ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

‘ধারের টাকা পরিশোধ করতে এটিএম বুথ লুট করার পরিকল্পনা করে আরিফুল’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ২২ এপ্রিল ২০২৪  
‘ধারের টাকা পরিশোধ করতে এটিএম বুথ লুট করার পরিকল্পনা করে আরিফুল’

মধুমতি ব্যাংকের এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ডকে হত্যার ঘটনায় হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও বুথ ভাঙার বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়।

সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, গ্রেপ্তারকৃতের নাম আরিফুল ইসলাম। ১০ এপ্রিল ভোরে অজ্ঞাতনামা আসামিরা গুলশান থানার শাহজাদপুর প্রগতি স্মরণীর মাইশা চৌধুরী টাওয়ারে অবস্থিত মধুমতি ব্যাংকের এটিএম বুথে কর্মরত সিকিউরিটি গার্ড হাসান মাহমুদকে কুপিয়ে হত্যা করে। তার ভাই মাহফুজুর রহমান রুমেল হাসান মাহমুদকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করেন। ঘটনাটি বিভিন্ন জাতীয় ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ফলাও করে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। মামলার মূল ঘটনা উদঘাটনের জন্য থানা পুলিশ, সিআইডি এবং অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি ডিবি গুলশান জোনাল টিম মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তকালীন তথ্য প্রযুক্তি, সিসিটিভি ফুটেজ, আসামির ব্যবহৃত মোবাইল ও পরিহিত পোশাক এবং গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে হত্যাকারী শনাক্তপূর্বক আসামি আরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১০/১২ বৎসর ধরে বিভিন্ন অফিস ও বাসা বাড়ির আসবাবপত্র পরিবহনের কাজ করত।

২/৩ বছর আগে সে ব্যবসার পাশাপাশি ইট, বালি, পাথর সরবরাহের ব্যবসা শুরু করে। ব্যবসায় লোকসান হওয়ার কারণে সে ১৪/১৫ লাখ টাকার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সে তার একটি কিডনি বিক্রির চেষ্টা করে মিরপুর এলাকায় লিফলেট ছাড়ে। কিন্তু কিডনি বিক্রি করতে না পারায় এবং পাওনাদারদের দেনা পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদাররা তার বাসায় গিয়ে তাকে খুঁজতে থাকে। পাওনাদারদের চাপে ও ভয়ে সে গত ৩/৪ মাস ধরে পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাজধানীর মিরপুর-১ সহ বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকে এবং কিভাবে টাকা পরিশোধ করা যাবে সে চিন্তা ভাবনা ও পরিকল্পনা করতে থাকে এবং সেই ধারাবাহিকতা সে এটিএম বুথ লুট করার উদ্দেশ্যে অত্যন্ত পাশবিক কায়দায় নির্মমভাবে অত্র মামলার বয়বৃদ্ধ হাসান মাহমুদকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় কুপিয়ে হত্যা করে।

তিনি বলেন, সে আরও জানায় ইউটিউবের মাধ্যমে ব্যাংক/এটিম বুথ ডাকাতির দৃশ্য দেখতে পেয়ে খুন করে হলেও এটিম বুথের টাকা লুট করার পরিকল্পনা করে। উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেট হতে আসামি হাতুড়ি, হেমার, চেনি, মিরপুর পল্লবী মিল্লাত ক্যাম্প মোড় হতে চাপাতি, সাবল, চাকু ও মিরপুর স্টেডিয়াম এর ফুটপাত হতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একটি জার্সি ক্রয় করে এবং লোক সমাগম কম এমন এটিম বুথের অবস্থান খুঁজতে থাকে। গুলশান থানার শাহজাদপুর, ৩০/বি, মাইশা চৌধুরী টাওয়ার, মধুমতি ব্যাংক, প্রগতী স্বরণী শাখার এটিএম বুথ লোক সমাগম কম মনে হওয়ায় সে উক্ত এটিএম বুথ লুটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে অনুযায়ী গত ১০ এপ্রিল একটি ব্যাগে করে উল্লেখিত মালামালসহ জলপাই রংয়ের টি-শার্ট পরিধান করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করে রাতে তুরাগ বাস যোগে ঘটনাস্থলের বিপরীতে পাশে এসে ঘটনাস্থল রেকি করে রাস্তার ডিভাইডার পার হয়ে ঘটনাস্থলের সামনে দিয়ে পুনরায় রামপুরার দিকে যায়। আনুমানিক ৩টা ৪৯ মিনিটে তার পরিহিত জলপাই রংয়ের টি-শার্ট এর ওপরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি পরিধান করে পুনরায় ঘটনাস্থলের  আশপাশে ঘোরাঘুরি ও অবস্থান করতে থাকে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে পর্যবেক্ষণ করে সে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করাকালীন এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী হাসান মাহমুদ এর বাধার সম্মুখীন হওয়ায় সে তাকে চাপাতি দিয়ে গলায় কুপিয়ে হত্যা করে।

একপর্যায়ে এটিএম বুথ ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে সে ঘটনায় ব্যবহৃত হাতুড়ি, হেমার, চেনি, সাবল, চাপাতি, ব্যাগ ইত্যাদি ঘটনাস্থলে রেখে একটি ছোট চাকুটি নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। অতপর ঘটনার পরপরই সে ঘটনাস্থল এর বিপরীতে শাহজাদপুর বাঁশতলায় অবস্থান করে এবং পরে মিরপুরগামী অছিম পরিবহন বাসে উঠে তার টি-শার্টের উপরে পরিহিত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সিটি খুলে উক্ত বাসের সিটের নীচে রেখে মিরপুরের দিকে চলে যায়। বাসের ড্রাইভার ও হেলপার উক্ত জার্সিটি পেয়ে কালশী রাস্তার মাথায় ডিভাইডারের ওপর রেখে দেয়। ঘটনার পরপরই মামলাটির ছায়া তদন্তকালীন উক্ত জার্সিটি বাসের ড্রাইভার ও হেলপারের দেখানো মতে কালশী রাস্তার মাথায় ডিভাইডারের ওপর হতে জব্দ করা হয়েছে।

/মাকসুদ/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়