ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি ৫২ বছরেও

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ২৬ মার্চ ২০২৩  
গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি ৫২ বছরেও

ফাইল ছবি

স্বাধীনতার ৫২ বছরেও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস গণহত্যার (জেনোসাইড) দু-একটি সংগঠন ছাড়া আন্তর্জাতিক কিংবা জাতিসংঘের কোনো স্বীকৃতি মেলেনি।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইট নামে অভিযান শুরু করে। ওই এক রাতেই ঢাকায় নিহত হন ৫০ হাজার মানুষ। এরপর মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাকিস্তানি বাহিনী ব্যাপকভাবে গণহত্যা চালায়। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হন। ১৯৭১ সালে এত বড় গণহত্যার ৫২ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি।

জানা গেছে, বিগত ২০১৭ সালে ১১ মার্চ ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৫ মার্চ বাংলাদেশে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ওই গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

এদিকে, বিশ্বজুড়ে গণহত্যা নিয়ে কাজ করা সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচও ইতোমধ্যেই ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে। একই সঙ্গে এ গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব পাসেরও আহ্বান জানিয়েছে।

১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই কংগ্রেসম্যানও।  ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির লক্ষ্যে কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটসে (সিএমএইচআর) আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ। কানাডায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন এই আবেদন করেছে।  সিএমএইচআর এখন বাংলাদেশের আবেদনটি পর্যালোচনা করছে।

এদিকে, ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়।

১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশন গৃহীত হয়। সে কারণে ওই দিনটিকেই আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ। এর ফলে জাতিসংঘ থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়টি জটিল হয়ে পড়ে।

মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট তুলে ধরতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করছে। গণহত্যার তথ্য উপাত্ত নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারের পক্ষ থেকে খুব দ্রুত প্রস্তাবটি জাতিসংঘে উপস্থাপন করা হবে। 

বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ গবেষক শাহরিয়ার কবির বলেন, ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত ১৯৩টি দেশ ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের জন্য সর্বসম্মত ভোট দিয়েছিল, সেখানে বাংলাদেশও ছিল। এখন সেই বাংলাদেশ যদি ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব করে, তা মোটেই কার্যকর হবে না। ২৫ মার্চসহ মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের জেনোসাইডের স্বীকৃতির জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করলে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ১৯৭১  এর ২৫ মার্চের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় অনেকটা কঠিন হয়ে গেছে। তবে আমরা আশা ছাড়ছি না। আমরা গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়ে জনমত গঠন করতে চাইছি। প্রতিটি হাইকমিশনে বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে। যে বিদেশিরা দেশে এবং হাইকমিশনে আসছেন,তাদেরকে গণহত্যার বিষয়টি জানানো হয়। তাদের থেকে শিগগিরই স্বাক্ষর সংগ্রহ করার পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে পরবর্তী সময়ে আমরা জাতিসংঘের কাছে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করবো।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার তথ্যউপাত্ত নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করেছি। পরিস্থিতি যখন অনুকূলে আসবে অর্থাৎ জাতিসংঘে ভোট হলে ফল বাংলাদেশের পক্ষে আসবে, তখনই প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। 

/এএএম/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়