ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘মাকে ছাড়া পৃথিবীটা শূন্য শূন্য লাগে’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২২, ২৯ জুন ২০২২   আপডেট: ১৫:২৪, ২৯ জুন ২০২২
‘মাকে ছাড়া পৃথিবীটা শূন্য শূন্য লাগে’

মর্নিং বার্ড লঞ্চ ডুবির ঘটনায় মারা যাওয়া সুফিয়া খাতুনের মেয়ে মোসা. সুমি খানম

বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। এরপর মাই আমাদের বড় করেছেন। কিন্তু সেই মাও চোখের সামনে পানিতে ডুবে মারা গেলেন। আহা! আমরা এতিম হয়ে গেছি। মাকে ছাড়া পৃথিবীটা শূন্য শূন্য লাগে। এভাবেই মা হারানোর কথা বলছিলেন সুফিয়া খাতুনের মেয়ে মোসা. সুমি খানম।

২০২০ সালে এই দিনে বুড়িগঙ্গায় ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় মর্নিং বার্ড নামের অপর একটি লঞ্চ। এতে মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রী মারা যান। 

মারা যাওয়াদের মধ্যে ছিলেন সুফিয়া খাতুনও। অসুস্থ সুমি সেদিন মাকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু ঢাকা আসার আগেই লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভাগ্যক্রমে সুমি বেঁচে গেলেও বাঁচানো যায়নি সুফিয়া খাতুনকে।  

সুমি বলেন, ‘মাকে ছাড়া পৃথিবীটা শূন্য শূন্য লাগে। নিজের সন্তান না থাকলেও এত কষ্ট হতো না। মাকে ছাড়া যতটা কষ্ট হচ্ছে। যার মা নেই সেই বোঝে মা হারানোর বেদনা। মাকে হারানোর সেই স্মৃতি আর মনে করতে চাই না। সেই স্মৃতি মনে পড়লে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারি না। কিছুই ভালো লাগে না।’

সেই দিনের ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমি আর মা লঞ্চের নিচের কামরায় ছিলাম। হঠাৎ দেখি লঞ্চ কাত হয়ে গেছে। ঘাড় ফেরাতে ফেরাতে লঞ্চ ডুবে যায়। যখন লঞ্চ ডোবে তখন এক সঙ্গেই বের হওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু কে যেন আমার মাকে পেছন থেকে টান দেয়। আর আমার মা তলিয়ে যান। আমি আমার মাকে বাঁচাতে পারি নাই।’

সুমি বলেন, ‘আমরা তিন ভাই, তিন বোন। মা মারা যাওয়ার পর পুরো সংসার ভেঙে গেছে। জীবনটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মাকে হারানোর কথা মনে পড়লে বুক ব্যথা শুরু হয়। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। মনের কথাগুলো কারো কাছে শেয়ার করতে পারি না। কি যে কষ্টের মধ্যে আছি। আল্লাহই ভালো জানেন।’

তিনি বলেন, ‘মাকে তো আর ফিরে পাবো না। তবে সামনে যেন এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে সরকার যেন সেই দিকে দৃষ্টি দেয়। আর যেন কেউ আমাদের মত এতিম হয়ে না যাই। আর যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করছি।’      

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৯ জুন মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ। সদরঘাটে পৌঁছানোর আগে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় সেটি।  দুর্ঘটনায় মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ঘটনার পরের দিন ৩০ জুন রাতে নৌ-পুলিশের সদরঘাট থানার এসআই মোহাম্মদ শামসুল বাদী হয়ে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ এনে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি সদরঘাট নৌ-থানা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর শহিদুল আলম ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। গত ১৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এখন পর্যন্ত ৫১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।  

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়