টিকটকের জন্য ‘মানুষের কব্জি কাটতেন’ আনোয়ার, র্যাবের জালে ধরা
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

ঢাকার মোহাম্মদপুরের কব্জিকাটা আনোয়ার।
টিকটকে উদ্ভট ভিডিও ছেড়ে ভিউ, লাইক টেনে টাকা আয়ের জন্য মানুষের কব্জি কাটার নেতৃত্ব দেওয়া একটি গ্রুপের নেতা আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-২।
‘কব্জিকাটা আনোয়ার’ বা ‘শ্যুটার আনোয়ার’ হিসেবে পরিচিত এই সন্ত্রাসীর আরো কয়েক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি সামুরাই, দুটি ছুরি, আট কেজি গাঁজা ও একটি প্রাইভেটকার।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংস্থারটির আইন ও লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
তিনি বলেন, সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কেরানীগঞ্জ থেকে আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তার আরো কয়েকজন সহযোগীকে ধরা হয়। আনোয়ারের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যা মামলা, হত্যা চেষ্টা, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা রয়েছে।
কব্জিকাটা আনোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব জানতে পেরেছে, ২০০৫ সালে জীবিকার সন্ধানে বাগেরহাট জেলা থেকে ঢাকায় তার বাবার কাছে চলে আসেন। ঢাকায় এসে বিশুদ্ধ খাবার পানি পরিবহন করত। প্রথম পর্যায়ে আনোয়ার অপরাধ জগতে ছিনতাই ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি শুরু করলেও বিগত ২০২৪ সালে মানুষের কব্জি কেটে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে কব্জিকাটা গ্রুপের প্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে এবং কব্জি কাটা ভিডিও টিকটক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
র্যাব জানায়, এই ঘটনায় আনোয়ার ও তার সহযোগীদের কুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পরে। পরবর্তীতে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসলে ধারাবাহিক অভিযানের মুখে বাহিনীর অন্যতম সদস্য ভাগ্নে বিল্লালসহ আরো অনেকে গ্রেপ্তার হলে আনোয়ার নিজের পূর্বের লেবাস পরিবর্তন করে আত্মগোপনে থেকে কব্জিকাটা গ্রুপের নামে দুর্ধর্ষ এক বাহিনী গড়ে তোলে।
র্যাব জানায়, মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, নবীনগর হাউজিং, চন্দ্রিমা হাউজিং ও আদাবরের শ্যামলী হাউজিং, শেখেরটেক, নবোদয় হাউজিং এলাকায় হত্যা, অস্ত্র-গুলি, মাদক কেনাবেচা, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পরে কব্জিকাটা আনোয়ার গ্রুপ বাহিনী।
নিজের শক্তি বৃদ্ধি এবং আধিপত্য বজায় রাখার জন্য এলাকার কিশোরদের মাদক, অস্ত্র ও অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে নিজস্ব দলের ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে তাদের ব্যবহার করে অপরাধ জগৎ থেকে উপার্জিত টাকার মাধ্যমে সে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে উঠে।
সংবাদ সম্মেলন বলা হয়েছে, সুকৌশলে সে বারবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল এবং এলাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস করেনি। কব্জিকাটা আনোয়ার বাহিনী প্রথমে যাকে টার্গেট করে তাকে যেকোনোভাবে হামলা করে। গ্রুপ সদস্যরা রাস্তায় যানজট তৈরি করে, সিসি ক্যামেরা থাকলে সেগুলো ভাঙচুর ও নজর রাখে, রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের আদলে যানজট নিয়ন্ত্রণের নাটক সাজিয়ে রাস্তা ব্লক করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সাধারণ জনগণ বাধা দিচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখে। এরপর তারা ফিল্মি স্টাইলে ভুক্তভোগীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে হাতের কব্জি কেটে সবার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে যায়।
র্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে গ্রেপ্তার করা আনোয়ারের হাতেই সাত-আটজন হামলার শিকার হয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন পা, কেউ হাত আবার কেউ পঙ্গু হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তার হামলার শিকার ব্যক্তিদের বেশিরভাগই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তার ভয়ে মামলাও করেন না অনেকে। আবার কেউ মামলা করলে তাকে নানা ভয়ভীতি দেখায় আনোয়ারের কব্জিকাটা গ্রুপের সদস্যরা।
আনোয়ারের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে প্রথম আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সংঘর্ষে আদাবর থানায় মামলা দায়ের হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যা চেষ্টা, মারপিট, চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে অসংখ্য মামলা হলেও জামিনে মুক্ত হয়েই তিনি আবার অন্ধকার জগতে ফিরে আসেন এবং আগের চেয়ে অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দেন।
এম/আর/রাসেল