ঢাকা     মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ৬ ১৪৩১

লুটের টাকায় কোরবানি দেয় ডাকাতদলের সদস্যরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ২৩ জুন ২০২৪  
লুটের টাকায় কোরবানি দেয় ডাকাতদলের সদস্যরা

ঢাকা,‌ গাজীপুর ও ময়মনসিংহ রোডে ডাকাতি করা একটি চক্রের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উত্তরা বিভাগ। শনিবার (২২ জুন) রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার নাবিস্কো ও ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানার চরপাড়া মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

রোববার (২৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। 

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. ফয়সাল আহাম্মেদ রিগান (৩০), মো. তারেক মিয়া (৩৫), তানভীর আহম্মেদ অন্তর (২৬), মো. মিলন (২২), মো. জাবেদ ইকবাল ওরফে বাদল (৩২), আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), মো. রতন মিয়া (৩৮), মো. সেলিম মিয়া (৩০), মো. রুবেল মিয়া (৩৪) ও মো. সুমন মিয়া (৩৫)। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত ৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা, ১৩টি মোবাইল ফোন, ২টি চাকু ও প্লাস্টিকের রশি উদ্ধার করা হয়।

হারুন অর রশীদ বলেন, গত ১৬ জুন রাজধানীতে গরু বিক্রি করে পাইকারদের একটি দল বিমানবন্দর এলাকা থেকে একটি বাসে উঠে জামালপুর যাওয়ার জন্য। বাসে উঠার পর বাসের দরজা লক করে দেয় হেলপার। আব্দুল্লাহপুর যাওয়ার আগে পাইকারদের কাছ থেকে বাসের ভাড়া চায় হেলপার। জামালপুরের রাস্তা অনেক দূরে সে জন্য পাইকাররা পরে ভাড়া দিতে চান। এরপরই পাইকারদের শার্টের কলার ধরে ফেলে বাসের হেলপারসহ বাসে আগে থেকে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা। তারা পাইকারদের কিল ঘুষি দিয়ে তাদের মুখ বেঁধে ফেলে এবং তাদের বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে ডাকাত দলের সদস্যরা। এ সময় ডাকাত দলের পাইকারদের বলে তারা যেন তাদের টাকা পয়সা তাদের দিয়ে দেয়। গরু বিক্রি করার যে টাকা পাইকারদের কাছে ছিল তা পুরাটা নিয়ে তাদের রাস্তায় ফেলে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। পরে ঘটনার দিন বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা রুজু হয়। মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে এই বিষয়ে কাজ করে ডিবির উত্তরা বিভাগ। তদন্তের এক পর্যায়ে ডিবি উত্তরা বিভাগ এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ১০ ডাকাতের বিরুদ্ধে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর এলাকায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ডাকাত দলের কাজই হচ্ছে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে তারা মানুষজনকে ডাকাতি করে। 

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে হারুন অর রশীদ জানান, তারা প্রায়শই ঢাকা ও গাজীপুর রোডে ডাকাতি করে থাকে। এই ডাকাত দলের নেতৃত্বে রয়েছে গ্রেপ্তার বাদল, তারেক ও লিটন নামে আরেক পলাতক ডাকাত। ঈদ-উল-আজহাকে কেন্দ্র করে অস্থায়ী গরুর হাটগুলোতে তাদের লোকজন থাকে। তারা গরুর পাইকারদের অনুসরণ করে তাদের গাড়িতে তুলে ডাকাতি করে। এ ছাড়া, ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষ সঙ্গে করে টাকা পয়সা নিয়ে যায়, তারা সেগুলো ডাকাতি করে লুট করে। এই চক্রটি এখন পর্যন্ত ২০০ থেকে ২৫০টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এবারের ঈদ-উল-আজাহাকে কেন্দ্র করে তারা এখন পর্যন্ত ছয় থেকে সাতটি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। ঈদের আগে খিলক্ষেত এলাকায় চার জনকে গাড়িতে তুলে চক্রটি পাঁচ লাখ টাকা ও দুটি মোবাইল লুট করে নিয়ে যায়। ঈদের ১০ দিন আগে বিমানবন্দর থেকে একজন প্রবাসীকে গাড়িতে তুলে তার রিয়াল-টাকা লুট করে নিয়ে যায়। লুট করার টাকার মধ্য থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ডাকাত দলের অন্যতম নেতা মো. জাবেদ ইকবাল ওরফে বাদল এবার ঈদে গরু কোরবানি দিয়েছে। লুটের টাকার মধ্যে থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ডাকাত দলের আরেক নেতা মো. তারেক মিয়া একটি গরু কোরবানি দিয়েছে। একদিকে গরুর পাইকারদের কাছ থেকে টাকা লুট করে তারা সেই টাকা দিয়ে আবার ঈদে কোরবানি দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকার আশপাশে অনেক মামলা রয়েছে, সেগুলো আপনার তদন্ত করব। এ ছাড়া তারা ডাকাতির টাকা কীভাবে ভাগবাটোয়ারা করতো সেগুলো আমরা জানার চেষ্টা করব রিমান্ড। ডাকাত দলের সদস্যরা জানিয়েছে, তারা ২০০ থেকে ২৫০ ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। তাহলে তারা গ্রেপ্তার হয়েছে কতবার এবং জামিন পেয়েছে কতবার- এমন প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, মামলাগুলো বিভিন্ন থানাতে হয়েছে। 

মাকসুদ/এনএইচ 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়