মুক্তিযোদ্ধা বশরের কষ্টের জীবন
মো. আবুল বশর
মো. আবুল বশর (৭০)। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে নিজের জীবনকে বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে দেশকে মুক্তির বিজয়ের স্বাদ এনে দিলেও জীবন-সংগ্রাম যেন শেষই হচ্ছে না। সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে এই বয়সেও মাথায় বোঝা নিয়ে মালামাল আনা-নেওয়ার কাজ করছেন।
সম্প্রতি কথা হয় সরকারি ভাতাপ্রাপ্ত এই মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যুবক ছিলাম। এদেশের নিরীহ মানুষ থেকে মা বোন শিশুর ওপর যে বর্বর জঘন্য হামলা হয়েছিল, তা দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। জীবনের মায়া ভুলে বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের শুরুতে ভারতের আসামে লোহারগাও এলাকায় ছয় মাসের গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে এসে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, চাঁদপুর ও আশপাশের এলাকায় গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। মেজর হায়দারের নেতৃত্বে ওসব এলাকায় পাক হানাদার মুক্ত করি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু এখন বাঁচতে গিয়ে আমাকে প্রতিনিয়ত এই বয়সেও সংগ্রাম করে যেতে হচ্ছে। জানি না এ সংগ্রামের শেষ কোথায়।’
বশর মিয়া বলেন, আমরা গেরিলা যোদ্ধা ছিলাম। চৌদ্দগ্রাম পাকবাহিনীর মোকাবিলা করে তাদের পরাস্ত করি। যুদ্ধ শেষ হওয়ায় চারিদিকে অভাব-অনটন, কাজ নেই। জীবন তো আর থেমে থাকে না। কোনোমতে কমলাপুর স্টেশনে পার্সলে এসে বোঝা টানা বা কুলির কাজ শুরু করি। আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমদিকে ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান এবং স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপনের জন্য ভাতা দেওয়া শুরু করে। যাচাই-বাছাই শেষে তখন ৩০০ টাকা মাসিক ভাতা পেতাম। এখন ভাতা পাই ১২ হাজার টাকা। তবে পরিবার বড়, খরচ অনেক। তিন মেয়ের মধ্যে দুজন ডিগ্রিতে পড়াশোনা করে। ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। এক মেয়েকে অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। আমি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এ কারণে এই বয়সেও আমাকে প্রতিনিয়ত কাজ করতে হচ্ছে। ’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, শরীরে আর কুলায় না। এ কারণে সরকার মুক্তিযোদ্ধা ও তার সন্তানদের চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটার ব্যবস্থা রেখেছে। ছেলে-মেয়েদের যেকোনো একটি চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় গেছি। কিন্তু কোথাও থেকে একটি কাজের ব্যবস্থাও করা হয়নি। ’
মাকসুদ/সাইফ
আরো পড়ুন