ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রপ্তানিযোগ্য পণ্য নামিয়ে রেখে কার্টনে জুট ভরে দেয় প্রতারকচক্র 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২  
রপ্তানিযোগ্য পণ্য নামিয়ে রেখে কার্টনে জুট ভরে দেয় প্রতারকচক্র 

গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন

রাজধানীর ডেমরা থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের রপ্তানিযোগ্য চোরাই গার্মেন্টস মালামাল উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৪। এ সময় সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাতচক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। চক্রটি কাভার্ডভ্যানের চালককে প্রলোভন দেখিয়ে কার্টন থেকে রপ্তানি পণ্য নামিয়ে রেখে সেখানে জুট ভরে দিতো বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে র‌্যাব-৪ থেকে জানানো হয়, শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে র‌্যাবের একটি দল ডেমরা থানার একটি প্যাকেজিং ভবনের সামনে এবং ভবনের দ্বিতীয় তলায় অভিযান পরিচালনা করে আনুমানিক ৫ কোটি টাকা মূল্যের চোরাইকৃত প্রায় ২৫ হাজার পিস গার্মেন্টস সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয়, মো.তাওহিদুল কাউছার, মো. নাজিম, মো. মাসুদ,মো. দুলাল, মো.মিরাজ উদ্দিন, আব্দুল আল মাসুদ ও মো.সাইফুল ইসলাম।

র‌্যাব জানায়, তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, আশুলিয়া ও গাজীপুর থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানির গার্মেন্টস মালামাল চুরির ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত। তারা মালামাল পরিবহনে নিয়োজিত চালকদের সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে ডাকাত চক্র গঠন করে পরস্পর যোগসাজোশে কয়েক বছর ধরে গার্মেন্টস মালামাল কাভার্ডভ্যান থেকে ডাকাতি করে স্থানীয় মার্কেটে চোরাইপথে কম দামে বিক্রি করে। এতে করে দেশ প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি গার্মেন্টস মালিকরা প্রতিনিয়ত বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আসছিল। 

প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এ ধরনের কয়েকটি চক্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সক্রিয় রয়েছে এবং প্রতি বছর শত কোটি টাকা মূল্যের দেশি পোশাক এসব চক্রের মাধ্যমে চুরি হয়ে যাচ্ছে। ডাকাতচক্রটি সাধারণত কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভারের সাথে সখ্যতা তৈরির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার লোভ দেখানো ও ডাকাতির মালামাল বিক্রয়ের টাকার একটি অংশ দেওয়ার কথা বলে ড্রাইভারকে রাজি করায়। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিকটবর্তী নির্জন এলাকার ভেতর কিংবা চক্রের সুবিধাজনক স্থানে কাভার্ড ভ্যান পার্কিং করাতো। পরবর্তীতে কাভার্ডভ্যানটিকে তাদের লোড-আনলোড পয়েন্টে নিয়ে আসলে বিশেষ কৌশলে কাভার্ডভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ডভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু খুলে প্রত্যেক কার্টনের ভেতরে থাকা মালামালের ৩০%-৪০% মালামাল রেখে আবার পূর্বের ন্যায় কার্টন সঠিকভাবে বাধাই করে কাভার্ডভ্যানে লোড করে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে নিয়ে য়ায়। এ কারণে ফ্যাক্টরি মালিক ও বন্দর কর্তৃপক্ষ কেউই সন্দেহ না করতে পারে। ডাকাতচক্রটি কার্টনের মালামালের ওয়েট ঠিক রাখার জন্য যে পরিমাণের মালামাল কার্টন থেকে চুরি করে সরিয়ে রাখে ঠিক সে ওজনের জুট কার্টনের ভেতর মালামালের মাঝখানে দিয়ে কার্টন প্যাকেট করে। যার ফলে বন্দরে স্ক্যানিং কিংবা ওয়েট মেশিনে কোন ধরনের অনিয়ম পরিলক্ষিত হয় না। এছাড়াও মালামালসহ সম্পূর্ণ ট্রাক/কাভার্ডভ্যানও মাঝে মাঝে তারা লুট করেছে।

গ্রেপ্তারকৃত মো. তাওহীদুল কাউছার বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার যোগীকান্দা গ্রামের বাসিন্দা। সে ১৯৯৮ সাল থেকে মিরপুর জুট পট্টি এবং উত্তরায় স্টকলটের ব্যবসা শুরু করার সময়ে বিভিন্ন চোরচক্রের কাছ থেকে গার্মেন্টেসের লুট করা মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের একপর্যায়ে সে নিজে ও অন্যরা মিলে একটি সক্রিয় আন্তঃজেলা ডাকাত চক্র তৈরি করে। কাওছারের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় গার্মেন্টস পণ্য লুন্ঠনের দায়ে একাধিক মামলা রয়েছে।  ডাকাত চক্রটি গার্মেন্টস মালামাল চুরি করার ফলে বিদেশি ক্রেতা সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে মালামাল ডেলিভারি না পাওয়ার কারণে মালামালে মূল্য পরিশোধ করতো না এবং পরবর্তীতে ক্রেতারা ক্রয় আদেশ দিতো না। এছাড়াও সঠিক সময়ে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে নির্ধারিত গার্মেন্টস পণ্যটি পৌঁছে না দেওয়ার ফলে বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে দেশি গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস কমে যাচ্ছে।

/মাকসুদ/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়