৬ বছরে বিদেশ থেকে ৬৭ হাজার নারী ফিরেছেন: ব্র্যাক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

ছয় বছরে ৬৭ হাজারেরও বেশি নারী নানা সংকটে পড়ে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন এন্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান।
বুধবার (৭ মে) ঢাকার একটি হোটেলে ‘নারী অভিবাসীদের অধিকার ও ক্ষমতায়নে আমরা সবাই এক’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এই তথ্য জানান। কর্মশালাটি আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় বাস্তবায়িত প্রত্যাশা-২ প্রকল্পের আওতায়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা নারী অভিবাসীদের সুরক্ষা এবং ফেরার পর সম্মানজনক পুনর্বাসনে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, বাংলাদেশ থেকে নারীদের বিদেশে যাওয়া যেমন বাড়ছে, তেমনি অনেক নারী ফেরতও আসছেন। এই নারী অভিবাসীদের দেশে-বিদেশে সুরক্ষা ও কল্যাণে সরকারি ও বেসরকারি সব সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রায় ১০ লাখ নারী এখন বিদেশ আছে। গত ছয় বছরে ৬৭ হাজারেরও বেশি নারী নানা সংকটে পড়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের অনেকেই নিপীড়নের শিকার। বিদেশ-ফেরত নারীদের যেন আমরা সবাই মিলে সেবা দিতে পারি, সেই জন্যে নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশি উইমেন মাইগ্রেন্টস কাজ করবে। প্রতিটা সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এখানে তার সেবা নিয়ে এগিয়ে আসবেন।’’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের (এসএমই ফাউন্ডেশন) চেয়ারপারসন মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘‘নারী অভিবাসনের হার বাড়ছে, তাই তাদের সুরক্ষার পাশাপাশি ফেরার পর অর্থনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এসএমই ফাউন্ডেশন বিদেশফেরত নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবে।’’
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘নারীরা বিদেশে যেমন ঝুঁকিতে থাকেন, তেমনি দেশে ফেরার পরও নানা বাধার মুখোমুখি হন। সরকার এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে এবং বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেবার মানোন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’’
ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের পরিচালক ড. এটিএম মাহবুব-উল-করিম জানান, সরকার ইতোমধ্যে ৩১ হাজার বিদেশফেরত নারীকে সেবা দিয়েছে এবং এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণ ছাড়া নারীদের পাঠানো হলে তারা বিদেশে নির্যাতনের শিকার হন। দেশে ফিরে তাদের সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়। তাই অভিবাসনকে নিরাপদ করতে এবং ফেরার পর সহায়তা দিতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।’’
বায়রা মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘‘যেসব নিয়োগকর্তা নারী শ্রমিকদের নিপীড়ন করেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ফিলিপাইনের মতো দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সক্ষমতা আমাদেরও গড়ে তুলতে হবে।’’
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের ‘নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশি উইমেন মাইগ্রেন্টস’-এর চেয়ারপারসন ও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা। তিনি বলেন, সবাই মিলে কাজ করলে নারী অভিবাসীদের অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইশরাত শামীম, ড. রুবিনা হোসেন, আইএলও, আইওএম, বিএমইটি, ওয়েজ আর্নার্স বোর্ড, নারী ও শিশু উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/হাসান/বকুল