রাজধানীর অলিগলির রাস্তায় পশু কোরবানি
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
দেশে আজ শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করা হচ্ছে। সকালে ঈদের নামাজ শেষে রাজধানীর মহল্লার অলিগলির রাস্তায় পশু কোরবানি করছেন নগরবাসী। দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত স্থানে কোরবানির অনুরোধ করা হলেও তা তেমন মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ নগরবাসী বাড়ির সামনের রাস্তায় কোরবানি দিচ্ছেন।
রাজধানীর রায়েরবাগ, সেগুনবাগিচা, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকাসহ প্রায় সব এলাকায় এই চিত্র দেখা গেছে। যত্রতত্র চলছে পশু জবাই, মাংস কাটাকাটি আর চামড়া ছাড়ানোর কাজ।
যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘নির্ধারিত জায়গা কোথায় আছে? কোনো পার্ক বা মাঠে নিতে গেলে অনেক দূর। সেখানে গরু নেয়া কষ্টকর। তাছাড়া ঈদের দিনে এত মালামাল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়া সহজ না।’’ তিনি বলেন, ‘‘এই রাস্তাটাই তো আমাদের। আমরা নিজেরাই তো পরিষ্কার করে ফেলি। কারো তো অসুবিধা করছি না।’’
সেগুনবাগিচার একটি মসজিদের ইমাম হাফেজ বারেক বলেন, ‘‘সকালের মধ্যে রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেছে রাজধানীর অনেক রাজপথ। কোরবানির পরপরই কেউ কেউ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেও অধিকাংশ স্থানে রক্ত জমে থাকছে। কিছু এলাকায় রাস্তার পাশে ড্রেনের মুখে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।’’
বৃষ্টি হলে ড্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। তারা বলেন, ‘‘পানি নামতে পারবে না, ড্রেন বন্ধ হয়ে যাবে। তখন দুর্গন্ধে চলা দায় হবে।’’
সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পশুবর্জ্য সরাতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হলেও দেখা গেছে, তারা সব জায়গায় পৌঁছাতে পারছে না। গত কয়েক বছর ধরে পশু জবাইয়ের স্থানে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে জীবাণুনাশক কার্যক্রম চলত। কিন্তু এ বছর তা নেই বললেই চলে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়র বহিষ্কৃত হয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর তাদের বহিষ্কার করা হয়। সেখানে সরকারি নির্ধারিত দুই প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে সিটি করপোরেশনের তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বাসিন্দাদের অনেকে বলছেন, ‘‘পশু কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থান বাসা থেকে অনেক দূরে। তাই বাধ্য হয়ে তারা ঘরের সামনের রাস্তা বেছে নিয়েছেন।’’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোরবানির সময় শহরের এ অব্যবস্থা আসলে দীর্ঘদিনের নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতার প্রতিফলন। প্রতি বছরই এমন দৃশ্য দেখা গেলেও স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
নগর পরিকল্পনাবিদ ড. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘‘শুধু আহ্বান জানিয়ে হবে না। কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট জায়গা, পর্যাপ্ত সেবা এবং জনসচেতনতা— একসঙ্গে নিশ্চিত না হলে এই বিশৃঙ্খলা চলতেই থাকবে।’’
যদিও অনেকে কোরবানির পর নিজেরা পানি দিয়ে রক্ত ধুয়ে দিচ্ছেন। বর্জ্য বস্তায় ভরে রাখছেন। নিজেরা জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার একটি গলিতে কথা হয় গৃহিণী রুবিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো এখানেই থাকি। কেউ যদি অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে তো আমরাও ভুগবো। তাই নিজেরাই পরিষ্কার করছি।’’
সেখানে কথা হয় আব্দুল জব্বারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘কোরবানি দেয়া শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, নাগরিক দায়িত্ববোধও বটে। সিটি কর্পোরেশনের একদিনের অভিযান যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন পরিকল্পিত প্রস্তুতি, কঠোর প্রয়োগ এবং নাগরিকদের আন্তরিক অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে হয়ত একদিন স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোরবানির উৎসব উদযাপন হবে।’’
ঢাকা/এএএম/বকুল