ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

স্বপ্নের ঠিকানায় তারা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ২৩ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৯:৫১, ২৩ জানুয়ারি ২০২১
স্বপ্নের ঠিকানায় তারা

ঠিকানাবিহীন-গৃহহীন হাজার পরিবারের আজ আনন্দের দিন। তারা পেয়েছে নিজের একটি ঠিকানা। শুধু ঘরই পায়নি মৌলিক সুবিধাবঞ্চিত এসব মানুষ, সেই সঙ্গে কর্ম করে ভাগ‌্য পরিবর্তনের জন‌্য পেয়েছে জমিও।

ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে আবাসন সুবিধার আওতায় আনার জন্য সরকারি কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রায় ৭০ হাজার পরিবার পেলেন আধাপাকা বাড়ি। একযোগে এত ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে জমি ও ঘর করে দেওয়া বিশ্বে মাইলফলক।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  গণভবন থেকে ভার্চুয়াল এই গৃহ হস্তান্তর কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং ৪৯২টি উপজেলা প্রান্ত ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সংযুক্ত হয় অনুষ্ঠানে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফ্রেবুয়ারি নোয়াখালী জেলার বর্তমানে লক্ষ্মীপুরের চরপোড়াগাছ গ্রাম পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি গৃহহীন মানুষের জন্য গৃহ নির্মাণের নির্দেশ দেন।  এরই নির্দেশে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম শুরু হয় গৃহহীন পুনর্বাসন কার্যক্রম।

পরে ১৯৭২ সালের ৩ জুন বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন আয়োজিত সমবায় সম্মেলনের বক্তব্যে অঙ্গীকার করেছিলেন, ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে। এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মুজিববর্ষ ঘোষণা করে সরকার।  মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না- এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে চলমান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে সারা দেশে ঘর পেলো ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার। দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর করে দিতে এখন পর্যন্ত প্রায় নয় লাখ পরিবারকে তালিকাভুক্ত করেছে শেখ হাসিনা সরকার।

৬৯ হাজার ৯০৪ পরিবারের মধ্যে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে ব্যারাকের মাধ্যমে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়।

প্রকল্প সূত্র জানায়, দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে ‘দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা-২০২০’ প্রণয়ন করা হয়।  গত বছরের জুন মাসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা তৈরি করা হয়। এরপর দেশজুড়ে শুরু হয় কর্মযজ্ঞ।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহ নির্মাণ উপযোগী ২ শতাংশ খাস জমি বরাদ্দ করে প্রথম ধাপে ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারের জন্য একক গৃহ নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়।  অধিকাংশ গৃহ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই আরও একলাখ ঘরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় দুর্যোগ সহনীয় গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায়ের (সিভিআরপি প্রকল্প) মাধ্যমে এই ৬৬ হাজার ১৮৯টি ঘর তৈরি করা হয়েছে।  আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একক গৃহ নির্মাণের সামগ্রিক কার্যক্রম সমন্বয় করছে। মুজিববর্ষে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্পগ্রামে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

প্রথম পর্যায়ে গৃহ নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৬৮ কোটি ৭১লাখ টাকা। প্রতিটি ঘরের জন্য ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।  প্রকল্পের নীতিমালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলা হয়েছে, ভূমিহীন-গৃহহীন ও ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, ঋণপ্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা, আয়মুখী কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়।

জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূলন করতে হবে। বাংলাদেশের একটি মানুষও যাতে গৃহহীণ না থাকে সেই ব‌্যবস্থা করে দেবো। প্রত‌্যেকের ঠিকানা হবে। এটা জাতির পিতার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নপূরণ করা আমাদের দায়িত্ব।
 

আরও পড়ুন: 

‘চকচকে ঘরে ঢুকলি পরানডা জুড়োয় যায়’

‘আল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে খুব বালা রাহুক’   

ঘর ও জমি পেলো ৬৬ হাজার পরিবার 

পারভেজ/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়