ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কারওয়ানবাজারে দুর্ঘটনা হলে দায়ী ব্যবসায়ীরা: মেয়র আতিক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১২, ৮ জুন ২০২৩  
কারওয়ানবাজারে দুর্ঘটনা হলে দায়ী ব্যবসায়ীরা: মেয়র আতিক

রাজধানীর কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ীদের যাত্রাবাড়ী ও গাবতলী পাইকারি বাজারে স্থানান্তরের যে প্রস্তাব সরকারিভাবে দেওয়া হয়েছে, তাতে একমত হননি ব্যবসায়ীরা। একমত না হওয়ায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট না ছাড়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা কারো কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার জন্য দায়ী হবেন বর্তমান ব্যবসায়ীরা। 

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে টিসিবি ভবনে কারওয়ানবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তৃতায় ডিএনসিসির মেয়র এসব কথা বলেন।

মেয়র বলেন, পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশের রাজধানীর মাঝখানে এমন পঁচনশীল পণ্যের পাইকারি বাজার নেই। স্মার্ট বাংলাদেশে ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে পাইকারি কাঁচাবাজার থাকতে পারে না। কারওয়ানবাজারে কোনো কাঁচাবাজার থাকবে না। উন্নত দেশের পাইকারি মার্কেটগুলো পরিদর্শন করেছি। পর্যাপ্ত খালি জায়গাসহ সকল সুবিধা নিশ্চিত করে মার্কেটের ডিজাইন করা হবে।

অপরদিকে, ব্যবসায়ীরা যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনার দায় নিতে রাজি হয়েছেন। ব্যবসায়ীরা তাদেরকে কারওয়ানবাজারেই পুনর্বাসনের দাবি জানান। তাদের কেউ কেউ গাবতলী যেতে রাজি হলেও বাকিরা বলেছেন, তারা কোনোভাবেই যাত্রাবাড়ী যাবেন না।

সবার সঙ্গে আলোচনা করেই কারওয়ানবাজার মার্কেট স্থানান্তর করা হবে, উল্লেখ করে মেয়র বলেছেন, ১১ সদস্যের কমিটি করে দিচ্ছি। স্থানীয় তিনজন কাউন্সিলর, কারওয়ানবাজারের সুপার মার্কেট ও কাঁচাবাজার মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও ডিএনসিসির কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠিত হবে। ১৫ দিনের মধ্যে কারওয়ানবাজার স্থানান্তরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে।

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট স্থানান্তরের চিঠি পাওয়ার পরেই এ এলাকার কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দিয়েছি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করতে। আমি কৃষিমন্ত্রীর সাথেও আলোচনা করেছি গাবতলী কাঁচাবাজারে যাওয়া-আসার রাস্তা নির্মাণের জন্য বিএডিসির জায়গা প্রয়োজন। কৃষিমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন যে, রাস্তার জন্য বিএডিসির জায়গা দেবেন। মার্কেট স্থানান্তর হলে নতুন মার্কেটে সমপরিমাণ জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে। এর জন্য নতুন করে কোনো টাকা দিতে হবে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এমন সিদ্ধান্ত আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি কথা দিচ্ছি, ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য কারওয়ানবাজারের চেয়ে বহুগুণ সুবিধাসম্বলিত নিরাপদ আধুনিক মার্কেট নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

মেয়র বলেন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি ডিএনসিসির আটটি মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। আমাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারাই দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে কারওয়ানবাজার সরানোর জন্য যাত্রাবাড়ী, গাবতলী ও মহাখালীতে মার্কেট নির্মাণ করা হয়। এটি একনেকে পাস হওয়া প্রকল্পের আলোকে হয়েছে। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনেই একনেকে পাস হয়ে এটি বাস্তবায়ন করা হয়। অতএব, এটি কারো মনগড়া কথা নয়। 

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রায় ছয় মাস আগে পার্লামেন্টে বলেছেন, পদ্মা সেতু হয়ে গেছে। অতএব, দক্ষিণের জেলাগুলো থেকে আসা পণ্য ঢাকা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে থাকবে। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে আসা পণ্য ঢাকার উত্তর প্রান্তে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা আমাদের জন্য অনুশাসন। সেই আলোকেই আমরা সিদ্ধান্ত নেই, বাস্তবায়ন করি। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব।

মেয়র আতিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তেই স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট স্থানান্তরে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্ন মার্কেটে ভবন ধসে পড়ছে। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার পুনরায় চিঠি দিয়েছে আটটি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ইমিডিয়েটলি সরিয়ে নিতে হবে। তাই, আমরা মার্কেটগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ লিখে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছি। কিন্তু, দুঃখের বিষয় সেই সাইনবোর্ডও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

কারওয়ানবাজার এলাকার সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছেন, ব্যবসায়ীদের মাটিতে শুইয়ে দিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। ব্যবসায়ীরা সাদরে গ্রহণ করেন, এমন বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, কারওয়ান বাজার ঐতিহ্যবাহী পাইকারি বাজার। প্রকৌশলীরা এই বাজারের কয়েকটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশন বলেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো থেকে ব্যবসায়ীদের অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সাইনবোর্ডও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারওয়ানবাজারের পাস দিয়ে মেট্রোরেল হচ্ছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। একসময় হয়ত কারওয়ানবাজারের রাস্তায় ট্রাক চলবে না। ব্যবসায়ীদের এটি আগে থেকেই বিবেচনা করতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কাউকে জোর করে, ব্যবসা বন্ধ করে, রোজগার বন্ধ করে আমরা স্থানান্তর করব না। আপনাদের জন্য বিকল্প ভালো ব্যবস্থা করেই স্থানান্তর করা হবে। আরও আধুনিক সুন্দর মার্কেট নির্মাণ করে স্থানান্তর করা হবে। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই সিদ্বান্ত নেওয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিকল্প ব্যবস্থা দ্রুতই করতে হবে। আমরা কেউই চাই না আত্মাহুতি দিতে৷ সবাই মিলেমিশে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আশা করি, উইন উইন পজিশন নিশ্চিত করে কারওয়ানবাজারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি মানুষ যেন আত্মমর্যাদা নিয়ে জীবন যাপন করতে পারে, সে লক্ষ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশ পরিচালনা করছেন। কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা কেউই পরিকল্পনার বাইরে নন। কারওয়ানবাজারের পাইকারি মার্কেট স্থানান্তর একটি জটিল সমস্যা। সবার সহযোগিতায় এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরও বলেন, মার্কেট স্থানান্তরে অনেকের জীবিকার বিষয় জড়িত। কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটি বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে। পৃথিবীর সকল দেশের উন্নয়নে ডেস্ট্রাকশন কনস্ট্রাকশন হয়েছে। কাউকে রিজিড হওয়া যাবে না। কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে চিন্তা না করে একপক্ষ হিসেবে চিন্তা করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সফিউল্লা, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মঞ্জুর, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম হাসান, সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মিতু আক্তার প্রমুখ।

মেয়া/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়