ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

পেনশন স্কিম বিধিমালা-২০২৩ সংশোধন, বাড়ছে অসন্তোষ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ১৮ মার্চ ২০২৪  
পেনশন স্কিম বিধিমালা-২০২৩ সংশোধন, বাড়ছে অসন্তোষ

অসন্তোষ বাড়ছে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা-২০২৩ সংশোধন নিয়ে। বিধিমাল পরিবর্তন করে তা গেজেট আকারে জারির পর সরকারি ও রাষ্ট্রায়াত্ত স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর মধ্যে এই অসন্তোষ তীব্রতর হচ্ছে।

জানা গেছে, বিধিমালা পরিবর্তন হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় নতুন যোগ দেওয়া ব্যক্তিরা সরাসরি সরকারি কোনো পেনশন পাবেন না। এর পরিবর্তে তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালায় যুক্ত হওয়া ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।

বিধিমালা পরিবর্তন নিয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা এক বিবৃতিতে এই পরিবর্তনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যায়িত করেছে। তারা অবিলম্বে সংশোধিত বিধিমালাটি প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ফেডারশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম ও মহাসচিব ড.মো. নিজামুল হক ভূইয়া গত শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি এই দাবি জানিয়েছে।

এদিকে, ধীরগতিতে চলা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিকে উজ্জীবিত করতে ‘প্রত্যয়’ নামে নতুন একটি স্কিম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১ জুলাই থেকে স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং এদের অধীনস্থ অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে নতুন যোগ দেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতাধীন ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচির আওতায় আসবেন। অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় বিদ্যমান প্রগতি, প্রবাস, সুরক্ষা ও সমতা-এ চার পেনশন কর্মসূচি ঐচ্ছিক হলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন কর্মজীবীদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাদের চাকরির মেয়াদ ন্যূনতম ১০ বছর রয়েছে, তারা চাইলে ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচির আওতায় আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদের বিদ্যমান পেনশনের সুবিধা সমর্পণ করতে হবে।

অতি সম্প্রতি গেজেট আকারে প্রকাশিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপনের একটিতে স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং এদের অধীনস্থ অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে নতুন যোগ দেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে এবং অপরটিতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা ২০২৩ সংশোধন করে ‘প্রত্যয়’ নামক নতুন একটি স্কিম সংযোজন করা হয়েছে।

আইনের সংশোধন অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যারা নতুন যোগ দেবেন, তাদেও জন্য প্রত্যয় স্কিম বাধ্যতামূলক। তাদের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য প্রযোজ্য অবসর সংক্রান্ত বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে না।

প্রসঙ্গত, সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল (জিপিএফ) এবং স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো প্রদেয় ভবিষ্যৎ তহবিলে (সিপিএফ) টাকা জমা রাখেন, যার বিনিময়ে সরকার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ হারে সুদ দেয়। এ টাকা পেনশনে যাওয়ার পর অবসরভোগীরা পেয়ে থাকেন। যেসব সরকারি কর্মচারী রাজস্ব খাত থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন জিপিএফে। আর যারা রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন সিপিএফে।

প্রত্যয় স্কিম এর বিষয়ে সংশোধিত বিধিমালায় বলা হয়েছে-এ স্কিমের আওতায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা-এ দুটির মধ্যে যেটি কম হয় সে পরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন থেকে কেটে রাখা হবে এবং সম-পরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রদান করবে এবং অতঃপর উভয় অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট  কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কপার্স হিসাবে জমা করবে। বিধিমালায় প্রত্যয় স্কিমের মাসিক চাঁদার চারটি স্তর (২ হাজার, ৩ হাজার, ৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকা) উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মাসিক চাঁদার পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারে। এ স্কিমে মূল বেতনের ভিত্তিতে মাসিক চাঁদার হার নিরূপিত হবে বিধায় চাঁদার হার পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে এবং চাঁদার হার ভগ্নাংশের পরিবর্তে নিকটবর্তী পূর্ণ টাকায় প্রদান করতে হবে এবং প্রকৃত চাঁদার হারের ভিত্তিতে মাসিক প্রাপ্য পেনশন নিরূপিত হবে।

এছাড়া সরকারের অনুমোদনক্রমে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে কোনো স্কিমের মাসিক চাঁদার হার পরিবর্তন করতে পারবে বলে সংশোধিত আইনে নতুন একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। সংশোধিত বিধিমালায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে-সরকার বা কোন স্বায়ত্তশাসিত বা স্ব-শাসিত সংস্থার মালিকানাধীন বা এতে ন্যস্ত বা শতকরা ৫০ ভাগের অধিক সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত কোন ব্যবসায়-উদ্যোগ, কোম্পানি ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা শিল্প-বাণিজ্য সম্পর্কিত বা অনুরূপ কোন প্রতিষ্ঠান।

স্ব-শাসিত বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার সংজ্ঞার বিষয়ে সংশোধিত বিধিমালায় বলা হয়েছে-আপাতত বলবৎ কোন আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বা গঠিত কোন কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন, কমিশন, সংস্থা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউশন, কাউন্সিল, একাডেমি, ট্রাস্ট, বোর্ড বা ফাউন্ডেশন ইত্যাদি যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, সেগুলো এর অন্তর্ভুক্ত হবে।

জানা যায়, স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিলে প্রায় ৪০০ সংস্থা রয়েছে, যেগুলোতে প্রায় ৪ লাখের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এদিকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাধীন ঘোষিত নতুন ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচির বিষয়ে ইতোমধ্যে নানা ধরনের মতামত দিচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, সংগঠন ও বিশিষ্টজনেরা। নতুন ব্যবস্থায় কোন কোন সংস্থার পেনশন সুবিধা বাড়বে, কোন কোন সংস্থার আর্থিক সুবিধা কমবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এছাড়া মন্ত্রণালয়/বিভাগ তথা সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা না-করা নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

/হাসনাত/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়