শিমুলিয়া ঘাটে লাখো মানুষের ঢল
মাওয়া থেকে মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম
মাদারীপুরের শিবচর থেকে স্ত্রী-কন্যা নিয়ে আবুল কাশেম মাওয়া এসেছেন সকাল দশটায়। সেই থেকে বসে আছেন শিমুলিয়া মোড়ে। ঢাকার মালিবাগে বাসা তার।
শিমুলিয়া থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত অটো রিকশায় জনপ্রতি ৪০০ টাকা করে চাচ্ছে। তিন জনের ভাড়া হয় ১২০০ টাকা। তার কাছে ৮০০/৯০০ টাকা আছে। উপায় না পেয়ে বসে আছেন রাস্তার পাশে ফুটপাতে।
ঝালকাঠি থেকে এসেছেন কলিম বেপারি। আগামী কাল থেকে অফিস। তিনিও বসে ছিলেন। পরে ৭০০ টাকা দিয়ে অন্য একজনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে রওয়ানা দেন ঢাকার পথে।
সকাল থেকে ফেরি পার হয়ে শিমুলিয়ায় নেমেছেন লাখো মানুষ। ঘাটে নামার পর ঢাকায় যাওয়ার গাড়ি পাচ্ছেন না। অনিশ্চয়তা নিয়ে কেউ অটো, কেউ মোটরসাইকেল আবার কেউ হেঁটেই রওনা দিচ্ছেন।
কদমতলী, পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত মোটরসাইকেলে জন প্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ভাড়া। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে প্রতি মোটরসাইকেলে দুজন করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। চালকসহ তিন জন। অটোয় ৮ থেকে ১০ জন করে নিচ্ছেন। প্রতি জন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। খোলা পিক আপ নিচ্ছে জনপ্রতি ২০০ টাকা করে। তাতেও ঠাসাঠাসি করে চড়ছে মানুষ।
মাওয়া ফেরি ঘাট থেকে চৌমুহনীর (পদ্মা ব্রিজের নিচে) দূরত্ব তিন কিলোমিটার। পুরো রাস্তা জুড়ে লাখো মানুষের দীর্ঘ সারি। দক্ষিণ বঙ্গের শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জ, খুলনা, বরগুনাসহ বিভিন্ন জেলার মানুষজন সকাল থেকে ফেরি পার হয়ে ঢাকায় পৌঁছতে কোনো যানবাহন পাচ্ছে না।
হাতে-কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সপরিবারে হাত ধরে ধীরে ধীরে হেঁটে ঢাকার পথে চলেছেন। একটু পর পর বিশ্রাম নিচ্ছেন। এরই মধ্যে শিশুরা হাঁটতে পারছেন না। বাবা-মায়েরা বোঝার ওপর বাচ্চাদের কাঁধে নিয়ে কতক্ষণ হাঁটবেন? তাই দীর্ঘ পথ হাঁটার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কাঁদছেন। বহু শিশুর কান্নায় ওই এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। শিশুদের চেয়ে বৃদ্ধদের কষ্ট কোনো অংশে কম নয়। তাদের অবস্থাও শোচনীয়। উদগ্রীব চোখে তারা খুঁজে ফিরছেন ঢাকাগামী যানবাহন।
রোববার (১ আগস্ট) থেকে কল-কারখানা খুলে দেওয়া হচ্ছে। এ ঘোষণার পর হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষ গ্রামের বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরছেন। মাওয়া থেকে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে হেঁটেই ঢাকার পথে রওনা দিয়েছেন তারা।
কর্মস্থলে ফেরা এসব যাত্রীদের অনুযোগ— ‘ঈদের আগে বলা হয়েছিল- লকডাউন খুললে কল-কারখানা খোলা হবে। তাই লকডাউন খোলা আগ পর্যন্ত যে যেকানেআছে সেখানেই যেনো অবস্থান করে। তবে কঠোর লকডাউনের মধ্যে কল-কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। গণ পরিবহন বন্ধ রেখে কারখানা খোলা হচ্ছে। তাদের প্রশ্ন- এ অবস্থায় কীভাবে ঢাকায় ফিরবেন?’
ফরিদপুর থেকে আসা আমিন মিয়া জানান, বাড়ি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ হেঁটে এবং অটোয় করে কোনো রকমে ঘাটে এসেছেন। ফেরি পার হয়ে ঢাকায় পৌঁছানোর কোনো যানবাহন পাচ্ছেন না।
ক্ষোভ নিয়ে অনেকে বলেন, ‘সরকার শ্রমিকদের প্রতি সদয় না হলে আমরা কোথায় যাব? লকডাউনও চলবে আবার কারখানাও খোলা হবে। এমন দ্বৈত্য আচরণের শিকার হয়ে শ্রমিকরা অসহায় বোধ করছে। এ তামাশা বন্ধ করা উচিত।’
/সনি
আরো পড়ুন