ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

লকডাউনে দাম বেড়েছে নিত‌্যপণ‌্যের, মানুষ ছুটছে টিসিবির ট্রাকে

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ৮ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ২০:৪৮, ৮ এপ্রিল ২০২১
লকডাউনে দাম বেড়েছে নিত‌্যপণ‌্যের, মানুষ ছুটছে টিসিবির ট্রাকে

রোজা ও  লকডাউনের অজুহা‌তে বাজা‌রে প্রায় সব ধর‌নের নিত্যপ‌ণ্যের দাম বে‌ড়ে‌ছে। নিরুপায় হয়ে মধ্য‌বিত্ত, নিম্ন মধ্য‌বিত্ত ও নিম্ন আ‌য়ের মানুষ ভিড় কর‌ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টি‌সি‌বি)-এর ট্রাক সেলের সামনে।

বৃহস্প‌তিবার (৮ এপ্রিল) ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় (বনশ্রী, রামপুরা, ঝিগাতলা, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী) টিসিবির খোলা ট্রাককে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষকে পণ্য কিনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

ঢাকার বি‌ভিন্ন এলাকায় প্রায় ১০০টি খোলা ট্রাকে নিত্য প্রয়োজনীয পণ্য বিক্রি করা হ‌চ্ছে বলে জানালেন টিসিবির কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রাজধানী ছাড়াও সারা দে‌শে প্রায় ৫০০টি এলাকায় পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা র‌য়ে‌ছে। সকাল থেকে দুপুরের মধ্যেই এক ট্রাক পণ্য বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রতিদিনের পণ্যের স্টকের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি।’ 

ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে টিসিবির খোলা ট্রাক থেকে বিক্রি করা পণ্যের মূল্য বাজারের পণ্যের চেয়ে কম। চিনি কেজি ৫৫ টাকা, মশুর ডাল কেজি ৫৫টাকা, সয়াবিন তেল  লিটার ১০০টাকা, পেঁয়াজ কেজি ২০টাকা, ছোলা কেজি ৫৫টাকা এবং খেজুর কেজি ৮০টাকা হিসেবে বিক্রি করা হ‌চ্ছে।’

এদি‌কে, নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকায়, লকডাউনের কার‌ণে বাজারে মালামা‌লের ঘাট‌তি বা দা‌মের কো‌নো প্রভাব পড়বে না বলে জানা‌লেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। ‌ তিনি বলেন, ‘যেকো‌নো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি র‌য়েছে। পণ্যের মজুদ, সরবরাহ ও দামও স্বাভাবিক পর্যা‌য়ে র‌য়ে‌ছে। সরকা‌রের নি‌র্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর নিয়‌মিতভা‌বে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করছে।’ হুজুগে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কি‌নে স্টক না করার জন্যও ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।

এদিকে, লকডাউনের পাশাপাশি রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা শুরু ক‌রে‌ছে ক্রেতারা।  বৃহস্প‌তিবার  (৮ এপ্রিল) বি‌ভিন্ন বাজারে মানভেদে সব ধরনের চাল, সয়াবিন তেল, মশুর ডাল, পিঁয়াজ, খেজুর, আলু, দেশি রসুন, আদার দাম বেশি দেখা গেছে।

কারওয়ান বাজা‌রে নাজিরশাইল ও মিনিকেট চাল ৬২-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৬০-৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাইজাম প্রতি কেজিতে ২-৪ টাকা বেড়ে ৫৪-৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২-৫ টাকা পর্যন্ত।

খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৫ টাকা বেড়ে ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি ৫ লিটারে ১০ টাকা বেড়ে আজ বিক্রি হচ্ছে ৬৪০-৬৬০ টাকায়। 

মানভে‌দে প্রতি কেজি মশুর ডালের দাম ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭৫- ৯০ টাকা।

এদি‌কে লকডাউন ও রোজাকে কেন্দ্র করে সড়ক, নৌ ও রেলপথে কৃষিপণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এছাড়া, রেলপথ ও সরকা‌রি প‌রিবহন বিটিআরসির মাধ্যমে কৃষিপণ্য পরিবহন সচল রাখা হবে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছে অধিদপ্তর।

পণ্য পরিবহণের বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ইউসুফ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘গত বছর লকডাউনের সময় কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য অ‌নেক ক‌ষ্টে বিক্রি কর‌তে পার‌লেও ন্যায্যমূল্য পায়নি। অথচ বাজার থে‌কে ক্রেতা‌রা বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনেছেন। ওই সময় কিছু সিদ্ধান্ত দেরিতে নেওয়ায়  খারাপ পরিস্থিতি হয়েছিল। কিন্তু শুরু থেকে আমরা এ ব্যাপা‌রে কাজ করে যা‌চ্ছি। আশা কর‌ছি, এবার লকডাউ‌নে বা রোজায় পণ‌্য সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না।’

নিউমা‌র্কে‌টে ক্রেতা ও পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লকডাউনের খবর জানার পর থেকেই ক্রেতারা নিত্যপণ‌্যের দোকানে ভিড় করছেন। সরকারের পক্ষ থে‌কে বার বার বলা হ‌চ্ছে, দেশে সব ধরনের পণ্যের  পর্যাপ্ত মজুদ র‌য়ে‌ছে। এরপরও ক্রেতা‌দের বে‌শি প‌রিমা‌ণে পণ্য কেনার সুযোগে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। 

ঢাকার নিউমা‌র্কেট, হা‌তিরপুল, কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা‌দের ভিড় দেখে বাজা‌রে প‌ণ্যের চা‌হিদা বেড়ে গেছে। এই  সুযোগে  পাইকারি বাজার থেকেই অতিরিক্ত পরিমাণে পণ্য কিনে মজুদ করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরাও পণ্যের দাম বাড়িয়ে দি‌য়ে‌ছেন। অথচ, বাজার ঘু‌রে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে পণ্যের যথেষ্ট মজুদ দেখা গে‌ছে।

এদিকে, রমজান উপলক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবি ১ এপ্রিল থেকে খোলা বাজারে ট্রাক ও ডিলারের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। বাজা‌রের চে‌য়ে কম দামের কারণে তেল, চিনি, পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল কেনার জন্য টিসিবির ট্রা‌কের কা‌ছে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। সরা দেশে ঢাকা শহ‌রে ১০০ স্থা‌নে, চট্টগ্রামে ২০ স্থা‌নে এবং দে‌শের অন্যান্য স্থান মি‌লি‌য়ে মোট ৫০০ স্থা‌নে টি‌সি‌বির পণ‌্য বিক্রি চল‌বে ৬ মে পর্যন্ত।

টিসিবির খোলা ট্রাক থে‌কে একজন ক্রেতা একবারে ২-৪ কেজি চিনি, ২ কেজি মশুর ডাল, ২-৫ লিটার সয়াবিন তেল, ছোলা ২-৩ কেজি এবং ১ কেজি খেজুর কিনতে পারছেন। য‌দিও আজ‌কে খেজুর এবং ছোলা বি‌ক্রি শুরু ক‌রেন‌নি ব‌লে জানা গে‌ছে। এপণ্য দু‌টি আগামী সপ্তা‌হ থে‌কে অন্যান্য প‌ণ্যের স‌ঙ্গে পাওয়া যা‌বে ব‌লে জানা গে‌ছে।

লকডাউন ঘোষণার পর বাজার অস্থির হয়ে ওঠার কারণ সম্প‌র্কে বাজার বি‌শ্লেষক, অর্থনী‌তি‌বিদ মোস্তাফা মাহবুব হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে, দে‌শে রাজ‌নৈ‌তিক, প্রাকৃ‌তিকসহ যেকো‌নো ক্রাইসিস দেখা দি‌লে ‌নিত্য প্রয়োজনীয় প‌ণ্যের দামের ওপর তার প্রভাব প‌ড়ে। আশার কথা হ‌চ্ছে, এখন পর্যাপ্ত প‌রিমা‌ণে সব পণ্য মজুদ আছে। তাই লকডাউন বা রোজার কারণ দে‌খি‌য়ে কেউ অতিরিক্ত পণ্য কিনবেন না। তাহ‌লেই আর প‌ণ্যের দাম বাড়বে না।’

‌মোস্তফা মাহবুব আরও ব‌লেন, ‘প্রতিবছ‌রই রোজা‌ আসলে অসাধু কিছু ব্যবসায়‌ী মি‌লে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তো‌লে। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের পণ্যের স‌র্বোচ্চ খুচরামূল্য বাজা‌রের খোলা স্থা‌নে, ক্রেতা‌দের চো‌খের সাম‌নে ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা কর‌তে হ‌বে।’ এই ব্যাপা‌রে তা‌দের‌ বাধ্য করতে, সং‌শ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ‌কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও ব‌লেন এই বাজার বি‌শ্লেষক।

/এনই/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়