ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

লকডাউনে দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষেরা

মনির হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৮, ২১ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৪:০৫, ২১ এপ্রিল ২০২১
লকডাউনে দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষেরা

লকডাউনে পরিবহন বন্ধ। বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ। ছবিটি রাজধানীর শান্তিনগর থেকে তোলা (ছবি: মেসবাহ য়াযাদ)

করোনাভাইরাসের  প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দেশে লকডাউন চলছে। রোজায় লকডাউন নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে নিয়ে এসেছে চরম দুর্ভোগ।

যারা উদ্বাস্তু জীবনযাপন করতেন, বিশেষ করে রেল স্টেশন, বাস স্টেশন, রাস্তার পাশে বসবাস করতেন, চলমান লকডাউন তাদের জীবন ও জীবিকায় বিপর্যয় নেমে এসেছে।

সম্প্রতি সানেমের জরিপ বলছে, দেশের ৮ বিভাগের মধ্যে ঢাকাতেই দারিদ্র্য বাড়ছে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে। তবে দারিদ্র্যের চেয়েও বেশি দ্রুতগতিতে বাড়ছে অতিদরিদ্রের সংখ্যা।  প্রতি ১০০ জনে ৬ জন থেকে তা এখন ২৯ জনে।  অর্থাৎ, প্রতি ৪ জন দরিদ্র মানুষের ৩ জনই এখন অতিদরিদ্র।

রাজধানী ঢাকায় নিম্নবিত্ত মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান হাতিয়ার হলো রিকশা চালানো, ফুটপাতে ব্যবসা করা, বিভিন্ন প্রজেক্টে শ্রমিক হিসাবে কাজ করা।  চলমান লকডাউনের কারণে তারা রিকশা নিয়ে বের হতে পারছে না।  তাছাড়া ফুটপাতে ব্যবসা বন্ধ থাকায় তারা এই মুহূর্তে কঠিন সময় পার করছে।

যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নিচে কথা হয় ৬০ বছর বয়সী ফাতেমা বেগমের সঙ্গে। যিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন পার করতেন।  চলমান লকডাউনে  সাধারণ মানুষ ঘর হতে বের না হওয়ার কারণে  ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতিক্রম হওয়ার পরেও তার মিলছেনা কোনো সাহায্য।

লকডাউনে বিপাকে রিকশাচালকরা। ছবিটি রাজধানীর টিকাটুলী এলাকা থেকে তোলা (ছবি: মেসবাহ য়াযাদ)

একইরকম গল্প রিকশাচালক দিনমজুর আনিস মিয়ার।  লকডাউনে রিকশা নিয়ে বের হলে পুলিশ নানা ঝামেলা করার পাশাপাশি  মামলা দিয়ে দেয়।  যে কারণে সারাদিনের ইনকাম ঘরে নিয়ে আসতে পারে না।  অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি বলেন, ‘গতকাল আমি ও আমার স্ত্রী অনেকটা না খেয়েই রোজা রেখেছি।  আমরা কোন রকম সময় পার করে নিচ্ছি কিন্তু ছেলে মেয়েরাতো তা  বুঝে না।  আজ রাতে বাসায় কি দিয়ে ইফতার করবো সেই চিন্তায় আছি।’

দয়াগঞ্জ মোড়ে রফিক হাসান নামে এক রিকশাচালক বলেন, সকালে গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে বের হওয়ার পরই পুলিশ রিকশা আটক করে।  রিকশা ছাড়িয়ে নিতে ৫০০ টাকা প্রয়োজন। পকেটে টাকা না থাকায় সকাল থেকে মোড়েই বসে আছি।

রাজধানী সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে কথা হলো মিলন নামে ১২ বছরের দিনমজুরের যুবকের সঙ্গে। তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। যাত্রীদের মালামাল নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁচ্ছে দিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে পেট চালিয়ে নিতেন।   তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে দূরপাল্লার বাস না চলায় পকেটে কোন টাকা নেই।  সারাদিন ঘুরে ফিরে সময় পার করছি। রোজা রাখার খুব ইচ্ছে ছিল।  বলতে গেলে এই কয়েকদিন না খেয়েই দিন পার করতেছি।’

মনির/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়