ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখে বিআরটিসি

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ২২:৫৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০
লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখে বিআরটিসি

ফাইল ছবি

বছরের পর বছর ধরে লোকসান গুণতে হচ্ছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনকে (বিআরটিসি)। 

সরেজমিন ঘুরে ও বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিপোগুলোতে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি, অসততা, কাজের সঠিক জবাবদিহিতা না থাকা, প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল জনবলের অভাব, অব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ না থাকা, অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ, ইউনিয়নের লোকজনের দৌরাত্বসহ নানাবিধ কারণে বিআরটিসিকে প্রতিনিয়ত লোকসান গুণতে হচ্ছে। 

জানা গেছে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. এহছানে এলাহী (অতিরিক্ত সচিব) দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সংস্থাটির সার্বিক অবস্থা পাল্টাতে থাকে। তার প্রত্যক্ষ তদারকিতে এখন সংস্থাটি নিয়মিত লাভের মুখ দেখছে বলেও জানা যায়।

বিআরটিসি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৬১ সালে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনায়, নতুনভাবে এর যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে যাত্রী পরিবহন, পণ্য পরিবহন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ চালক ও কারিগর তৈরি করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। 

বর্তমান সরকার দুই মেয়াদে ২০৫৮টি নতুন বাস ও ট্রাক সংযোজন করেছেন বিআরটিসি বহরে। ঢাকাসহ দেশের ২৯টি রুটে বর্তমানে বিআরটিসি এসি এবং নন এসি এক হাজার ২৭৮টি বাস চলাচল করে। 

রুটগুলি হলো- বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, নালিতাবাড়ি, খুলনা, টুংগীপাড়া, বেনাপোল, পিরোজপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, শেরপুর, নওগাঁ, ময়মনসিংহ, বাজিতপুর, কুষ্টিয়া, মাওয়া, নরসিংদী, মেহেরপুর, ভৈরব, নাটোর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, মধুপুর ও পাটুরিয়া।

বিআরটিসির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও পার্সোনাল) মো. কামরুল ইসলাম জানান, বিআরটিসিতে বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা- তিন হাজার ৩৬৯ জন। চালক আছেন, দুই হাজার ২৫০ জন। সহকারী বা কন্ডাকটার রয়েছেন, ৩০২ জন। মোট ৫৮৮টি ট্রাকের মধ্যে সচল আছে ৫৬৯টি আর অচল ১৯টি।

বিভিন্ন ধরনের মোট বাস রয়েছে এক হাজার ৮৭৬টি। এর মধ্যে টাটা (পুরাতন), ডাবল ডেকার (পুরাতন), ডাবল ডেকার (২০১২), সিএনজি (চায়না), সিএনজি (ফাও), দাইয়্যু (এসি), দাইয়্যু (নন এসি), অশোক (এসি-পুরাতন), ভলবো, হিনো, আর্টিকুলেটেড, অশোক (এসি), অশোক (দ্বিতল), টাটা এবং মিনি বাস রয়েছে। 

এসব বাসের মধ্যে সচল আছে এক হাজার ২৭৩টি, অচল ৩৮৮টি, লিজ দেওয়া আছে ৩৮টি এবং বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে ১৬৭টি।

 সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (অ্যাকাউন্টস) মো. আমজাদ হোসেন জানান, ২০১১ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২৫৫টি দাইয়্যু বাস কেনা হয়েছিল। এছাড়া গাড়ির যন্ত্রাংশও কেনা হয়েছিল। এতে খরচ হয় প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার। ২০১২ এবং ২০১৩ সালে বাসগুলো বিআরটিসিতে হস্তান্তর করা হয়। 

তিনি আরও জানান, মো. এহছানে এলাহী নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সংস্থার আয় হয়েছে ২৯৩ কোটি টাকার ওপরে। ব্যয় হয়েছে ২৩৬ কোটি টাকা। ১১ মাসে লাভ হয়েছে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। যে টাকা থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিআরটিসির এক কর্মকর্তা জানান, দক্ষ মেকানিক, ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ, অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ, যথাযথ সিদ্ধান্তের অভাব, ইউনিয়নের লোকজনের দৌরাত্ব, জবাবদিহিতার অভাব, কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতিসহ নানা কারণে বিআরটিসিকে প্রতিবছর লোকসান গুণতে হচ্ছিল। বর্তমান চেয়ারম্যানের সার্বিক তদারকিতে এখন সংস্থাটি লাভের মুখ দেখছে।

বেসরকারি একটি বাস সার্ভিসের পরিচালক আশফাক আহমেদ বলেন, ‘যথাযথ পরিচর্যা করলে বিআরটিসির একেকটি বাস ১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সচল রাখা সম্ভব। অথচ অযত্ন আর অসততার জন্য বিআরটিসি বাসের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয় না।’

স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিবছর সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ে। সেই তুলনায় কয়েক বছর ধরে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়নি। 

অন্যদিকে, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির কারণেই সংস্থার নিয়মিত লোকসান হচ্ছিল বলে মনে করেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থাটির আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। 

তিনি জানান, বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে যেভাবে জবাবদিহিতার মধ্যে সংস্থাটির কার্যক্রম চলছে, এভাবে চললে কোনদিন আর লোকসানে পড়তে হবে না। গত এক বছরের মত প্রতিবছরই মানুষকে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হবে সংস্থাটি। 

বিআরটিসির সার্বিক অবস্থা এবং লাভ-লোকসান প্রসঙ্গে পরিচালক (কারিগরী) কর্নেল মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘ডিপোগুলোতে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসততা, কাজের সঠিক জবাবদিহিতা না থাকা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে কাজ না করতে পারা, প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল জনবলের অভাবসহ নানাবিধ কারণে এতদিন লোকসান হচ্ছিল। ধীরে ধীরে সংস্থাটি সেই লোকসান কাটিয়ে লাভও করছে। বর্তমানে যেভাবে চলছে, সেরকম মনিটরিং নিয়মিতভাবে করতে পারলে সবসময় প্রতিষ্ঠানটি লাভে থাকবে।’

ঢাকা/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়