ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যেখানে জাতি হিসেবে সবাই এক

নাজমুল হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ৫ জুন ২০২২   আপডেট: ০৩:৫৪, ১০ জুন ২০২২
যেখানে জাতি হিসেবে সবাই এক

ছবি: ইন্টারনেট

‘কারও রক্ত লাগলে যোগাযোগ করুন’ ‘কোনও ভাইয়ের ওষুধ প্রয়োজন হলে বলুন’ ‘কেউ গাড়ি না পেলে এই নম্বরে কল দিন’— এসব নিছক কোনও বার্তা নয়। প্রত্যেকটি কালো কালির অক্ষরে জড়িয়ে আছে আবেগ-অনুভূতি-ভালোবাসা। বিস্কুটের ফেলে দেওয়া কার্টুনে কলমে লিখে অনেকেই এভাবে জড়ো হয়েছেন সীতাকুণ্ডের ঘটনাস্থলে। এখানে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে দাঁড়ানো প্রত্যেকেই অতি সাধারণ, তবুও তাদের অন্তরে রয়েছে অপরকে বাঁচানোর দায়িত্ব। এ দৃশ্য ‘ঐক্যের’ মহামিলনের গল্প আঁকতে যথেষ্ট।

চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনার খবর পেয়ে আশপাশের সবাই জড়ো হতে থাকেন হাসপাতাল ও বিস্ফোরণস্থলে। শত বিভেদ ভুলে সকলে সকলের পাশে দাঁড়িয়েছেন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন। বাঙালি জনগণ অভাবনীয় এই পরিস্থিতিতে আবারও প্রমাণ করলো, ‘জাতি হিসেবে সবাই এক’।

অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনার তীব্রতা-বিস্তৃতি আঁচ করতে না পারলেও পাশে থাকতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। মানুষ মানুষের জন্য— এটাই তার বড় প্রমাণ। সীতাকুণ্ডের আগুনে হতাহতদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন বন্দরনগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মানবতার ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তারা।

আগুনে-বিস্ফোরণে আহতদের শনিবার মধ্যরাত থেকে আনা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। খবর পেয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটে যান বহু মানুষ। সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই হাত বাড়ান।

বার্ন ইউনিটের সামনে দেখা যায়, কয়েকজন তরুণ হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাতে লেখা রয়েছে, ‘কোনো প্রকার ওষুধের প্রয়োজন হলে বলুন, কারও রক্ত লাগলে জানান।’

শুধু তাই নয়, অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ডিপো থেকে হতাহতদের উদ্ধারে নিজেরাই কাজ শুরু করে। ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে এগিয়ে আসেন। অনেকে অগ্নিদগ্ধের চিকিৎসায় স্বেচ্ছায় রক্ত দিচ্ছেন, কেউ খাবার পানি নিয়ে হাজির হচ্ছেন। এমনকি নিম্নেয়ের অনেক রিকশাচালক ও সিএনজিচালককে বিনা ভাড়ায় অগ্নিদগ্ধের বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছে দিতে দেখা গেছে।

এদিকে রোববার ভোরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী অগ্নিদগ্ধদের রক্ত দিতে চট্টগ্রাম মেডিক‌্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে যান। তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও দগ্ধদের চিকিৎসায় পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে সহায়তাকেন্দ্র খুলেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

‘সবার জন্য ভালোবাসা’ জানিয়ে একজন ফেসবুকে লেখেন, সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণে চট্টগ্রাম মেডিক‌্যালে শত শত স্বেচ্ছাসেবক ‘নেগেটিভ রক্তের ডোনার লাগবে’ বলে চিৎকার করছে। হঠাৎ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকশ ডোনার আসে, যাদের সবার রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ! যে রক্তের জন্য ৭-৮ দিন আগে থেকে খোঁজ করতে হয়, সে রক্ত দিতে সিরিয়াল দিতে হচ্ছে! এটাই সার্থকতা! আজকের রক্ত ডোনেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডোনাররা ছিলো চোখে পড়ার মত। ক্যাম্পাস থেকে উদ্যম নিয়ে রক্ত দিতে আসে চবিয়ানরা। এটাই ছাত্র সমাজের মানবিকতা! মানবিকতায় চবিয়ানরা অগ্রযাত্রায় থাকবে। ক্যাম্পাস থেকে আগত ভাইদের দিলখোলা ভালবাসা জানাচ্ছি। মানবিকতার জয় হোক!

ফেসবুকের আরেকটি পোস্টে লেখা রয়েছে, ‘রিকশা, সিএনজিসহ অন্যান্য গাড়ির ড্রাইভাররা ভাড়া নিচ্ছে না। ওষুধের দোকান ফ্রি। রক্তদানে অপেক্ষারত হাজারো রক্তদাতা। শারীরিক শ্রম দিচ্ছেন শত শত স্বেচ্ছাসেবক। খাবার পানি সরবরাহ করছেন যে যেভাবে পারছেন। দল মত নির্বিশেষে এগিয়ে এসেছেন রাজনৈতিক নেতারা। ছুটে এসেছেন ডাক্তার ভাইয়েরা। আহা মানবতা।’

উল্লেখ্য, শনিবার (৪ জুন) রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করার সময় রাসায়নিক থাকা একটি কনটেইনারে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই রাতেই আহতদের অধিকাংশকে চট্টগ্রাম মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামের অন্যান্য হাসপাতালেও অনেককে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৯ জন, যার মধ‌্যে রয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মী ৯ জন। এ ছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় দেড় শতাধিক হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়