ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘বাপে ফালাইয়া গেছে, আমি তো ফালাইয়ে যাইতে পারমু না’

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৮, ১৪ মে ২০২৩   আপডেট: ১৫:২০, ১৪ মে ২০২৩
‘বাপে ফালাইয়া গেছে, আমি তো ফালাইয়ে যাইতে পারমু না’

প্রতীকী ছবি

‘নাড়ি ছেড়া ধন আমার। বাসায় বাসায় কাজ করে খাওয়াই। বাপে দুই ছেলে-মেয়ে ফালাইয়া গেছে। আমি তো ফালাইয়া যাইতে পারমু না’, কথাগুলো বলছিলেন একুশ বছর বয়সী গৃহকর্মী রহিমা খাতুন।

রহিমা খাতুন গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলায়। কম বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। স্বামী ঢাকায় দোকানে চাকরি করতেন। বিয়ের পর ঢাকার যাত্রাবাড়ী ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন। বিয়ের চার বছর পরে এক গার্মেটস কর্মীকেও বিয়ে করেন তাঁর স্বামী। একপর্যায়ে রহিমা ও দুই সন্তানের খোঁজখবর নেওয়া.ঘর ভাড়া বন্ধ করে দেন। সন্তানদের নিয়ে আয়েশা বিপাকে পড়েন। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় স্বামীকে খুঁজতে থাকেন। তাতে ব্যর্থ হন। পরে জুরাইনে এক বাড়িতে ওঠেন। তার সহযোগিতায় বিভিন্নি বাসায় গৃহকর্মীর কাজে শুরু করে দেন। 

রহিমা জানান, প্রতিদিন ভোরে কাজ শুরু করেন। দুই সন্তানের জন্য খাবার তৈরি করেন। সাড়ে ৭টার মধ্যেই কাজে যেতে হয়। দুপুরে এক ঘণ্টার বিরতিতে হেঁটে আবার বাড়িতে যান। সন্তানদের খাইয়ে, ঘুম পাড়িয়ে আবারও ছোটেন কর্মস্থলে। রাতে ৯টায় বাসায় ফেরেন। সন্তানদের যত্ম নেন, লেখাপড়া করান। সব কাজ শেষে বিছানায় যান রাত সাড়ে ১১টায়। জীবনের চাকা এভাবেই ঘোরে তাঁর।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোশাক খাতে ২০২০ সালে নারী ও পুরুষ কর্মীর হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬০ ও ৪০ শতাংশ। নিম্ন আয়ের নারী শ্রমিকের অধিকাংশই পারিবারিকভাবে সুখী হন না। স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে চলে যান অনেক পুরুষ। সন্তানকে নানি-খালার কাছে রেখে কাজ চালিয়ে যান নারী। কেউ কেউ সন্তানদেরও শ্রমে যুক্ত করেন। শুধু পোশাকশিল্পেই নয়, উপকূলীয় অঞ্চলেও পুরুষদের বহুবিবাহের ঘটনা বেশি ঘটে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্বামী মারা গেলেও সংসারের হাল ধরেন নারী।

রাজধানীর সায়দাবাদে মালা বিক্রি করেন সালেহা বেগম (৩০)। সংসারের কাজকর্ম শেষে মোতালেবের মা মালা গাঁথেন। সেই মালা  ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন তিনি।  দিনে ২০-২৫টি বিক্রি হয়। একেকটায় লাভ হয় ১০ টাকা। কুমিল্লার দেবিদ্বারে  গ্রামে তার বাড়ি। তার বাবা পরিবার ছেড়ে চলে গেছেন। দিনে যা আয় হয়, তা দিয়ে চাল-আলু কিনে বাড়ি যায় সে।

রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন লুনা। একমাত্র সন্তান সামিয়া নিয়েই তাঁর সংসার। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লুনা স্বামী মারা যান। সামিয়ার বয়স তখন এক বছর। সেই থেকে শুরু একাকী সংগ্রাম। চাকরির পাশাপাশি একজন আদর্শ মা হিসেবে সন্তানকে দেখভাল করছেন।

জেন্ডার বিশেষজ্ঞ মনজুন নাহার বলেন, গর্ভে সন্তান ধারণ করলেই যে একজন মা হন, তা নয়। তাঁকে মানসিকভাবেও মা হয়ে উঠতে হয়। শত বাধা-বিপত্তিতেও মানসিকভাবে শক্ত বলেই একজন প্রকৃত অর্থে মা।

শাশ্বত রূপের মায়েদের সম্মান জানাতেই আজ পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মা দিবস’। আধুনিক বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারটিকে ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে, যার সূত্রপাত ১৯০৮ সালের ৮ মে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে সবাই পালন করে মা দিবস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভরে ওঠে মায়ের সঙ্গে সন্তানদের ছবিতে, নানা লেখায়। বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন অনেক বেশি মানুষ নিজের মাকে ফোন করেন, তার জন্য ফুল কেনেন, উপহার দেন।

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়