‘দূষিত সমাজ ব্যবস্থার কারণে নদীগুলো দূষিত হয়ে গেছে’

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দূষিত সমাজ ব্যবস্থার কারণে নদীগুলো দূষিত হয়ে গেছে। দখল হয়ে গেছে। এ অবস্থা এমনি এমনি আসেনি। কিছু মানুষ ভাবতো জায়গা ফাঁকা আছে, এটাই আমার পছন্দ, এটাই আমার দখল করতে হবে। এভাবেই কিন্তু হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে যখন ঢাকার চারপাশে নদী দখল উচ্ছেদ শুরু হলো, আমরা কিন্তু দেখিনি কোনটা কার জায়গা। প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কথা বলেছিলাম, তখন তিনি আমাদের সাহস দিয়েছিলেন। ঢাকার চারপাশ আমরা দখলমুক্ত করেছি। সেগুলোকে রক্ষা করার জন্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। 

রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শহীদ শেখ কামাল মিলনায়তনে মুজিব শতবর্ষ ও বিশ্ব নদী দিবস-২০২১ উপলক্ষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর নদী ও পরিবেশ ভাবনা এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

নদীগুলোকে রক্ষা করে এর প্রবাহ নিশ্চিত করাই-নদী দিবসের অঙ্গীকার জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নদী দখলমুক্ত করতে গিয়ে সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, পচাঁত্তরের পর একটি ধারা তৈরি হয়, মানুষ মনে করেছিল অপরাধ করলে বিচার হবে না, নদী দখল করলে বিচার হবে না। অনেকে নদীর পাড়ে গিয়ে ঘর তুলেছে, অনেকে নদীর পাড়ে কলকারখানা গড়ে তুলেছে।  তারা মনে করেছে এটা দখল নয়, এটা আমার প্রাপ্য অধিকার।  এই মনে করে কিন্তু অনেকে নদীর পাড় দখল করেছে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু যে পদক্ষেপগুলো নদী নিয়ে করেছিলেন; তা তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। পঁচাত্তরের পর বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বিরুদ্ধে অপবাদ ও অপপ্রচার করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজ সমাজ ব্যবস্থা, লুটেরা সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করেছে এবং এ জায়গা থেকে আমাদের নদীগুলোও রক্ষা পায়নি। যখন পুরো সমাজ ব্যবস্থা দুর্নীতিবাজ হয়ে যায়, লুটেরা স্বভাবের একটি সমাজ হয়।  রাষ্ট্র এদের লালন-পালন করে। সেখানে ভালো কিছু থাকে না।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে নদী রক্ষার জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হতো না। নদীর প্রবাহ ঠিক থাকত।  নদীগুলো বাংলাদেশের জনগণের  জীবন ও জীবিকার উৎস হিসেবে কাজ করত।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন অপরাধীদের হাতে ছিল। বাংলাদেশ অপরাধীদের লালন করেছিল কাজেই এই দুরবস্থা শুধু আমাদের নদীর নয়, পুরো বাংলাদেশকে গ্রাস করেছিল।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সার্বিকভবে ধারণ করতে পারলে বিশ্ব আসনে বাংলাদেশকে আরও মর্যাদার জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেন নৌপ্রতিমন্ত্রী।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কামরুন নাহার আহমেদ, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ৪৮ নদী সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক ইকরামুল হক এবং বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মুনির হোসেন।

অনুষ্ঠানে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। ‘বঙ্গবন্ধুর নদী ভাবনা ও বাংলাদেশের নদীসমূহের দখল, দূষণ ও নাব্যতা সংকট : প্রেক্ষিত ৪৮ নদী সমীক্ষা প্রকল্প, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’; ‘বঙ্গবন্ধুর নদী ও পরিবেশ ভাবনা এবং আমাদের করণীয়’ এবং ‘সুস্থ নদী ও মৎস্য সম্পদের সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধগুলো উপস্থাপন করেন যথাক্রমে অ্যানভায়রনমেন্ট অ্যান্ড  ক্লাইমেট চেঞ্জ স্পেশালিষ্ট মনির হোসেন চৌধুরী, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্স সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো.  মনজুরুল কিবরিয়া।