ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

৭ বছর কোমায় থাকা সেনা কর্মকর্তার পদোন্নতি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ২০ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ২১:০৪, ২০ অক্টোবর ২০২০
৭ বছর কোমায় থাকা সেনা কর্মকর্তার পদোন্নতি

সাত বছরের বেশি সময় ধরে কোমায় আছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা। গত ১২ অক্টোবর ছিল তার চাকরির মেয়াদের শেষ দিন। দিনটিতে পদোন্নতির এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। 

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ৩১৪ নম্বর কেবিন নন্দকুজায় চিকিৎসাধীন তাছাওয়ার রাজাকে এদিন কর্নেল পদমর্যাদার র‌্যাঙ্ক ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়।    

এ ঘটনা কোনো দেশের সেনাবাহিনীর ইতিহাসে বিরল। এমনকি সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন সম্মানসূচক পদোন্নতি দেওয়া হলো। সুস্থ অবস্থায় বাহিনীতে সুনামের সঙ্গে দায়িত্বপালন ও বহুমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর রাখায় তাকে এই সম্মানে ভূষিত করেছে সেনাবাহিনী।

দেওয়ান তাছওয়ার মরমী শিল্পী হাছন রাজার বংশধর। ২০১৩ সালের ১১ মে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। ঢাকা সিএমএইচে ভর্তির পর ওই বছরের মার্চে তাকে থাইল্যান্ডে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেশ কয়েকবার তার অস্ত্রোপচারও হয়েছে, তবে চেতনা ফেরেনি।

চিকিৎসা ভাষায় তার অসুস্থতা হচ্ছে- ‘হাইপোস্কিক স্মিমিক ইনজুরি টু ব্রেইন ইফেক্টস’। তার হার্টের কার্যকারিতা ফিরে এসেছে, ব্রেইনের নিচের অংশ ভালো। কিন্তু ব্রেইনের পুরোপুরি কার্যক্ষমতা ফিরে আসেনি।

২০১৩ সালের ১২ মে থেকে সিএমএইচে কোমায় আছেন কর্নেল তাছাওয়ার রাজা। এই বিছানাতেই সেনা পোশাকে কর্নেল ব্যাচ পরিয়ে দেওয়া হয় তাকে। ওই সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে চাকরিজীবনের শেষ দিনে তাছাওয়ার রাজাকে পদোন্নতি দিয়ে এক বিরল সম্মানে ভূষিত করেন সেনাবাহিনী-প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালের ২৩ জুন দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন।

কর্নেল তাছাওয়ার রাজার জন্ম ১৯৬৭ সালের ১৫ অক্টোবর। তিনি সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে এসএসসি, ১৯৮৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি (বিএমএ) থেকে বিএসসি পাস করেন। প্রায় ৩২ বছরের চাকরি জীবনে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও কাজ করেন। ১৯৯৬ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে ইরাক-কুয়েত ও ২০০৭ সালে সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে যান। শান্তিরক্ষা মিশনে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন পিস মেডেল। এছাড়া সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ স্কুলের রণকৌশল প্রশিক্ষক ছিলেন।

চাকরি জীবনের ব্যস্ততার মধ্যেও লেখালেখি করেন তাছাওয়ার রাজা। হাছন রাজার জীবন ও কর্ম নিয়ে ‘হাছন রাজা সমগ্র’, মেজর জেনারেল এমএজি ওসমানীকে নিয়ে ‘ও জেনারেল মাই জেনারেল’, ‘সেনাবাহিনীর ইতিহাস’সহ কয়েকটি বই লিখেছেন তিনি।

আমৃত্যু তিনি সিএমএইচে চিকিৎসাধীন থাকবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

ঢাকা/হাসান/জেডআর

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়