ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শিক্ষায় জাগরণে নতুন পথিকৃৎ

মাছুম আহমদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৫ জুলাই ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিক্ষায় জাগরণে নতুন পথিকৃৎ

নুরুল ইসলাম নাহিদ

মাছুম আহমদ : হে নতুন/দেখা দিক আবার/জন্মের প্রথম শুভক্ষণ! বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নিজের জন্মদিন সর্ম্পকে এই উক্তি করেছেন, যেই উক্তি দিয়েই যে কোন গুণী মানুষকেই তাঁর জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো যেতে পারে।

আজ ৫ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ৭০তম জন্ম দিন। নুরুল ইসলাম নাহিদ ১৯৪৫ সালের ৫ জুলাই সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কসবা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কসবা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিয়ানীবাজার পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চবিদ্যালয়, সিলেট এম.সি. কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেটেছে শিক্ষাজীবন।

বিগত সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে কয়েকটির সাফল্য ছিল বেশ চমকপ্রদ। বাকি মন্ত্রণালয়গুলো সম্পর্কে জনমনে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সফল মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সবার শীর্ষে যে মন্ত্রণালয়ের নাম উচ্চরিত হয়েছিল, সেটি হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন এবং বর্তমানেও আছেন একজন সৎ, ভদ্র, পরিচ্ছন্ন, ভাবমূর্তি, নিষ্ঠাবান, সাহসী ও চৌকস ব্যক্তিত্ব ত্যাগি রাজনীতিবিদ নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে সামাজিক বৈষম্য দূর করে একমুখী শিক্ষা পদ্ধতির প্রচলন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে জোরেশোরে তার বাস্তবায়ন শুরু করেছেন।

নুরুল ইসলাম নাহিদের রয়েছে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে তৎকালীন ছাত্র নেতাদের মধ্যে যে কজন আজও রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয় অবদান শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। জাতীয় পর্যায়ে ষাটের দশকের সামরিক ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, শিক্ষার দাবি ও অধিকার অর্জন ও গণতন্ত্র ও জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার সকল আন্দোলন, ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ ওই সময়কালের সকল আন্দোলন সংগ্রামের একজন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা এবং সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি ছিলেন আন্দোলন সংগ্রামের প্রথম সারিতে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং তৎকালীন অন্যতম বৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ যৌথ গেরিলা বাহিনী সংগঠিত করার ক্ষেত্রে নুরুল ইসলাম নাহিদের ছিল প্রধান ভূমিকা।

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পাক-বাহিনীর দালাল খুনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত ‘ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ এর স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে ওই আন্দোলন ও গণ-আদালত সংগঠিত করাসহ নব্বই এর দশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা পুনরুজ্জীবিত করার ঐতিহাসিক সংগ্রামে নুরুল ইসলাম নাহিদ বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে।

১৯৯৩ সালে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) অন্যতম সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পার্টি সংগঠনের (সাংগঠনিক সম্পাদক) দায়িত্ব পালন করেন। এ িছাড়া তিনি পার্টির আদর্শগত শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে নুরুল ইসলাম নাহিদ সিবিপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের বাস্তবতা ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পার্টিকে রূপান্তরিত করা এবং জাতীয় ঐতিহ্য এবং দেশ ও সমাজের বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে কমিউনিস্ট পার্টিকে পরিবর্তনের চেষ্টায় তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ সদস্যসহ তিনি উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেছিলেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে গুণগত পরিবর্তন দেখা দিলে বাস্তবতার বিবেচনায় সেই প্রক্রিয়াই পরবর্তীকালে ১৯৯৪ সালে অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। বর্তমানে নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক।

জাতীয় পর্যায়ে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নাহিদ সিলেটে নিজ এলাকার তৃণমূল মানুষের  সঙ্গে কাজ শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথম সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার (সিলেট-৬) আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচন হন। জাতীয় সংসদে তিনি ওই সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হলে তিনি সরকারের শিক্ষমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে (২০০৯-২০১৪) শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তনসাধনে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর উদ্যোগে প্রথমবারের মতো সব মহলের মতামতের ভিত্তিতে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ প্রনীত হয়। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে প্রস্তুত করার জন্য, শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন করে বর্তমান যুগের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ শিক্ষা, জ্ঞান, প্রযুক্তি ও দক্ষতাসম্পন্ন  দেশপ্রেমে উজ্জীবিত পরিপূর্ণ মানুষ তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে মহাকর্মযজ্ঞ চলছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্যোগ, শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা অভূতপূর্ব সাফল্য নিয়ে এসেছে। ভর্তি নীতিমালা বাস্তবায়ন, বছরের প্রথম দিনে বই উৎসবের মাধ্যমে সারা দেশে বিনা মূল্যের বই বিতরণ, যথাসময়ে ক্লাস শুরু, নির্দিষ্ট দিনে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ, ৬০ দিনে ফল প্রকাশ, সৃজনশীল পদ্ধতি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা, সময়োপযোগী পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, কারিগরি শিক্ষার প্রসার, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্ব”ছতা প্রভৃতি কার্যক্রমের ফলে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সমগ্র জাতির কাছে তা প্রশংসিত হয়েছে এবং বিশ্বসমাজে পেয়েছে স্বীকৃতি ও মর্যাদা। নির্লোভ এই রাজনীতিবিদের দুর্র্নীতিবিরোধী অভিযানের ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে রাহুগ্রাসের দূর্নীতি হ্রাস পেয়েছে বলে দুর্নীতি দমন সংস্থা টিআইবি স্বীকৃতি দিয়েছে। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১৩ সালের নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের সংক্ষিপ্ত মন্ত্রীসভায়ও ঠাঁই পেয়েছিলেন।

২০১৪ এর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাহিদ তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।  একই সঙ্গে অনিবার্যভাবে তিনি ফিরেছেন মন্ত্রিসভায়। নাহিদের এখনকার লক্ষ্য দেশের সামগ্রিক শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং তা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা। নুরুল ইসলাম নাহিদের স্ত্রী জোহরা জেসমিন একজন অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। দুই মেয়ে, নাদিয়া নন্দিতা ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত এবং নাজিয়া সামানথা ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।

ব্যক্তিগত জীবনে তার সৎ, সহজ,সরল জীবনযাপন বর্তমান সময়ে রাজনীতিতে এক ব্যতিক্রম হিসেবেই সবার কাছে প্রশংসিত। তিনি শিক্ষা ব্যবস্থায় গুনগত মান এনেছেন। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের জন্য আধুনিক মানসম্মত যুগোপযোগী শিক্ষায় সুযোগ তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে নৈতিক মূল্যবোধের জাগরণ, সততা, নিষ্ঠা, জনগনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ দেশপ্রেমিক হতে উদ্ধুদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের আধুনিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে। তিনি ব্যপক কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন। দুর্নীতিমুক্ত দক্ষ, স্বচ্ছ, গতিশীল শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলাসহ শিক্ষনীতি প্রণয়ন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আকৃষ্ট করা। ঝরেপড়া বন্ধ করা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

২০১০ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ স্কুল ও মাদ্রাসায় সব ধরনের শিক্ষার্থীদের প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১৯ কোটি বই বিনামূল্যে যথাসময়ে পৌছে দিয়ে দেশবাসীকে বিস্মিত করেছেন। ২০১২ শিক্ষাবর্ষে ২২ কোটি ১৪ লাখ,  ২০১৩ সালে ২৭ কোটি এবং ২০১৪ সালে ৩১ কোটি ১৬ লাখ পাঠ্যবই (নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী শক্তির সব বাধা উপেক্ষা করে) প্রাথমিক, এবতেদায়ি, মাধ্যমিক স্কুল, দাখিল মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে ১ জানুয়ারি পৌছে দেওয়া হয়েছে। গত পাঁচ বছরে এটি একটি অতুলনীয় সাফল্য।

এলাকার শিক্ষা, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ জনগণের জীবনযাত্রার মৌলিক পরিবর্তনের জন্য সুদূর প্রসারী লক্ষ নিয়ে বাস্তবতার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং অধ্যাবদি তা অব্যাহত রয়েখেছেন। জাতীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষের কথা এবং তাদের আশা আকাঙ্খা তিনি ভুলে যাননি- ভুলে যাননি এই জনপদের মাটি ও মানুষকে।

কেননা এই জনপদের মানুষের সঠিক ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আজ তিনি বাংলাদেশের সফল শিক্ষামন্ত্রী। তাই এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তিনি ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। তার গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হওয়ার পথে এই জনপদের আমুল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। জননেতা নুরুল ইসলাম নাহিদের মতো সৎ, ত্যাগী ও আদর্শ রাজনীতিবিদ বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের সংসদ সদস্য এখন জনপ্রতিনিধিদের আইকন, সার্বিক সফলতা ও সততার প্রতীক। একজন নাহিদের কারণে আজ আমরা জাতির কাছে সমিহের পাত্র। আমরা এখন ঐতিহ্য আর গৌরবের পতাকা বাহক। প্রিয় মানুষটির ৭০তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও শুভে”ছা।

লেখক : ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার ও সংবাদকর্মী
ই-মেইল : [email protected]

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জুলাই ২০১৪/রণজিৎ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়