ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বিমান অসুস্থ প্রতিযোগিতা করছে: এওএবি

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২০ জুন ২০২২  
বিমান অসুস্থ প্রতিযোগিতা করছে: এওএবি

অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি) উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ‘ভর্তুকি দিয়ে টিকিটের দাম কমিয়ে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোকে দাঁড়াতে দিচ্ছে না বিমান। একইসঙ্গে জেট ফুয়েল কেনাসহ বিভিন্ন সরকারি চার্জ পরিশোধের বিষয়েও বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। টিকিটের দাম কমিয়ে এই সরকারি বিমান সংস্থা অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসার ক্ষেত্র নষ্ট করছে।’

বিষয়টি সরকারপ্রধানকে অবগত করতে রোববার (১৯ জুন) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত ও শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে এওএবির মহাসচিব এবং নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এওএবির মহাসচিব মফিজুর রহমানের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৯৯৬-২০০১ সালে ক্ষমতায় থাকা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের হাত ধরেই দেশে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো তাদের অপারেশন শুরু করে এবং দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। সেই সময় যাত্রীদের তেমন কোনো সেবা না দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান বাংলাদেশ একচেটিয়া তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করতো। বিমান বাংলাদেশের সেবাবিহীন তখনকার মনোপলি মার্কেট বন্ধে প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠা করে যাত্রীসেবা করার সুযোগ করে দেন। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশের প্রায় ৮০ ভাগ অভ্যন্তরীণ যাত্রীই বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো বহন করছে। অপরদিকে, সরকারি বিমান সংস্থা মোট যাত্রীর মাত্র ২০ ভাগ বহন করছে।

চিঠিতে বলা হয়, দেশে বেসরকারি এয়ারলাইন্সের পথচলাটা কখনই মসৃণ ছিল না। নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে ইতোমধ্যে বেসরকারি জিএমজি এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মতো প্রতিষ্ঠান তাদের অপারেশন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।

বন্ধ হওয়া এসব এয়ারলাইন্সে একসময় কাজ করতেন, এমন একাধিক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেট ফুয়েলের অধিক মূল্যবৃদ্ধি, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাজের অতিরিক্ত চার্জ এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভাড়া কমানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতাই দায়ী।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনাটেড এয়ারওয়েজের একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বেসরকারি কয়েকটি বিমান সংস্থা তাদের অপারেশন বন্ধ করে দেওয়ার কারণ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লুণ্ঠনমূলক অপকৌশল’।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অতীতের মতো বর্তমানেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের বিভিন্ন রুটের টিকেটের দাম কমিয়ে, সরকারি টাকায় ভর্তুকি দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। অনেকটা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গের মতো। বিমানের এহেন অপকৌশলের কাছে হার মানতে হয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইন্সকে।’

জানা গেছে, দেশে বেসরকারিভাবে ৮টি এয়ারলাইন্স হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তাদের অপারেশন শুরু করলেও বিমানের কারণে তাদের প্রায় সবাই অপারেশন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। বিমানের অপকৌশলের পরও বর্তমানে বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা এখনও টিকে আছে।

সালমান এফ রহমানকে এওএবির মহাসচিবের দেওয়া চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া ছিল ২ হাজার ৮৫০ টাকা। সে সময় জিএমজি এয়ারলাইন্সের ভাড়া ছিল ৪ হাজার টাকা। হঠাৎ করেই বিমান তাদের ভাড়া কমিয়ে ২ হাজার ৩০০ টাকা করে। এক সময় বাংলাদেশ থেকে দুবাই রুটে জিএমজি এয়ারলাইন্স অধিকাংশ যাত্রী বহন করত। তখন বিমানের যাত্রী প্রতি ভাড়া ছিল ৪৭৫ মার্কিন ডলার। সেটা কমিয়ে ৩৫০ ডলার করে ফেলে বিমান। এর পরপরই বাধ্য হয়ে জিএমজি তাদের অপারেশন বন্ধ করে দেয়।

চিঠিতে মহাসচিব আরও বলেছেন, বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোকে প্রতি বছর এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট নবায়নের সময় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষেকে (বেবিচক) সব ধরনের চার্জ নগদ পরিশোধ করতে হয়। এছাড়াও নগদ অর্থের বিনিময়ে কিনতে হয় জেট ফুয়েল। অপরদিকে, বিমান বছরের পর বছর বেবিচকের বিভিন্ন চার্জ বাকি রাখতে পারছে। পাশাপাশি তারা পদ্মা অয়েলের কাছ থেকে বাকিতে জেট ফুয়েল কিনতে পারছে। এ দুই ক্ষেত্রে সরকারি বিমান সংস্থার সঙ্গে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর বৈষম্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বছরের পর বছর অপারেশন চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

এছাড়াও, বিমান প্রথমবারের মতো অভ্যন্তরীণ রুটে বোয়িং-৭৩৭ এর মতো বড় সাইজের ফ্লাইটে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী বহন করেছে। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো একসময় আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অল্প কিছু যাত্রী নিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে কানেক্টিং ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল। যদিও ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনার পর এভাবে যাত্রী বহন বন্ধ করার নির্দেশ দেয় বেবিচক।  বেবিচকের নির্দেশ অমান্য করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এখনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী বহন করছে। এখনো বিমান অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটে প্রতি সিটে ২ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছে। এতে বছরে বিমানের ১৬০ থেকে ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

তাই, বিমানের বর্তমান টিকিটের ক্ষেত্রে এ অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করা, যাত্রীসেবার মান বাড়িয়ে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করার পাশাপাশি হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা অন্যসব বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চিঠিতে সালমান এফ রহমানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর প্রতিনিধি এওএবির মহাসচিব মফিজুর রহমান।

/মেয়া/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়