠতে দেখা যায়। রাত আনুমানিক ২-২০ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের অপর পাশে তারাবো বিশ্বরোডের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লেগুনা থেকে নেমে যায় ফারদিন। রাত ২-২৬ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের তারাবো প্রান্তে ফারদিনের অবস্থান ছিল। সুলতানা কামাল ব্রিজের প্রায় মাঝখানে আসে ফারদিন। ব্রিজের তারাবো প্রান্ত থেকে সুলতানা কামাল ব্রিজের মাঝখান পর্যন্ত দূরত্ব আনুমানিক ৪০০-৫০০ মিটার। সুলতানা কামাল ব্রিজের রেলিং ক্রস করে ফারদিন এবং রাত ২টা ৩৪ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর থেকে স্বেচ্ছায় নদীতে ঝাঁপ দেয়। ঝাঁপ দেওয়ার পর রাতে একই সময়ে শীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে পড়েন ফারদিন। ফারদিনের মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়াও রাত ২টা ৫১ মিনিটে ফারদিনের হাতের ঘড়িতে পানি ঢুকে অকার্যকর হয়ে পড়ে।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ, ডিজিটাল ফুট-প্রিন্টসহ অন্যান্য সকল সংশ্লিষ্ট আলামত বিবেচনায় নিয়ে আমাদের তদন্তে বের হয়ে আসে যে, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন স্বেচ্ছায় সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফারদিনের মৃত্যু সংক্রান্ত অন্য কোন সূত্র, আলামত পাওয়া গেলে, তবে তা বিবেচনায় নিয়ে মামলার বিজ্ঞ তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

ঢাকা/মাকসুদ/এনএইচ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়